বাংলাদেশ ও ‘মা’ বিহীন আমার ঈদ

Enamএনাম চৌধুরী:
২০১০ সালের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ। ঐ দিন আমার মা শেষ বারের মতো বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। আমার অনেক স্বপ্ন তোমাকে নিয়ে। বাংলাদেশে তুমি বাঁচতে পারবে না ? এদেশে কোন বিচার নেই ! বিচারহীন দেশে তোমার কিছু হয়ে গেলে আমাদের কি হবে।’
মা যখন আমাকে কথাগুলো বলছিলেন, তখন মনে হয়েছিলো তার মনটা অনেক শক্ত। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম, মা খুব কষ্ঠ করে তার চোখের পানি আটকে রাখছিলেন। কিন্তু কাঁদছিলেন না। আমার বোনগুলো তখন অনেকটা হাউমাউ করে কাঁদছিলো, অথচ যে মায়ের পেটে আমি দশমাস, দশদিন বাস করে পৃথিবীর আলো দেখলাম সেই মা খুব বেশী কাঁদছেন না এটা আমার কাছে বিস্ময়ের বিষয় ছিলো !
গ্রাম্য গৃহবধু আমার সহজ-মায়ের চোখে-মুখে সেদিন পৃথিবী ভরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। মাকে ছেড়ে, প্রিয় বাবা ও ভাই-বোনগুলোকে ছেড়ে সাত-সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে আমার যাত্রা। আমি কখনো ভাবিনি বাংলাদেশকে ছেড়ে আমাকে ব্রিটেনে আসতে হবে !
যে বাংলাদেশে দশটি বছর সাংবাদিকতা, করলাম, লেখালেখি করে মানুষের স্নেহ পেলাম, পরিচিতি পেলাম সেই দেশে আমার নিরাপত্তা নেই ! আমার জীবন হয়ে উঠলো চরম ঝুকিপূর্ণ সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিলো ? কিন্তু সেটাই সত্য ! অস্ত্র, মাদক, সন্ত্রাসী, সরকারীদলের ক্যাডার, চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে লেখার কারনে আমার জীবনটা শুধু ঝুঁকিপূর্ণই হয়ে উঠেনি, আমার জীবন নিয়ে নাকি তারা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে। সেই তারা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারী দলের কতিপয় গডফাদার এবং সন্ত্রাসী। যেদিন বাবার মুখ থেকে ঐ কথাটি শুনেছিলাম, সেদিন স্বভাবসূলভ তেজীভাব প্রকাশ করে বলেছিলাম “মৃত্যুর ভয় আমি করিনা। মরতে হয় সত্য লিখেই মরবো।”
বাবা তখন বলেছিলেন, “শোন-তোমাকে এখন সত্য লিখে মরার প্রয়োজন নেই। সামনে অনেক কিছু তোমাকে করতে হবে, তাই তুমি এখন দেশ ছেড়ে চলে যাও। ব্রিটেন আইনের দেশ, গণতন্ত্রের দেশ। তুমি ব্রিটেনে থেকে তোমার দেশের জন্য সত্য কথাগুলো লিখবে।”
তখন আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় এবং আমি কোনভাবেই দেশ ছাড়বো না সাহসের সাথে লড়াই করে যাবো এমনটি বলার পর বাবা এবার কঠিন কণ্ঠেই আমাকে বলেছিলেন, “যে দেশে তোমাকে সন্ত্রাসী কিংবা অস্ত্র ব্যবসায়ী বানিয়ে দেবে। অথবা তোমাকে মাদক পাঁচারকারী আখ্যায়িত করে তোমাকে হয় মেরে ফেলবে না হয় জেলে ভরে রাখবে। সে দেশে তুমি কিসের সাহস দেখাবে ?”
বাবার ঐ কথাগুলোর কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। কারন বাবার কথাগুলো চরম সত্য ! সাংবাদিকতা করতে গিয়ে এরকম অসংখ্য ঘটনা দেখিছে। স্বাধীন বাংলাদেশ অথচ এখানে সত্য বলার কোন অধিকার নেই ? স্বাধীন বাংলাদেশ অথচ এখানে সত্য প্রকাশে অধিকার নেই !!
অস্ত্রের বিরদ্ধে লিখেছিলাম বলে টেলিফোন করে আমার মাথা কেটে বস্তায় ভরে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার হুমকী দেয়া হয় ! পুলিশকে জানালে তারা খুব সহজভাষায় বলেদিলো, “ভাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে লিখেছেন ভালো-কিন্তু আমাদেরকে সেখানে জড়াইয়া দিলেন কেন ?” অথচ ঐ পুলিশের সামনেই অস্ত্র হাতে সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের ঘুরতে-চলতে দেখেছি।
আমার বাবার কাছে ফোন করে বলা হলো- “ছেলে সামলান না হয় আর পাবেন না”। উদ্বিগ্ন বাবা-মা তাই নির্দেশ দিলেন “ব্রিটেনে চলে যাও-আগে জীবন বাঁচাও।
জীবন বাঁচানোর সংগ্রামেই তাই ব্রিটেনে চলে আসা। সবুজ-শ্যামল দেশটিকে ছেড়ে আসলেও সেই স্মৃতিটুকুও ভূলিনি। আটটি ঈদ পেরিয়ে গেছে আমার জীবন থেকে। খেতে পারিনি প্রিয় মায়ের হাতের কোন খাবার ? সবার জীবনেই ঈদ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে, কিন্তু আমার ঈদটা বেদনায় ঢাকা পড়ে যায়।
প্রায় পাঁচটি বছর হয়ে গেছে কিন্তু প্রাণভরে মায়ের সাথে কথাটুকুও বলতে পারিনা। আমার মাও আমার মুখের কথা শুনতে পান না। আমার প্রিয় মায়ের জীবনে সব চেয়ে বড় আফসোস, তিনি তার সন্তানদের কথাগুলো তার কান দিয়ে শুনতে পেলেন না কখনো। কারন আমার জন্মের বছর খানেক পূর্বে মায়ের ‘টাইফয়েড’ হয়েছিলো। ভয়ানক টাইফয়েড মায়ের দুটি কানকে চিরদিনের জন্য ‘বধির’ করে দিয়ে গেছে। তাই নাড়ি ছেড়া ধন সন্তানগুলোর ‘মা’ ডাকটি আমার মা কখানো শুনতে পাননি। আমার ভাই-বোনেরা মায়ের সাথে ইশারায় কথা বলে। পাঁচটি বছর প্রায় মায়ের সাথে তাই বলার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আমার কথাগুলো আমার ছোটবোন মাকে পৌঁছে দেয়। আইনহীন সরকারের সন্ত্রাসীগুলোর বিরুদ্ধে লেখার কারনে নিরাপত্তাহীন জীবন আমার ব্রিটেনেই শেষ পর্যন্ত আশ্রয় খুঁজতে হয়েছে। আমার আশ্রয় হয়নি আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশে। যেখানে প্রতিবাদ করলে খুন-গুম, সত্য লিখলে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে কিংবা মামলার পর মামলা দিয়ে জেলে ভরে রাখবে ? রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন করে তুলবে !!
২০১০ এর এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ এসে পৌছলাম লন্ডনে। হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছে বুঝলাম শৃঙ্খলা কি, দায়িত্ববোধ কি এবং আইন কি জিনিস। হাজার হাজার মানুষ অথচ সবাই ডিসিপ্লিন মেনে চলছে। লম্বা লাইনে দাঁড়ানো শত শত মানুষ অথচ কেউই নিয়ম ভেঙ্গে সামনে যাওয়ার চেষ্ঠা করছে না। অফিসারদের ব্যববহার দেখে বুঝলাম ব্রিটেনে শুধু গণতন্ত্রের দেশই নয়। সভ্যতার অনেক কিছু শেখার আছে এই দেশটির কাছ থেকে।
আমার বাংলাদেশে সন্ত্রাসীরা বন্দুক হাতে নিয়ে প্রকাশ্য রাজপথে মিছিল করে। গাড়ি পৌঁছায়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুঁড়িয়ে দেয়। হত্যা করে, হত্যার হুমকী দেয়। রাজনৈতিক দলের পরিচয় ব্যবহার করে নিজেদের ইচ্ছেমতো অপকর্ম করে। তাদের বিরুদ্ধে লিখলে প্রাণে মেরে ফেলে কিংবা মেরে ফেলার হুমকী দেয় !
অথচ ব্রিটেনে যেন কে কত আইনকে সম্মান দেখাবে, সেটার প্রতিযোগিতা তারা করছে। যেদিন দেশটিতে পা রেখেছিলাম সেদিনের উপলব্ধি আমার হৃদয়ে প্রতিটা মূহুর্ত যেন রোমাঞ্চিত করে। এখানকার পলিশগুলোর ব্যবহার ও সহযোগিতার ধরণ দেখলে বুঝা যায় তারা সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধু ও সেবক। অথচ আমার স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশ, র‌্যাব অর্থের বিনিময়ে মানুষ খুন করে, গুম করে, হাত পা ভেঙ্গে দেয় অথচ তাদের কিছুই হয় না ! ওদেরকে বিচারের মুখোমুখী করা যায়না।
বাবা-মা আমাকে সব সময়ই বলেন, “তুমি দেশে এসো না বাবা, তোমার জীবনের নিরাপত্তা আমি বাবা হয়েও দিতে পারবো না !
কারণ আইনহীন রাষ্ট্রে ওরা তোমাকে বাঁচতে দিবে না, বাবা-মায়ের আদেশ মানতে গিয়ে এবং নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য গন্তব্যহীন জীবন নিয়ে প্রায় পাঁচটি বছর প্রিয় মা-বাবা, ভাই-বোনদের ছেড়ে টেমসের তীর লন্ডন নগরীতে পড়ে আছি।
সবুজ-শ্যামল যে দেশটিকে নিয়ে আমার জীবনের অনেক স্বপ্ন ছিলো সেই দেশ ছেড়ে পাঁচ বছর শেষ হয়ে গেলো ? ফেরারও সুযোগ নেই আমার। অসংখ্য আততায়ী আমার পেছনে তাড়া করছে। আমি ‘কার শিকার’ হবো সেটা জটিল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছর ব্রিটেনে মানবাধিকার হরণকারী আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ‘টেলিভিশন টক শো’ তে সুস্পষ্ঠ বক্তব্য রেখেছি। সংবাদপত্রগুলোতে নিয়মিত কলাম, নিবন্ধ লিখেছি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সব সময় লেখা, ছবি পোস্ট করেছি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্স, হাউজ অব লর্ডস্, ইউরোপীয়ান কমিশন, বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনার, লর্ডস্, বেরোনেস, এমপিদের সাথে সাক্ষাৎ করে, সেমিনার করে দেশের অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরেছি এবং মেমোরেন্ডাম দিয়েছি। এসব কারনে বাংলাদেশের ফ্যাসিস্ট সরকার যে আমার উপর ক্ষুদ্ধ সেটার প্রমাণ পেয়েছি।
২০১৪ সালের কথা (অর্থাৎ চলতি বছরের) মাস, তারিখ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম তাদের চাকুরীর নিরাপ্ততার কারনে প্রকাশ না করেই আজ সেই দুঃসহ যন্ত্রণাময় সতর্কবাণিীটি জানান দিচ্ছি।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা একজনের পদবী জানা হয়নি এবং ওপরজন কর্ণেল। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বরত। যুক্তরাজ্য এসেছিলেন (তাদের ভাষ্যানুযায়ী) রাষ্ট্রীয় বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য। তাদের কাজের ধরণ দেখে বুঝা গেছে তারা যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার যে সব বাংলাদেশী আওয়ামীলীগ, সরকার শেখ হাসিনা সম্পর্কে সমালোচনা করেন, সভা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং লেখালেখি করেন তাদের ব্যাপারে ধারণা নেয়া এবং তাদের বিস্তারিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা।
জানুয়ারী মাসের ২৩ তারিখ মঙ্গলবার হঠাৎ আমার মোবাইলে একটি অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল আসলে আমি রিসিভ কররাম। সালাম দিলাম যথারীতি। অপর প্রান্ত থেকে সালামের জবাব দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে এক ভদ্রলোক জানতে চাইলেন “আপনি কি সাংবাদিক এনাম চৌধুরী” ? আমি হ্যাঁ জবাব দেয়ার পর তার নিজের পরিচয়টা দিয়ে বললেন, আমি কর্ণেল ….. প্রথমত আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি ব্যাপারটা কাউকে বলবেন না !”
আমি প্রশ্ন করলাম “কি ব্যাপারটা যা কাউকে বলবো না- আর আপনিতো আমাকে কিছুই বলেন নি ?”
এবার ‘কর্ণেল’ পরিচয়দাতা আমাকে বললেন, আপনি যদি ‘ইস্ট লন্ডন’ কিংবা ‘স্ট্রাটফোর্ড’ এর আশপাশে থেকে থাকেন তবে কি ‘ওয়েস্টফিল্ড’ একটু আসতে পারবেন ? জানতে চাইলাম কেন আসবো সেটা কি একটু বলা যাবে ?
এবার কর্ণেল বললেন, “আপনার সাথে বাংলাদেশের কিছু বিষয় নিয়ে জরুরী কথা বলা দরকার। একটু আসলে ভালো হয়। আর ভয় পাবেন না। ইংল্যান্ডে আপনি কারো হাতে সহজে নিখোঁজ হবেন না। গত কয়েকদিন আমি “চ্যানেল এস এবং এটিএন বাংলায় আপনার কয়টা ‘টকশো’ এবং বিভিন্ন নিউজ পেপারে আপনার লেখা পড়েছি।’ এসব বিষয় নিয়ে আপনার সাথে কিছু কথা বলা দরকার।” তিনি আরো বললেন, “আমার সাথে একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা “স্যার” আছেন তিনিও কথা বলবেন”।
আমি তাকে বললাম দশ-মিনিটের মধ্যে জানাচ্ছি। এই দশ মিনিট সময় চাওয়ার মূর কারণ একটু ভেবে নেয়া এবং কাছের কোন সহকর্মী বন্ধুকে জানানো।
দশ মিনিট সময় ভাবলাম, তবে কারো সাথে শেয়ার করলাম না বিষয়টা। দশ মিনিট পরে অদেখা  ‘কর্ণেল’-কে ফোন করে জানালাম ‘স্টাটফোর্ড ওয়েস্টফিল্ডে’ আসছি।
২৫ নাম্বার বাস ধরে হোয়াইট চ্যাপল থেকে স্ট্রাটফোর্ড যেতে প্রায় ২৭ মিনিট লেগে গেলো। বাস স্টপেজে নেমে আবার ফোন দিলাম ‘কর্ণেল’ কে। তিনি বললেন তারা বাইরে মেইন প্রবেশ পথের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ?
বাস স্টপেজ থেকে পায়ে হেটে এক মিনিটের মধ্যেই ওয়েস্টফিল্ডের প্রবেশ পথের মূল সিঁড়ির কাছে পৌঁছে আবার ফোন দেয়ার সাথে একসাথে দুই ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। তারাই আগে সালাম দিলেন। বুঝলাম এদের যেকোন একজনই আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। এক ভদ্রলোক হ্যান্ডসেক করে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি …… কর্ণেল ….. (?), আর উনি আমাদের স্যার ………… (?)’ কিন্তু বিস্তারিত পরিচয় কিছুই দিলেন না। প্রথমেই স্যার পরিচয়ের ভদ্রলোক বললেন, ‘তো অল্প বয়সে তুমি অনেক বুঝ।” তুমি করে বললাম, তাই বলে মাইন্ড করো না। তোমার বয়েসী আমার ছেলে-মেয়ে দুজন রয়েছে।
এবার কর্ণেল ভদ্রলোক বললেন, স্যার আমরা উনার সাথে এক জায়গায় বসে কথা বলি।
স্যার পরিচয়ের ভদ্রলোক বললেন না। বাইরে ঐ সিঁড়িতে বসেই কথা বলি। ঐ ছেলে যা ইন্টিলিজেন্ট। কোন দোকানে বসে কথা বললে দেখবে সে ‘সিসিটিভি’ থেকে ফুটেজ সংগ্রহ করে ফেলবে কিভাবে ?  এবার কর্ণেল পরিচয়ের ভদ্রলোক আমাকে ব্রিটেনের জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘লন্ডন বাংলা’র কয়েকটি ফটোকপি (যেগুলোতে আমার লেখা রয়েছে) কয়েকটি অনলাইনে প্রকাশিত আমার লেখার প্রিন্ট কপি এবং ফেইসবুকের কয়েকটি স্টেটার্স দেখিয়ে বললেন, সরকারের সাথে আপনার এতো কিসের বৈরিতা ? আপনিতো দারুণ লিখছেন ! আমি এবার তাকে পাল্টা প্রশ্ন কররাম, আমি যা বলি বা লেখছি সেটা যদি তথ্যহীন হয়ে থাকে আপনারা আমাকে চ্যালেঞ্জ করুন।
এবার ‘স্যার’ পরিচয়ের অপর ব্যাক্তি আমাকে পাঠ চাপড়ে বললেন, “বাবা তুমি অনেক দূর এগিয়ে যাও, তোমার লেখায় যুক্তি আছে। তবে একটা কথা রেখে- “তোমার পছন্দের সময় না এলে দেশে তুমি কোন অবস্থায়ই যাবে না ! ”
বুঝলাম তারা আর বসতে চাইছে না। হঠাৎ করে কর্ণেল পরিচয়ের ভদ্রলোক আমাকে চমকে দিয়ে বললেন, ‘সাংবাদিক এনাম সাহেব-আপনার ছোট ভাই’র নাম নূরুল হক চৌধুরী তাই না ? আপনার ছোট তিন বোন দুজন আপনার এলাকা ওসমানীনগরের তাজপুর ডিগ্রী কলেজে এবং একজন গোয়ালাবাজার নামক মহিলা কলেজে পড়েতো ? আপনার বাবা-মা আছেন ?
এবার আমি নিশ্চিত হলাম তারা গোয়েন্দা সংস্থার লোক। মনে মনে কিছুটা থমকে গেলাম। তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। কিছুক্ষণপর আমিও বাসায় চলে আসলাম।
অজানা গন্তব্যহীন বাংলাদেশে আমার ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেলো। বাবাকে জানালাম ঘটনাটি। তিনি আমাকে বললেন, ‘বাবা গত ক’ মাসে কত অপরিচিত লোক বাড়ীতে এসে তোমার বিষয়ে কত প্রশ্ন করে। আমি তোমাকে জানাইনি, কারণ বাবা-মা হীন একাকী তুমি চিন্তা করবে। এখন তুমি দেশে আসার দরকার নেই। ওখানে বেশ ভালই আছো ?”
চোখের সামনে ভেসে উঠলো বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর মুখ ! জলজ্যান্ত লোকটি হাওয়া হয়ে গেলেন ড্রাইভার সহ। প্রকাশ্য রাজপথে মানুষকে কুপিয়ে কুপিচয়ে, গুলি করে হত্যা করা হয়! মাহমুদুর রহমানের মতো বড় মাপের সাংবাদিককে রিমান্ডের নামে যে ভয়ানক নির্যাতন করা হযেছে সেটা বর্ণনাতীত। কিভাবে চলছে দেশ।
প্রায় পাঁচটি বছর মা-বাবা, ভাই-বোনহীন আমার ঈদ কেমনে কাটবে জানি না। জানি না সাত-সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে স্বপ্নের বাংলাদেশ ছেড়ে আমার জীবন চলা এখন কোনপথে !
তবে এটুকু বলতে পারি, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, খুন, অস্ত্রবাজী, দখল, স্মাগলিং যত অন্যায় আছে এর বিরুদ্ধে লিখবো। আমার কলম সত্যের পথে অবিচল থাকবেই !

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button