খেজুর : ইসলামী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মারক

Datesড. আ ফ ম খালিদ হোসেন:
খেজুরের পরিচয়
বাদামি অথবা খয়েরি বর্ণের ডিম্বাকৃতির অথবা আয়তাকার নরম শাঁসযুক্ত এক সুমিষ্ট ফলের নাম খেজুর। খেজুরের দৈর্ঘ্য হয় ১-৩ ইঞ্চি। দানাযুক্ত এ ফল থোকায় থোকায় ফলে। The Shorter Oxford English Dictionary on Historical Principles-এর বিবরণ অনুযায়ী অষ্টাদশ শতাব্দীতে ১০ কোটিরও অধিক মানুষের একমাত্র উপজীবিকা ছিল খেজুর। খেজুরের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে-Phonenix Dactylifera খেজুর শব্দটি হিন্দি, খোরমা শব্দটি ফার্সি। শুকনো খেজুর আমাদের দেশে খোরমা নামে পরিচিত, আরবি ভাষায় যাকে ‘তামার’ বলা হয়। পাকা তাজা খেজুর আরবিতে ‘রুতাব’ বলা হয়। উর্দু পরিভাষা অনুযায়ী শুকনো খেজুর ‘চুহারান’ নামে পরিচিত। খেজুর বৃক্ষের আরবি নাম হচ্ছে ‘নাখল’। পৃথিবীর ১৫০ কোটি মুসলমানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্মারক খেজুর। খেজুর ও খেজুর বৃক্ষের সঙ্গে ইসলামী সভ্যতা ও ইতিহাস নিবিড়ভাবে বিজড়িত। সৌদিআরবের রাজকীয় পতাকা ও মনোগ্রামের আড়াআড়ি দু’তরবারির উপরে একটি খেজুর বৃক্ষ ইসলাম ও আরব দুনিয়ায় খেজুরের গুরুত্বের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মেও খেজুর ও খেজুর বৃক্ষকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। স্মর্তব্য যে, আসিয়ান, গ্রিক ও ইহুদিদের প্রাচীন ইতিহাসে খেজুরকে বিজয়ের প্রতীক (Symbol of Victory) রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। খেজুরের পাতা ও শাখা-প্রশাখা খ্রিস্টানদের পাম সানডে উত্সব (Palm Sunday) এবং ইহুদিদের টেবারনেকলস ভোজ উত্সবে (Fest of Tabernacles) রীতিমাফিক পবিত্রতার প্রতীক রূপে ব্যবহৃত হয়। খেজুর প্রাচীন উদ্ভিদ পরিবারের সদস্য। ভূমধ্যসাগরীয় সভ্যতার জন্য যায়তুন বৃক্ষ (ঙষরাব ঃত্বব) যেমন মৌলিক প্রয়োজনীয়, তেমনি স্বল্প অনুর্বর অঞ্চলের জন্য খেজুর বৃক্ষ অপরিহার্য।
খেজুরের ইতিহাস
মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে খেজুর হচ্ছে অন্যতম প্রাচীন চাষযোগ্য বৃক্ষ। ব্যাবিলনের প্রাচীন অধিবাসী সুমেরীয়রা আজ থেকে ৫০০০ বছর আগে খেজুরের চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফ্রিকা হয়ে আটলান্টিক সাগরের তীর পর্যন্ত বসবাসকারী বিপুল জনগোষ্ঠীর অর্থনীতিতে খেজুরের রয়েছে অপরিহার্য ভূমিকা। গ্রিক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস, থিউফ্রাস্টাস, স্ট্রার্বো ও প্লিনি উল্লেখ করেন যে, খেজুরের চাষ ইরাকের দজলা-ফোরাত নদীর অববাহিকা অঞ্চল (মেসোপটেমিয়া) থেকে ক্যানারিয়া দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। স্পেনীয় ধর্ম প্রচারকরা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী ও ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে খেজুর আধুনিক বিশ্বে বহন করে আনেন। ১৭০০ বছর আগে ইরান থেকে চীনে খেজুরের ব্যবহার শুরু হয়। সপ্তদশ শতাব্দীতে স্পেনীয়দের মাধ্যমে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় খেজুরের চাষাবাদ শুরু হয়। মুসলিম বণিকদের পকেটে করে খেজুর আরব দেশ থেকে ইসলামী দুনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে। গবেষক Joan Alexandra Zvi The Most Important Date নামক গবেষণা নিবন্ধে বলেন, ৮০০০ বছর আগে নব্য প্রস্তর যুগীয় (Neolithic) এলাকায় বিশেষত সিরিয়া ও মিসরের মানুষ যে খেজুর ব্যবহার করেছে আবিষ্কৃত স্মৃতি চিহ্ন হতে তার প্রমাণ মেলে। গিলগ্যামেশের মহাকাব্যের (Epic of Gilgamesh) বিবরণ অনুযায়ী সে যুগের সিলমোহরে খেজুর বৃক্ষ খোদাই ছিল, সঙ্গে ছিল অন্যান্য গাছ ও দেবতার মূর্তির চিত্র। মহানবীর আলেকজান্ডারের সৈন্যরা উত্তর ভারতে অবস্থানকালে রেশনে প্রাপ্ত খেজুর ভক্ষণের যে বীচি ক্যাম্পের বাইরে ফেলে দেন সেখানে পরবর্তী সময়ে বিশাল খেজুরের বাগান গড়ে ওঠে।
খেজুর বৃক্ষ ও ফলন
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণত, যে খেজুর গাছের চাষ হয় তার উচ্চতা ৬০ থেকে ৮০ ফুট (১৮-২৪ মিটার)। গাছ লাগানোর ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ধীরে ধীরে ফলন দেখা দেয় এবং ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় ফলন দেখা দিতে থাকে। একটি খেজুর গাছ ১০০ থেকে ২০০ বছরেরও অধিককাল জীবিত থেকে মানব জাতিকে খেজুর সরবরাহ করে। খেজুর বৃক্ষে খেজুর ধরে থোকায় থোকায়। একটি বৃক্ষে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৩০টি থোকা উত্পন্ন হয়। প্রতিটি থোকায় ১০ হাজার ফুল ফুটে এবং একটি পুরুষ গাছের ফুল দিয়ে ১০০টি স্ত্রী গাছকে হাতের সহায়তায় (Pollination) পরাগযুক্ত করা হয় এবং একটি পুরুষ ফুল স্ত্রী ফুল আলাদা গাছে উত্পন্ন হয়। পরাগ নিষিক্তের পর একটি থোকায় ১৮ থেকে ২৫ পাউন্ড ওজনের প্রায় ১০০০টি খেজুর ধরে। প্রাথমিক অবস্থায় খেজুর থাকে সবুজ ও শক্ত। পাকার সঙ্গে সঙ্গে তা নরম হয় এবং বাদামি, হলুদ ও লাল বর্ণ ধারণ করে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে, পর্যাপ্ত সেচ নিশ্চিত করা গেলে এবং যত্ন সহকারে পরাগযুক্ত হলে একটি গাছে বছরে অনায়াসে ১০০ থেকে ২০০ পাউন্ড (৪৫ থেকে ৯০ কেজি) খেজুর উত্পন্ন করা যায়।
খেজুরের চাষ ও উত্পাদন
গোটা দুনিয়ায় ১০০ প্রজাতির খেজুরের চাষ হয়। আকার, স্বাদ ও বর্ণের দিক দিয়ে প্রতিটি খেজুর স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য রাখে। ন্যূনপক্ষে ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (7-C) তাপযুক্ত গ্রীষ্মমণ্ডলী এবং প্রায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় (Sub-Tropical) এলাকায় সাধারণত খেজুরের চাষ হয়। সন্তোষজনক খেজুর উত্পাদনের জন্য দীর্ঘ গ্রীষ্ম মৌসুমের প্রয়োজন। বিশেষত খেজুর যখন পাকে তখন বৃষ্টিপাত না হওয়াই ভালো। মরু এলাকা খেজুর চাষের জন্য উপযোগী। আঙ্গুর, জলপাই, ডুমুরের মতো খেজুর গাছেরও খরা প্রতিরোধক ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের মাটিতে খেজুরের চাষ হয় এবং লবণাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতা খেজুরের সহজাত। তবে অধিকতর উত্পাদনের জন্য স্বল্প লবণাক্ততা এবং পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন।
সাধারণত বীচির সাহায্যে এবং কোথাও কোথাও ডালের কলম দিয়ে খেজুরের চাষ হয়। আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) ‘নবীয়ে রহমত’ গ্রন্থে বলেন, মদিনার খেজুর বাগানগুলো ছিল ঘেরা ও বেড়াযুক্ত। এতে এককাণ্ড ও দু’কাণ্ডওয়ালা খেজুর বৃক্ষ ছিল। মদিনায় বহু প্রজাতির খেজুর ছিল, সবগুলোর নাম মনে রাখাও মুশকিল। মদিনার লোকদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফলে খেজুরের উত্পাদন বৃদ্ধি ও উন্নত জাত করার (ঐরময ুরবষফরহম াধত্রবঃু) বহু পন্থা জানা ছিল। যেগুলোর মধ্যে নারী-পুরুষের পার্থক্য এবং সেগুলোর কলমের ব্যবহারও ছিল প্রচলিত। যাকে তা’বীর বা কলম শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করত। তা’বীরের অর্থ স্ত্রী খেজুরের খোসা চিরে পুরুষ খেজুরের রেণু ভেতরে প্রবিষ্ট করা। এ প্রক্রিয়াকে ইংরেজি ভাষায় বলা হয় Pollination (পরাগায়ন)।
ইমাম মালিক (র.) রচিত ‘মুয়াত্তা মালিকের’ বর্ণনানুযায়ী মদিনায় এমন ঘন বাগান শ্রেণী ছিল যে, চড়ুইয়ের মতো ক্ষুদ্রাকৃতির পাখি এসব বাগানে প্রবেশ করলে বের হতে পারত না। হযরত আবু তালহার (রা.) কাহিনী বর্ণিত আছে যে, তিনি তাঁর বাগানে একদা নামাজ আদায় করছিলেন এমন সময় একটি চড়ুই পাখি বাগান থেকে বের হওয়ার জন্য এদিক সেদিক উড়ে বেড়াচ্ছিল। তিনি নামাজের কথা ভুলে পাখির এ প্রাণান্তকর চেষ্টার দৃশ্য দেখতে থাকেন। এ কাহিনীর শেষাংশে বর্ণিত হয়েছে যে, এ গাফিলতি ও অবহেলার দরুন তিনি এ বাগানটি সাদকা করে দেন।
খেজুর বাগানগুলো চারপাশে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত থাকত এবং এ ধরনের প্রাচীরঘেরা বাগানকে মদিনার লোকেরা ‘হাইত’ বলত। মদিনার অনেক কূপের পানি প্রাচুর্য ও মিষ্টতার জন্য মশহুর ছিল বিধায় এসব কূপের ঝর্ণা ধারার সঙ্গে ছোট ছোট খাল বা নালা সংযোগ করে খেজুর বাগানে পানি সরবরাহ করা হতো অধিকতর ফলন পাওয়ার আশায়। ইরাক হচ্ছে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় খেজুর উত্পাদনকারী দেশ। বিশ্বের ৮০ ভাগ খেজুর ইরাক থেকে গোটা দুনিয়ায় রফতানি হয়। ১৬০ কিলোমিটারব্যাপী টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকা অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বাগানগুলো থেকে যেসব খেজুর উত্পন্ন হয় তা গোটা ইরাকের মোট খেজুর উত্পাদনের অর্ধেকাংশের চাহিদা মেটায়। এ এলাকা পরিবেশগত দিক দিয়ে খেজুর উত্পাদনের জন্য বেশ উপযোগী। পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন অনুকূল পরিবেশ নেই। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ খেজুর উত্পাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরান, সৌদিআরব, আলজেরিয়া, লিবিয়া, মিসর, পাকিস্তান, মরক্কো, তিউনিসিয়া, সুদান, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স হচ্ছে স্বল্প উত্পাদনকারী দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ ভাগ খেজুর আসে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এবং বাকি ১০ ভাগ আসে দক্ষিণ আরিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে। ডিগলেক্ট নূর (The deglect Noor) নামক এক ধরনের অর্ধ শুষ্ক খেজুর গোটা আমেরিকার ৭৫ ভাগ মানুষ খেতে পছন্দ করেন, বাকি ২৫ ভাগ অন্যান্য প্রজাতির খেজুর খেয়ে থাকেন।
খেজুরের খাদ্যমান
খেজুর বেশ পুষ্টিকর, সুমিষ্ট ও উপাদেয় খাবার। খেজুরের খাদ্যমান বেশ সমৃদ্ধ। গাছে পাকা খেজুর স্বাভাবিক অবস্থায় নরম ও রসালো। রোদে শুকিয়ে শুকনো খেজুর তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় গড়ে প্রতিদিন খেজুর ৩৫ ভাগ ওজন হারায়। নিম্নে তাজা ও পাকা খেজুরের খাদ্যমান (Food Value) বিশ্লেষণ করা হলো :
২০ ভাগ আর্দ্রতাযুক্ত তাজা খেজুরে
৭০ ভাগ শ্বেতসার
৬০ ভাগ থেকে ৬৫ ভাগ শর্করা
২ ভাগ প্রোটিন
২ ভাগ থেকে ৩.৮ ভাগ ফ্যাট
২ ভাগ মিনারেল
৫৯.২ ভাগ জলীয় অংশ
১৪৪ ভাগ ক্যালরি
শুকনো খেজুরের খাদ্যমান নিম্নরূপ
৭৫ ভাগ থেকে ৮৫ ভাগ শর্করা
১৫.৩ ভাগ জলীয় অংশ
২.৫ ভাগ আমিষ
৩.৯ ভাগ ফ্যাট
৩১৭ ক্যালরি
এছাড়া খেজুরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, ক্যারোটিনসহ বিভিন্ন জাতের ভিটামিন রয়েছে; যা স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। খেজুরে যে শর্করা পাওয়া যায় তা গ্লুকোজ ও ফ্রকটোজ আকারে থাকে। এর খাদ্যমান আখের চিনির তুলনায় শ্রেয়তর।
চিকিত্সা বিজ্ঞানে খেজুর
চিকিত্সা বিজ্ঞানে ভেষজ গুণসমৃদ্ধ খেজুরের রয়েছে বড্ড কদর। ইরান থেকে প্রকাশিত সাময়িকী ‘মাহজুবাহ্’-এর বিবরণ অনুযায়ী খেজুরের রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ও রোগ প্রতিকার ক্ষমতা। সহজপাচ্য বলে মানবদেহে খেজুর বাড়তি শক্তির যোগান দেয়। গরুর দুধের মধ্যে খেজুর সিদ্ধ করে পান করলে শিশু থেকে বৃদ্ধ ব্যক্তি ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার হয়। খিঁচুনি রোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, আন্ত্রিক গোলযোগ নিরাময় এবং ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র পরিষ্কারে খেজুর কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে সারারাত পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে শরবতের মতো পান করতে হবে। অতিরিক্ত মদ্যপানজনিত সমস্যা বিশেষত মদের নেশা কাটাতে খেজুর বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে পানিটুকু রোগীকে খাওয়াতে হবে। দুর্বল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সবল করার জন্য সপ্তাহে দু’দিন রাতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে বীচি বের করে পানিতে গুলিয়ে পান করতে হবে। এক মুঠো খেজুর ছাগলের দুধে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে দুধের মধ্যে গুলিয়ে এক টুকরা এলাচি ও সামান্য মধু অনুপানসহ খেলে যৌন দুর্বলতাজনিত জটিলতার অবসান ঘটে। শিশুর নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে খেজুর অত্যন্ত উপকারী। খেজুরের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ালে দাঁত ওঠাজনিত নানা রোগ বিশেষত আন্ত্রিক গোলযোগ ও অস্থিরতা লোপ পায়। খেজুর শিশুর দাঁতের মাঢ়ি শক্ত করে।
খেজুর ও খেজুর বৃক্ষের বহুবিধ ব্যবহার
খেজুর ও খেজুর বৃক্ষ মহান আল্লাহ পাকের এক বিচিত্র নিয়ামত। এর কোনো অংশ ফেলনা নয়। দুনিয়ার অন্য কোনো বৃক্ষ বা ফলের এমন বহুবিধ ব্যবহার হয় কিনা সন্দেহ, তাই আরব দেশে খেজুর গাছকে (ছঁববহ) বা রানী গাছ নামে অভিহিত করে। খেজুর ও খেজুর বৃক্ষের প্রতিটি অংশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মূল্যবান। খেজুর আরববাসীর প্রধান কার্বো হাইড্রেট খাদ্য। খেজুর শাঁস মানুষের খাদ্য এবং খেজুরের বীচি উট, ঘোড়া এবং সাহারার মরুদ্যানে কুকুরের খাদ্য। এছাড়া অনেক দেশে খেজুর বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়ার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। খেজুরের বীচি আগুনে ঝলসানোর পর পাউডার করে এক ধরনের পানীয় তৈরি করা হয়, যা আরব দেশে বেশ জনপ্রিয়। খেজুর গাছ থেকে এক প্রকার সুমিষ্ট ও পুষ্টিকর রস পাওয়া যায়। খেজুরের রস দিয়ে গুড় ও বিভিন্ন শীত পিঠা তৈরি করা হয়। খেজুর গাছের উপরের অংশ বিশেষভাবে কেটে রস বের করার পদ্ধতি বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। তথ্য অনুযায়ী খেজুর বৃক্ষ ৮০০ প্রকার কাজে ব্যবহৃত হয়। খেজুর বৃক্ষের কাণ্ড দিয়ে গৃহ নির্মাণের ঞরসনবত্, পাতার আঁশ দিয়ে ঝুড়ি, পাতার শাঁস প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে যে সিরাপ, অ্যালকোহল ও ভিনেগার বানানো হয় তা আরব বিশ্বে বেশ প্রচলিত। যেসব খেজুর বৃক্ষে ফলন কম হয় তা গোড়া কেটে ফেললে বেশকিছু নতুন কুড়ি গজায়। এসব কুড়ি সালাদ ও সবজি হিসেবে উপাদেয়। চযড়বহরী ঝুষাবংঃবত্থং নামক প্রজাতির খেজুর গাছের নরম বহিবর্তী স্তর থেকে এক প্রকার চিনি ভারতে বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদিত হয়।
খেজুর মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বেশ পছন্দের খাবার। পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান রামাজান মাসে খেজুর দিয়ে ইফতার করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইফতার করবে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, কেননা খেজুরের মধ্যে নিহিত আছে বরকত। যদি খেজুর দুষ্প্রাপ্য হয় তাহলে পানি দিয়ে ইফতার কর, কেননা পানি পরিচ্ছন্ন।’ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও নিরাময়ে খেজুর খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে তাঁর। মদিনার ‘আজওয়া’ নামক উন্নত জাতের খেজুর বেশ মূল্যবান। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি ‘আজওয়া’ খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদু টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ খেজুর উত্পাদনে বিশ্বে পাকিস্তানের স্থান চতুর্থ এবং রফতানিতে দ্বিতীয়। পাকিস্তানে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩০ প্রজাতির খেজুর উত্পাদিত হয়। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, বাংলাদেশ প্রভৃতি দেশে পাকিস্তান খেজুর রফতানি করে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button