কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলনে আল-আকসার গ্র্যান্ড ইমাম ড. ইক্বরিমা

ikramaকামাল হোসেন আজাদ, কক্সবাজার: মুসলামানদের প্রথম ক্বিবলা মসজিদুল আকসা রক্ষায় বিশ্বের সকল মুসলমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছেন মসজিদটির গ্র্যান্ড ইমাম ও খতীব শাইখ ড. ইক্বরিমা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী। তিনি বলেছেন, মসজিদুল আকসা আল্লাহর কাছে যাওয়ার পথ। এ পথ দিয়েই আল্লাহর রাসূল (সঃ) এসেছেন। মিরাজের শিক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। মসদিজুল আকসা মুসলমানদের প্রাণের সম্পদ। এটিকে রক্ষা করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আপনাদের দিকে ফিলিস্তিনের জনগণ চেয়ে আছে। আমেরিকার অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করুন। মসজিদে আকসা ইহুদিদের ছাড় দেয়া হবে না। শক্তভাবে তাদের প্রতিহত করা হবে।
আমেরিকার অন্যায় আচরণে বাংলাদেশের মুসলমান ক্ষুব্ধ মন্তব্য করে ড. ইক্বরিমা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী বলেন, বিশ্বের মুসলমান একটি অঙ্গের ন্যায়। মুসলমানদের সম্পদ মসজিদুল আকসা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে ইহুদিরা। বাংলাদেশের মানুষ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে থাকে। আমেরিকার অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাবেন।
সোমবার রাত দশটার দিকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন গ্র্যান্ড ইমাম ও খতীব শাইখ ড. ইক্বরিমা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মানুষের ধর্মপ্রীতির জন্য অভিনন্দন জানান।
এদিকে সমুদ্র শহর কক্সবাজারে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মিলনমেলা ঘটে বাংলাদেশসহ বিশ্বসেরা ক্বারীদের। মনে হচ্ছিল; আসমান থেকে এই বুঝি নাজিল হচ্ছে আল কুরআন। সম্মেলন আলোকিত করেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসার গ্র্যান্ড ইমাম ও খতীব শাইখ ড. ইক্বরিমা সাঈদ আব্দুল্লাহ সবরী। তিনি এশার নামাজের আগে সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে নসিহতমূলক বক্তব্য রাখেন। ক্বিরাত সম্মেলনে দেশ বিদেশের খ্যাতনামা ২০ জনের অধিক ক্বারী অংশগ্রহণ করেন। বিকেল ৩টা থেকে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগেই অনুষ্ঠান স্থলে ভীড় করে কুরআন প্রেমিকরা। তবে, বিদেশী ক্বারীদের তিলাওয়াত করতে মঞ্চে উঠেন এশা নামাজের পর। একটানা তিলাওয়াত চলে রাত প্রায় ১২ টা পর্যন্ত।
ক্বারীদের গগণবিদারী কণ্ঠে বেজে উঠে মহান ঐশি গ্রন্থ আল কুরআনের সুর। সেই সুরের মূর্চনা ছড়িয়ে যায় সবখানে। মাতিয়ে তুলে সমুদ্র শহর কক্সবাজার। কুরআনের সুমধুর কণ্ঠে উদ্বেলিত হয় মু’মিন হৃদয়। পথহারা পথিক দিশা পায় নতুন পথের। সব মিলিয়ে ক্বিরাত সম্মেলন যেন এক টুকরো জান্নাত। সম্মেলন আয়োজন করে আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত সংস্থার (ইক্বরা)।
হৃদয় ছোয়া কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করেন বর্তমান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট ক্বারী মিসরের ড. শাইখ আহমাদ আহমাদ নাঈনা, বাংলাদেশের গৌরব বিশ্বখ্যাত ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী, মিসরের খ্যাতনামা ক্বারী শাইখ মুহাম্মাদ মুহাম্মাদ মুরীজী, ইরানের ক্বারী সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ জাওয়াদ হুসাইনী, আরবের প্রখ্যাত সুরকার ও সিরিয়ার ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী মুনশিদ ক্বারী মু’তাসিম বিল্লাহ আল আসালী, আলজেরিয়ার ক্বারী শাইখ রিয়াদ আল জাযায়েরী, ভারতের ক্বারী মুহাম্মদ তাইয়্যিব জামাল।
দীর্ঘক্ষণ কুরআন তেলাওয়াতে শ্রুতাদের মাঝে সামান্যতমও ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি। শুধু পুরুষ নয়, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান সংলগ্ন বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামের পেভিলিয়নে মহিলাদের জন্য মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের তিলাওয়াত শুবনের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেও প্রচুর দ্বীনদার মহিলা কুরআন শুনেছে। পুরো সম্মেলন ঘিরে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে নিজস্ব নিরাপত্ত্বা বলয় তৈরি ছিল। কোথাও বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেনি।
আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত সংস্থার (ইক্বরা) এবারের ক্বিরাত সম্মেলন আয়োজন করে। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল তানযিমুল উম্মাহ হিফয মাদরাসা। বাদ যুহর একই দিন হুসনে ক্বিরাত প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন হিফজ প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়সহ সেরা ১০ জনকে দেয়া হয় নগদ অর্থ ও আকর্ষণীয় পুরস্কার। এই প্রতিযোগিতার স্পন্সর ছিলেন কক্সবাজারের প্রবীন ব্যবসায়ী আলহাজ্ব ফজল আহমদ কোম্পানী। পিতার পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সুযোগ্য সন্তান আমিনুল ইসলাম হাসান।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের ভাইসচেয়ারম্যান ডক্টর মীম আতিকুল্লাহ। ক্বিরাত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা রইস উদ্দিন ইসলাহী। পুরো সম্মেলন সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন ক্বিরাত সম্মেলনের আহবায়ক হাফেয রিয়াদ হায়দার। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে তিনি গত বছর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলনের আয় ব্যয়ের প্রতিবেদন পেশ করেন। এ সময় তিনি ক্বিরাত সম্মেলনে সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের গৌরব বিশ্বখ্যাত ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারীর প্রতি। আন্তর্জাতিক এই ক্বিরাত সম্মেলন তিন ভাষায় উপস্থাপন করা হয়। বাংলায় ইলিয়াছ হাসান, ইংরেজিতে রুহুল আমিন এবং আরবীতে হাফেজ মাওলানা নুরুল হুদা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button