আজ পবিত্র হজ

Hajjউবায়দুর রহমান খান নদভী: শ্বেত-শুভ্র বসন, বুসন মানে শুধু দুটি চাদর, একটি পরনে, অপরটি গায়ে। পরুষদের খোলা মাথা, উস্খু-খুস্কু চুল, দাড়ি, সুগন্ধি ও সাজগোজবিহীন সাদামাটা দেহাবয়ব। নারীদের খোলা চেহারা, সাধারণ পোশাক। লাখো কণ্ঠে তালবিয়া ধ্বনি। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের লাখো মানুষ। ভিন্ন ভিন্ন দেশ, অঞ্চল, ভাষা, বর্ণ। বিচিত্র তাদের পরিচয়, কেউ রাজা, কেউ প্রজা, কেউ ফকির, কেউ বাদশা, কেউ উঁচু, কেউ নিচু। কিন্তু এখানে আজ সব একাকার। একই সমতলে খোদার বান্দারা আজ অভিন্ন আবেগ, উচ্ছ্বাস, কামনা, প্রার্থনা ও প্রেমের আকুতি নিয়ে হাজির। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। আরাফাতের ময়দান তার চারপাশের পর্বত, পাহাড়ি পথ, বালিয়াড়ি আর কাঁকরভরা মাটি জুড়ে একই ধ্বনির প্রতিধ্বনি। একই আওয়াজের অনুরণন।
আজ থেকে অন্তত: পাঁচ হাজার বছর আগে নূহের প্লাবনে নিশ্চিহ্ন কাবাগৃহকে পুনর্নির্মাণ করেন হযরত ইবরাহীম (আ.)। আল্লাহর নির্দেশে তিনি ডাক দেন হজে যাওয়ার ডাক। জাবালে আবু কুবায়স থেকে তার ডাক পৌঁছে যায় তদানীন্তন বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কর্ণকুহরে। রুহের জগতে পৌঁছে দেয়া হয় প্রতিটি অনাগত মানব আত্মার কাছে। যারা তখন এ অপার্থিব ডাকে সাড়া দিয়েছিল, বলেছিল লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, যুগে যুগে তারাই দুনিয়ায় এসে হজ পালন করছে। জাবালে আবু কুবায়স পবিত্র কাবাগৃহ সংলগ্ন পূর্বপাশের পাহাড়ের নাম। যেখানে এখন প্রধান ইমাম ও খতীব শায়খ আবদুর রহমান সুদায়িস-এর আল হারাম বিষয়ক কার্যালয় ও সউদী বাদশাহর সাফা প্রাসাদ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, হে ইবরাহীম, মানবজাতিকে হজের জন্য আহ্বান জানান। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে মানুষ আপনার জায়গায় এসে পৌঁছুবে… শত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে। আল্লাহ হজ সম্পর্কে এভাবেও বলেছেন, আমার উদ্দেশে কাবাঘরে হজ করতে আসা মানুষের উপর কর্তব্য। যারা পারে তারা যেন এ ঘরের উদ্দেশে আসে। সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি হজ ও ওমরা করে সে নির্দ্বিধায় এ দু’টি জায়গায় ছুটোছুটি করবে। যে নেক ও কল্যাণ কাজে অগ্রসর হয়ে আল্লাহ তার কাজ কৃতজ্ঞতার সাথে কবুল করেন। আর যে ব্যক্তি অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ দুনিয়ার কারো কাছে মুখাপেক্ষী নন।
নবী করীম (সা.) বলেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আমার উম্মতের যে ব্যক্তি হজ করল না, নবী হিসেবে আমার এটা জানারও আগ্রহ নেই যে সেকি ইহুদী হয়ে মরল না নাসারা হয়ে মরল। নবী করিম (সা.) বলেন, কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। নবী করিম (সা.) এ-ও বলেছেন, রমজান মাসে ওমরা পালন করা আমার সঙ্গে হজ পালনের সমান।
আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০ লাখ মুমিন মুসলমান ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ বা রুকন পবিত্র হজ পালনের জন্য আরাফাতের ময়দানে সমবেত। তাদের কণ্ঠে একই ধ্বনি, একই উচ্চারণ, লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ন্নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক। লা শারীকা লাক। অর্থাৎ উপস্থিত, হে আল্লাহ আমি উপস্থিত, তোমার ডাকে সাড়া দিযে আমি উপস্থিত। তোমার কোন শরিক নাই। সমস্ত প্রশংসা, সমস্ত নেয়ামত, সমস্ত রাজত্ব প্রভূত্ব কেবলই তোমার। তোমার কোন শরিক নাই। পৃথিবীর সকল ভূখ- থেকে লাখো ঈমানদার তাদের বিচিত্র নাগরিকত্ব, ভাষা, বর্ণ, আর্থ-সামাজিক পরিচয় ও বিভিন্ন অবস্থা এবং অবস্থান থেকে এক ঈমান, এক চেতনা, এক ইবাদত, এক প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ছুটে এসে আজ সমবেত। তিনপাশ সুউচ্চ পর্বতমালা পরিবেষ্টিত ঐতিহাসিক এ ময়দানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাজার হাজার তাঁবু আর নানা আশ্রয়ে, রোদ্র ছায়া আর মরুর তীব্র গরম আবহাওয়ায় লাখো মানুষ প্রভূর গুণ-গান, জিকির, দুরুদ, নামাজ-বন্দেগী আর আবেগ-উচ্ছ্বাসভরা নিবেদন নিয়ে উপস্থিত এই আরাফাতের মহামিলনমেলায়। এ ময়দানেই হাজার হাজার বছর আগে প্রথম মানুষের আদি পিতা ও মাতা হযরত আদম (আ:) এবং মা হাওয়া (আ:)-এর এ পৃথিবীর জীবনে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে। জান্নাতের অবস্থা থেকে ধূলির ধরণীতে দু’জন দুই ভিন্ন অবস্থানে অবতরণের পর বাবা আদম (আ.) ভারতবর্ষ বর্তমান শ্রীলংকা থেকে মক্কার দিকে যেতে থাকেন। মা হাওয়া ইয়েমেনের এডেন থেকে যেতে থাকেন একই লক্ষ্যে। তাদের পুনর্মিলন তথা পার্থিব পরিচিতি ঘটে এই ময়দানে। নাম দেয়া হয় ময়দানে আরাফাত। সূর্যাস্তের পর তারা উভয়ে অগ্রসর হন মক্কার দিকে। রাত যাপন করেন মুজদালিফায়, মাশয়ারুল হারাম মসজিদটি এখন যেখানে। এটিই ছিল বাবা আদম ও মা হাওয়ার পার্থিব জীবনের প্রথম রাত। পরদিন মিনা প্রান্তর হয়ে তারা এসে পৌঁছেন মানবজাতির প্রথম ইবাদতখানা কাবা গৃহে। বলা হয়, পরবর্তীতে মিনার মসজিদে খাইফ চত্বরে হযরত আদম (আ.)-এর কবর রচিত হয়। মা হাওয়া (আ:)-কে তার বংশধরেরা শেষ জীবনে নিয়ে যান লোহিত সাগর তীরের নতুন বন্দর নগরীতে। নামকরণ করা হয় মহান দাদিমার শহর জেদ্দা। জাদ্দা বা রূপান্তরে জেদ্দা নগরীর প্রধান কবরস্থানে মা হাওয়ার কবর (প্রায় ৫৫ হাত দীর্ঘ) আজো বিদ্যমান।এর হাজার বছর পর হযরত নূহের প্লাবনে কাবা ঘর বিলুপ্ত হয়ে যায়। বহু বছর পর হযরত ইবরাহীম (আ:) পুত্র ইসমাঈল (আ:)-কে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহ নির্দেশে পুনর্নির্মাণ করেন প্রাচীনতম কাবাগৃহ। যদিও মানবজাতির পৃথিবীতে আগমনের বহু পূর্বেই ফেরেশতাদের দ্বারা এ ঘর নির্মিত হয়। তবে নব উদ্যোগে কাবা গৃহের নির্মাতা হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ:)। এ সময়টিও অন্তত: পাঁচ হাজার বছর আগে। ১৫ মিটার উঁচু কাবাগৃহ নির্মাণের সময় হযরত ইবরাহীম (আ:) যে পাথরের উপর দাঁড়াতেন আর তার প্রয়োজনে পাথরটি নিজ থেকেই উঁচু একং নিচু হত এর নাম মাকামে ইবরাহীম। পাঁচ হাজার বছর যাবত এ পাথরটি কাবাগৃহের পাশে আছে। বর্তমানে কাবার ৩ মিটার দূরে পূর্বপাশে একটি স্বর্ণের খাঁচায় এটি দেখা যায়। হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর স্ত্রী বিবি হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাঈলের জন্য পানির সন্ধানে ছুটাছুটি করেছিলেন সাফা এবং মাওয়ার মধ্যবর্তী উপত্যকায়। তার কারামত ও শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ:)-এর নবুওয়তের ফয়েজে উৎসারিত হয় জম জমকূপ। এই পুত্রকে কোরবানীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সূচনা হয় আধুনিক ইসলামের কোরবানী প্রথার। যদিও আদমপুত্র হাবিল-কাবিলই দুনিয়ার প্রথম কোরবানী চালু করেছিলেন। পথিমধ্যে শয়তানের প্ররোচনায় প্রতিবাদস্বরূপ ঘটে কংকর নিক্ষেপের ঘটনা। মক্কা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের এ পরিক্রমা মূলত মানবজাতির আদি পিতা, প্রথম নবী হযরত আদম (আ:) ও মা হাওয়া (আ:), একত্ববাদী বিশ্বমুসলিম সম্প্রদায়ের জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ:), তদীয় সহধর্মিণী হযরত হাজেরা (আ:) এবং তাদের প্রিয়পুত্র হযরত ইসমাঈল জবিহুল্লাহর (আ:)-এর স্মৃতি বিজড়িত, প্রভূপ্রেম ও আত্ম নিবেদনের অমর কীর্তিরই ঐতিহ্যবাহী অনুশীলন। হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর উত্তরপুরুষ বিশ্বনবী হাবিবুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে একাদশ হিজরীতে মহান আল্লাহ হজকে চির নতুন, চির আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ রূপদান করেন। নবী করীম (সা.)-এর শেখানো আদর্শেই বর্তমানের হজ দীর্ঘ ১৪২৫ বছর যাবৎ অভিন্ন অকৃত্রিম ও অবিকৃতরূপে পালিত হয়ে আসছে। বিদায় হজে মিনার বক্তৃতায় মহানবী (সা.) সোয় লাখ সাহাবীকে উদ্দেশ করে, বলেছিলেন, খুযু আন্নি মানাসিকাকুম। অর্থাৎ আমাকে দেখে দেখে তোমরা তোমাদের হজের নিয়ম নীতি শিখে নাও। এখন থেকে আমার আদর্শ মতই চিরদিন হজ পরিপালিত হবে। লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত লাখো হাজী নারী-পুরুষের আত্মিক আকুতি ও হৃদয়ভরা দোয়া-মুনাজাত, বিশ্ব মুসলিমের খোদাপ্রেম ও ইশকে রাসূলভিত্তিক প্রাণের গভীর টান তাদের চুম্বকের মতো এনে সমবেত করেছে আরাফাতের ময়দানে। হাদীস শরীফে এসেছে, আরাফাতের ময়দানকে কেন্দ্রবিন্দু করে পৃথিবীর জমিনকে বহুগুণ বিস্তীর্ণ করা হবে এবং এতেই অনুষ্ঠিত হবে রোজ কিয়ামতের সমুদয় কার্যক্রম। হাশর-নশর, বিচার-বিবেচনা, জাযা-সাজা, মিজান-পুলসিরাত সবই হবে বিস্তীর্ণ নতুন ভূখন্ডে, যার কেন্দ্রবিন্দু হবে এই আরাফাতের ময়দান। অতএব, একজন মুমিনের জীবনে এই ময়দানে হজের দিন ওকুফ করার মতো সৌভাগ্য ও সংবেদনপূর্ণ আর কিছুই সম্ভবত এ দুনিয়ায় নেই। মহানবী (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ, এক আজানে দুই ইকামতে একইসাথে জোহরের সময় জোহর ও আসরের কসর নামাজ পড়া এবং জাবালে রহমতের উপর থেকে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ দেয়ার স্মৃতি বিজড়িত দিন এই ৯ জিলহজ। এ দিন বাদ জোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একাধারে কয়েক ঘণ্টা মহানবী (সা.) দু’হাত উপরে তুলে বিশেষ দোয়া মুনাজাত, নিবেদন ও আহাজারি করেন মহান প্রভূর দরবারে। এদিন তার সাথে জীবনের এ দীর্ঘতম দোয়া ও মুনাজাতে শরিক হন সোয়া লাখ শিশু-কিশোর-তরুণ-যুবক-বৃদ্ধ-বনিতা সাহাবী। এক সাহাবী বর্ণনা করেন, বিদায় হজের দিন মহানবী (সা.) আকাশের দিকে দু’হাত তুলে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করতে থাকেন। আমরা সফেদ ইহরামের চাদরের ফাঁক দিয়ে তার ঘর্মাক্ত দেহ লতা ও বাহুর নিচের রজতশুভ্র অংশ নয়নভরে দেখে দেখে তৃপ্ত হই। নবী করিম (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে উৎকৃষ্ট দোয়া হচ্ছে আরাফাতের দিনের দোয়া। আমি এবং অন্য সকল নবীই এ দোয়াটি করেছি, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহু লাহুল মুল্কু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই, তিনি এক এবং অদ্বিতীয়, তার কোন শরিক নাই। সমস্ত প্রশংসা, রাজত্ব প্রভূত্ব ও কর্তৃত্ব শুধুই তাঁর। তার সমকক্ষ বা কোন অংশীদার নাই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। মানবজীবনের পরম প্রাপ্তি হচ্ছে আরাফাতের ময়দানের হজের দিন গমন ও মহান প্রভূর সান্নিধ্যে নিজের জীবনের সকল দুঃখ-ব্যথা, ভাব-বক্তব্য ও কথার নিঃশেষ নিবেদন। ক্ষমার আকুতি পেশ করে রহমত ও মাগফিরাতের বার্তা লাভ করা।আজই পবিত্র হজের সে প্রধান দিবস।
৯ জিলহজ ইয়াওমে আরাফাত বা আরাফাত দিবস। এ দিন মক্কা থেকে প্রায় ১৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত আরাফাতের ময়দানে গমন করা হজযাত্রীদের জন্য ফরজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, আল হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতে যাওয়াই হজ। মক্কায় ৭ জিলহজ হজের নির্দেশনা দেয়া হয়। হজাযাত্রীগণ সউদী গণনানুযায়ী ৮ জিলহজ মিনায় অবস্থান নেন। ৯ তারিখ ভোর থেকে তারা যেতে থাকেন আরাফাতের ময়দানে, এখানে দুপুর পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হজ যাত্রীদের জন্য ওয়াজিব। তারা এ ময়দানে সারাদিন ওকুফ করে দোয়া মুনাজাত ও অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে কাটাবেন। এ দিন বিশ্ব মুসলিমের জন্য রোজা রাখা সুন্নত। এর সওয়াব পূর্ব ও পরের এক বছর করে দু’বছরের গোনাহ ক্ষমার জন্য যথেষ্ট। হজ পালনরত ব্যক্তিদের জন্য রোজাটি সুন্নত নয়। তাদের জন্য এ দিন রোজা না রাখা উত্তম। আরাফাতের ময়দানে হাজীরা জোহরের সময় এক আযানে দুই ইকামতে একই সাথে জোহর ও আসরের কসর নামাজ পড়বেন। এখানকার মসজিদে নামিরায় প্রদান করা হবে হজের খুতবা। এ বছর খুতবা দেবেন সউদী গ্রান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ আলে শায়খ। সূর্যাস্তের পর হাজীরা যাবেন মুজদালিফায়। আরাফাত থেকে তিন কি.মি. দূরত্বে মাশআরুল হারাম মসজিদ ঘিরে বিশাল উপত্যকায় খোলা আকাশে নিচে লাখো হাজী রাত কাটাবেন। এখানে রাতের শেষাংশ অবস্থান করা ওয়াজিব। যত দেরিই হোক হাজীরা মুজদালিফায় পৌঁছে একই সাথে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। এখান থেকে তারা কংকর সংগ্রহ করবেন। রাতের শেষ প্রহর মুজদালিফায় দোয়া, কান্নাকাটি, মুনাজাত, যিকির ও অন্যান্য ইবাদতের ভেতর অতিবাহিত করা মুজদালিফায় অবস্থানের উদ্দেশ্য। ওয়াক্ত শুরু হলেই ফজর পড়ে হাজীরা ছুটবেন আবার মিনা প্রান্তরের দিকে। তখন ১০ জিলহজ হয়ে যাবে। এদিন বড় জামারায় কেবল ৭টি কংকর নিক্ষেপ, কোরবানী করা, মাথা মুড়ানো বা ছাঁটা ওয়াজিব। এরপর মক্কা শরীফে ফরজ তওয়াফ, সায়ী করা হজের প্রধান কাজ। অতঃপর পুনরায় মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ তাঁবুতে অবস্থান করে প্রতিদিন জোহরের পর থেকে যখন সুযোগ পাওয়া যায় ৭টি করে ২১টি কংকর ছোট, মাঝারি ও বড় জামারায় নিক্ষেপ করতে হবে। এটি হজের ওয়াজিব। এরপর বিদায়ী তওয়াফ ছাড়া আর হজকার্য বাকি নেই। শুধু ওয়াজিব আমল বিদায়ী তওয়াফ শেষে মক্কা ত্যাগ করা।আরাফাতের খুতবায় আজ ইমাম সাহেব ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, আদর্শ ও সমকালীন উম্মাহর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানে, মুসলিম জাতির ঐক্য ও সংহতি সম্পর্কে নির্দেশনা দেবেন। বিশ্বের সকল মিডিয়া এ খুতবা, নামাজ, হজ, ওকুফ ইত্যাদি প্রচার করবে। সেটেলাইট থেকে দৃশ্য ধারণ ও সম্প্রচার করা হবে। সউদী বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ হাজার হাজার কর্মী নিয়োগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। হেলিকপ্টার থেকে গোটা ময়দান সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। হাজার হাজার পরিবহন ৩০ লাখ হাজীকে যথা সময় স্থানান্তরিত করবে। কিছুদিন যাবৎ মক্কা-মিনা-মুজদালিফা-আরাফাত মনোরেল চালু হয়েছে। আরাফাত ময়দানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উপহার দেয়া শত শত নিমগাছের শীতল ছায়ায় বিশ্বের হাজীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সউদী বাদশাহ মরহুম খালেদ বিন আবদুল আজিজ আলে সউদের সময় গোটা আরাফাতের ময়দানকে ছায়াদার করার প্রস্তাব করেন এবং বাংলাদেশ থেকে নিমের চারা পাঠিয়ে কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে মরু প্রান্তরে শত শত নিমগাছ রোপণ ও পরিচর্যা করে তারাই কয়েক বছরের ব্যবধানে বর্তমানে আরাফাতের ময়দানকে সবুজ করে দিয়েছেন। এ দুই শাসকের কেউই আজ দুনিয়ায় নাই। কিন্তু তাদের নেক কাজের সুফল হজযাত্রীরা পাচ্ছেন। তাদের আমলনামায় মহান কর্মটি সদকায়ে জারিয়া হয়ে আছে। উল্লেখ্য, আরাফাত ময়দানে হাজীরা জানতে চাইলে সউদীরা বাংলাদেশের এ বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নের কীর্তিটি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকেন এবং তারা আরাফাতের নিমগাছকে ডাকেন জিয়াগাছ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button