বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমছে গতি পাচ্ছে এশিয়ার অর্থনীতি

Oilচলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনার পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জকে শনাক্ত করেছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ। বিগত বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা প্রতিবন্ধকতা যেমন ছিল তেমনি এর থেকে উত্তরণের পথও সহজ নয় বলে তারা আগেই থেকেই সতর্ক করে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রত্যাশা করছে এ বছর বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ০৮ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বিশেষ করে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করেছে। তবে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বিচার বিশ্লেষণ করে এটাই ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ের চেয়ে ২০১৫ সালে সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক চিত্র ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যাহোক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার খুবই ভঙ্গুর ছিল এবং পুনরুত্থানের ক্ষেত্র এখনও দুর্বল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রত্যাশ্যা করে যে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি এ বছর ৩.৮ শতাংশে উন্নীত হবে, যা পূর্ববর্তী বছরের ৩.৩ শতাংশের চেয়ে বেশি। নেতৃত্বদানকারী শিল্পসমৃদ্ধ দেশসমূহ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন অর্থনৈতিক পুনরুত্থানে অগ্রণী দলে রয়েছে, অন্যদিকে ইউরোজোন এবং জাপন অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিম্ন সুদের হার এবং ক্রুড ওয়েলের দাম কমে যাওয়ার সুফল ভোক্তারা ভোগ করবে। এটা বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য কেননা দেশ দুটোতে দ্রুত কর্মসংস্থান বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক sanctions এবং তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। আগত বছরগুলেতে এ sanctions প্রত্যাহার হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং ভবিষ্যতে আরও sanctions যোগ হতে পারে, যেহেতু ইউক্রেনের সমস্যা সমাধানের কোন সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু, রাশিয়ার বাজেটে সমতা রাখার জন্য উচ্চ তেলের দাম দরকার, যা কিনা সাম্প্রতিক সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে পড়ে গেছে যার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি আরও মন্দায় পতিত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন। তেলের দাম যদি অব্যাহতভাবে কমতে থাকে তবে এ মন্দা ভয়াবহ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এবং ফলশ্রুতিতে রাশিয়ার ভিতরে এবং পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ২০১৪ সালের দ্বিতীয় ভাগ থেকে কমে যাওয়ার ফলে চলতি বছরে সার্বিক এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ গতির সঞ্চার করেছে, যেহেতু অধিকাংশ এশিয়ান অর্থনীতিই তেল এবং গ্যাসের বড় আমদানিকারক। এ অঞ্চলের সার্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৫ সালে ৪.৭ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা যাচ্ছে, যা কিনা পূর্ববর্তী বছরে ৪.৬ শতাংশ ছিল। যাহোক ২০১৬ সালে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশ্যা করা হচ্ছে।
এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতি চায়না এবং জাপান ২০১৫ সালেও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করবে। জাপান সংগ্রাম করছে বয়স্ক জনসংখ্যা এবং সরকারের উচ্চ ঋণ স্তরের কারণে, যা দীর্ঘ মেয়াদে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রতি বছরে ১ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। চায়নাতেও ভূমি-আবাসন বাজারে দুর্বলতার জন্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দ্রুত ঋণ বাড়ার ফলে ২০০৯ সাল থেকে মাঝারি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়।
২০১৩ সালে ইন্ডিয়াতে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল, কিন্তু যেহেতু দেশটি তেলের উপর নির্ভরশীল তাই তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে চলতি বছরে ইন্ডিয়া ইমার্জিং মার্কেট রিকভারির ক্ষেত্রে একটি অগ্রগণ্য দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। উপরন্তু, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইন্ডিয়াতে মুদ্রাস্ফীতির চাপও কমেছে।
মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এবং বিশ্বের অন্যান্য নেতৃত্বাদানকারী মুদ্রার দুর্বলতার কারণে চলতি বছরে কারেন্সি বিবাদ বিরাজমান থাকবে। অতীতেও নীতি-নির্ধারকরা এ ধরনের বিবাদে পতিত হওয়াকে এড়াতে পেরেছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারেন্সি দুর্বল হয়েছে, এর ফলে অন্যান্য দেশসমূহ তাদের রপ্তানী প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে তাদের কারেন্সির মান কমাতে বাধ্য হতে পারে। যদি কারেন্সি বিবাদ হয় তবে কোন দেশই লাভবান হবে না এবং বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে শক্তিশালী মার্কিন ডলার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানীকারকদেরকে চাপের মধ্যে ফেলবে, যা ঐ দেশের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রসারমান ঋণ নীতির কারণে বিশ্ব ইকুইটি বাজার এ বছর চলমান থাকবে। যদিও ইকুইটি মার্কেট র‌্যালি ষষ্ঠতম বছরে পদার্পণ করছে, তথাপি চার দশকের প্রাচীন বন্ডের বুল মার্কেটের বড় ধরনের সংশোধন প্রয়োজন। সরকার কর্তৃক বিভিন্ন ধরনের বন্ডের নি¤œ সুদের হারের ফলশ্রুতিতে বিনিয়োগকারীরা কম লাভবান হবে।
প্রবৃদ্ধি হারের নমনীয়তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা বিবেচনা করেন যে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্বল্প মেয়াদে প্রতিকূলতা যদিও থাকবে তথাপি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলই বিশ্ব প্রবৃদ্ধির নেতৃত্ব দিবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশ্ব উৎপাদনশীলতার ভিত্তিকে শক্তিশালী করবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button