ফিলিস্তিনের এক ক্ষুদে সাংবাদিক

Palestineদখলীকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের নৃশংসতা বিশ্বের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরা হয় না। বিশ্ববাসী ঠিকমতো জানতে পারে না আসলে কি ঘটছে ফিলিস্তিনে বা পশ্চিম তীরে। সারা দুনিয়ার মানুষকে সেই অজানা কাহিনী জানানোর জন্য পশ্চিম তীরের একটি শিশু কন্যা বেছে নিয়েছে সাংবাদিকতা। এ মাসে তার বয়স হবে ১০ বছর। তার বসবাস পশ্চিম তীরের নবী সালেহ গ্রামে। নাম তার জান্না জিহাদ আয়াদ। স্থানীয় শিশুদের নিয়ে নিয়মিতভাবে সে ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। মাত্র ৭ বছর বয়সে তার গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সে ভিডিওতে ধারণ করা শুরু করে। কেন সাংবাদিকতাকে বেছে নিচ্ছে এত্ত ছোট শিশু? এমন জিজ্ঞাসার জবাবে সে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের কথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা সাংবাদিকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি কেন সেই কাজটি করি না এবং বিশ্বকে কেন আমি দেখাই না যে, আমার গ্রামে কি হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিশ্বে এখন যতজন যুবক, কিশোর বা শিশু সাংবাদিক আছে তার মধ্যে জান্না জিহাদ আয়াদ অন্যতম। তবে তার পরিবারে এ পেশায় কেউ নেই। আছেন একজন আত্মীয় বিলাল তামিমি। তিনি একজন ফটোগ্রাফার। তিনি নবী সালেহ গ্রামে ইসরাইলি সেনাদের নৃশংসতার ছবি ধারণ করেন। তাকে দেখেই জান্না সাংবাদিকতায় উৎসাহিত হয়েছে। জান্না বলেছে, যা ঘটছে আমি তা নিয়ে কথা বলি। আমার চোখের সামনে দেখতে পাই দখলদারিত্ব, সেনাবাহিনী, কামান, পুলিশ। আমাদেরকে আমাদের ভূমি থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা কত কিছুই না করছে।
এক পর্যায়ে তার গ্রামে তার এক আত্মীয় মুস্তাফা তামিমি ও রুশদি তামিমি মারা যান। সেই থেকে নবী সালেহ গ্রামে কি হচ্ছে তা প্রমাণ্য আকারে ধারণ করতে উদ্বুদ্ধ হয় সে। তাদেরকে হত্যা করেছে ইসরাইলিরা। মুস্তাফা নিহত হয়েছেন একটি গ্যাস কন্টেইনারের আঘাতে। রুশদিকে কিডনি বরাবর গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার পর থেকে জান্না তার কাজের পরিধি বিস্তৃত করেছে। পরিবারের সঙ্গে যখনই জেরুজালেম, হেব্রন, নাবলুস, জর্ডান সহ যেখানেই বের হয়েছে সেখানেই তার মায়ের আইফোন ব্যবহার করে ভিডিও ধারণ করেছে। তার সেই ভিডিওতে উঠে এসেছে চেকপয়েন্টে শিশুদের আটকের দৃশ্য। বিক্ষোভ সমাবেশ। ফিলিস্তিনি শিশুদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা। এক্ষেত্রে জান্না শিশু হওয়ায় সুবিধা পেয়েছে। কারণ, প্রাপ্ত বয়স্ক বা পেশাদার সাংবাদিক এসব ছবি ধারণ করলে তার ক্যামেরা কেড়ে নেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু জান্নার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না। ফেসবুকে সে নিজেকে একজন সংবাদ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। তার অনুসারীর সংখ্যা এখন ২২ হাজারের ওপরে। বিক্ষোভে অংশ নেয়া ও ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে অংশ নেয়া তার ভিডিও রয়েছে ফেসবুকে। তার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় আরবি ও ইংরেজি ভাষায়।
জান্না বলে, ক্যামেরাই আমার অস্ত্র। বন্দুকের চেয়েও তা শক্তিশালী। আমি এগুলো অল্প মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি। তারা তা ছড়িয়ে দেয় অন্যদের কাছে। জান্না’র মা নাওয়াল তামিমি মেয়েকে নিয়ে যেমন গর্ব করেন, তেমনি তার জীবন নিয়ে তিনি সঙ্কিত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button