ব্রিটেনের প্রথম হিজাবী বক্সিং কোচ জাহরার পেশাগত সংগ্রামের অনন্য কাহিনী

ব্রিটেনের প্রথম অ্যামেচার অর্থাৎ শৌখিন বক্সিং কোচ যখন হিজাব পরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন তখন তিনি অপরিচিত নিষ্ঠুর প্রকৃতির ব্যক্তিদের বিদ্রুপাত্মক আচরণের শিকার হন। কেউ কেউ এই বলেও মন্তব্যও করেন যে, তিনি কমিউনিটির জন্য ‘লজ্জা’ বয়ে আনছেন। নটিংহ্যামশায়ারের এসপ্লি’র বাসিন্দা জাহরা বাট এক পর্যায়ে প্রসব পরবর্তী বিষন্নতার আক্রান্ত হলে তিনি বক্সিং অনুশীলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হন। কিন্তু ৩ সন্তানের এই মুসলিম মাতা প্রশিক্ষন প্রদান করতে গিয়ে হিজাব ত্যাগ করেননি। বিশেষভাবে পারিবারিক সহিংসতার শিকারদের সহায়তা প্রদানের জন্য তার অনুশীলন পরিকল্পিত। ৪০ বছর বয়সী জাহরা ইতোমধ্যে তার শিক্ষকতা পেশা ত্যাগ করেছেন পূর্ণসময়ের কোচ হওয়ার লক্ষ্যে।
তিনি জানান যে, তিনি বহু সংখ্যক ইতিবাচক বার্তা পেয়েছেন, যা তাকে ‘ঘৃণাকারী’দের পরিহার বা প্রত্যাখ্যান করতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, আমার হেড স্কার্ফ অর্থাৎ মাথার আবরণীর কারণে অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছি, লোকজন বলেছে, এটা কমিউনিটির জন্য লজ্জা নিয়ে আসছে।

জাহরা বলেন, যখন কেউ প্রচলিত রীতির বাইরে কিছু, করে, তখন লোকজন মনে করে তাকে তাদের বিচার করা উচিত। প্রাথমিকভাবে, সেটা ছিলো হতাশাব্যঞ্জক, অত্যন্ত পীড়াদায়ক, এটা আমাকে সবকিছু পুনঃমূল্যায়নে বাধ্য করে এবং এটা আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় যেখানে আমি প্রশ্ন করি, আমি কি সবকিছু করতে চাই, নাকি ঠিক কাজটি করবো কি করবো না? আমার এবং আমার কল্যানের ওপর এর একটি গভীর প্রতিক্রিয়া ছিলো -এটা আমার পরিবারের জন্যেও অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। তারা মনে করতেন, আমি নিজেকে এমন কিছুর জন্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলছি, যা আমার মনের প্রশান্তির জন্য কোন কাজের কিছু নয়।
জাহরা জানান, প্রতিটি নেতিবাচক মন্তব্যের জন্য তিনি শত ইতিবাচক মন্তব্য লাভ করেন। তাই তিনি এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, লোকজনের মতামত যাতে আমাকে পরাভূত করতে না পারে, সে চেষ্টা আমার ছিলো। আমি মহিলাদের জন্য ক্লাশ পরিচালনা করি, কারণ এটা যেনো আমাকে সাহায্য করে। আমি জানতাম, এটা অন্যান্য নারীদের তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
যখন আমি লোকজনকে বলি যে, আমি বক্সিংয়ে আছি, তখন তারা আমাকে প্রশ্ন করে, আপনি বক্সিংয়ে কেনো? আপনি দেখতে তো চমৎকার ! নিশ্চিতভাবে এখনো অনেকে বক্সিংকে পুরুষদের ক্রীড়া বলে মনে করে।
জাহরা বলেন, আমি বক্সিংকে এক ধরনের চিকিৎসা বলে মনে করি। আমি ভাবতে ভালোবাসি, এটা আমাকে কীভাবে বদলে দিয়েছে।
জাহরা পারিবারিক সহিংসতা এবং ‘স্টকার’ অর্থাৎ নিঃশব্দে অনুসরণকারীদের শিকারদের পক্ষে কাজ করতে এবং দেশব্যাপী নারীদের সহায়তায় নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়েছেন।
২০১৪ সালে জাহরা হিসাব পরিহিতা একমাত্র নারী কোচে পরিণত হন। তিনি অ্যামেচার বক্সিং এসোসিয়েশন (এবিএ)-এ যোগ দেন এবং হেলথ্ কোচ হিসেবে যোগ্য বিবেচিত হন। গত লকডাউনের সময়, জাহরা ২.৬ চ্যালেঞ্জ শুরু করেন। ২৬ দিন ধরে দৈনিক দীর্ঘ ৬কে দূরত্ব দৌঁড়েন রোজা রাখা অবস্থায়। একটি ন্যাশনাল স্টকিং চ্যারিটি প্যালাদিন-এর জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে তিনি তা করেন।
তিনি বলেন, পারিবারিক নিপীড়ন ও নারীদের পিছু অনুসরণ একজন নারীর জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রায়ই আমরা এ বিষয়ে শুনতে পাইনে আসলে কী ঘটেছে। আমি এটা করছি আমার নিজের জন্য এবং অন্য লোকজনকে এ ব্যাপারে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য। আমি তা করছি ঐসব লোকের জন্য, যাদের এ সুযোগ-সুবিধা নেই। আমার সন্তানেরা আমার এসব কাজের সমর্থক এবং আমি তাদের নিয়ে গর্বিত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button