বাহাত্তরে পা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এবারের জন্মদিন অসহায়, গরিব ও দুঃখী মানুষদের জন্য উৎসর্গ

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭২তম জন্মদিন আজ শুক্রবার ২৮ সেপ্টেম্বর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার এবারের জন্মদিন অসহায়, গরিব ও দুঃখী মানুষদের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা এখন শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন নতুন ভূমিকায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার, পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে তার নেতৃত্বে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে।

শেখ হাসিনার শৈশব কাটে পিত্রালয়ে। ’৫৪ এর নির্বাচনের পর তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। ওই বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম. এ ওয়াজেদ মিয়া শেখ হাসিনার স্বামী।

বাবার দেখা পেতেন খুবই কম। জেল-জুলুম, রাজরোষ ছিল পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং সংগঠন নিয়েই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি ও যাপিত জীবন। এ কারণে ছেলে-মেয়েরা পিতার সান্নিধ্য পেয়েছেন খুবই কম। তারা পাঁচ ভাই-বোন। অপর চার জন হলেন— শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের সঙ্গে তাই তার নিবিড় সম্পর্ক।

তিনি প্রায়ই তার বক্তব্যে বলেন, জীবনের শেষ সময়টুকু তিনি গ্রামেই কাটিয়ে দেবেন। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে গ্রামের প্রতি তার টানের কথা।

বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামমুখর জীবন শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর আড়াই যুগ ধরে দেশের এই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ তত্ত্বের। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সূধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়। গণসংগ্রাম ও আইনি লড়াইয়ের একপর্যায়ে শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনাসমর্থিত সরকার। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।

বরাবরের মতো এবারো জন্মদিনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদান শেষে বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। রোববার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তাদের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে ‘‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তার এই মানবিক দৃষ্টান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। নিখাঁদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে।

কর্মসূচি
আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করবে। এর মধ্যে রয়েছে: রাজধানীসহ সারাদেশে আনন্দ শোভযাত্রা, বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ সারাদেশের মসজিদে দোয়া এবং মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা, সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে আওয়ামী লীগের ত্রাণ উপ-কমিটির ১০০টি রিকশা ভ্যান, বেলা ১১টায় আজিমপুরে দুস্থদের মধ্যে খাদ্য এবং অসচ্ছল পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা ও পুস্তক বিতরণ। এ ছাড়া, আজ আওয়ামী লীগের শিক্ষা উপ-কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বিকালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘নবীনদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী আনন্দ মিছিল করবে ছাত্রলীগ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button