হেফাজত দমনে পুলিশী ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ প্রকাশ

PMদেশের উন্নয়নবিরোধী যেকোনো অপশক্তি দমনে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রোববার পুলিশ সদরদফতরে জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত পুলিশের এনকম ভবনের কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ দমন ও বিএনপি-জামায়াতের তা-ব মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ধর্মান্ধ জামায়াত-শিবির ও হেফাজতের হিংস্র, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ধ্বংসযজ্ঞ রোধে পুলিশ সদস্যগণ যে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ত্যাগ, নিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমি এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই। মে মাসের ৪, ৫ ও ৬ তারিখে যে পেশাদার দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন শাপলা চত্বরে সে জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্রের আশংকা রয়েছে উল্লেখ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে বলেছেন, অপশক্তি দমনে আরো কঠোর হতে হবে। জনগণ যাতে আপনাদের দ্বারা হয়রানির শিকার না হয় সে দিকেও সতর্ক থাকতে হবে। ধর্মান্ধ জামায়াত-শিবির ও হেফাজতিদের হিংস্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ধ্বংসযজ্ঞ রোধে পুলিশ সদস্যরা যে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, ত্যাগ, নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে তার জন্য আপনাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। থানা, তদন্ত কেন্দ্র, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্স এবং পুলিশের অন্যান্য দফতরে আগত মানুষ যাতে অযথা হয়রানি, দুর্ব্যবহার বা কোনো দুর্ভোগের শিকার না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। পুলিশী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি.কিউ.কে. মোস্তাক আহমেদ, পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাপানি রাষ্ট্রদূত সিউসাতো সিমো ও অতিরিক্ত আইজি শহীদুল হক। এনকম ভবনের কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদর দফতরে শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। কর্মকর্তারা বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল মন্ত্রণালয়ে গেলে তা মাসের পর মাস পড়ে থাকে। পুলিশের পদোন্নতি, থানা ও ফাঁড়ি পুনঃনির্মাণ এবং ঢাকায় পুলিশের আবাসন ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনেন এবং তিনি এ সব বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে।
পুলিশের এনকম ভবনের কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পুলিশী সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে নারী পুলিশের নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সন্ত্রাসী ও অপরাধ দমনে ‘ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট’ গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের কাজকে আরো গতিশীল এবং জনগণের দোরগোড়ায় পুলিশের সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ইউনিট রংপুর রেঞ্জ, রংপুর আরআরএফ গঠনসহ ৩৯টি থানা ও ৪৭টি তদন্তকেন্দ্র স্থাপন করেছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী পুলিশের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর সাতশ’ ৩৩টি ক্যাডার পদসহ ৩২ হাজার পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইতোমধ্যে, পাঁচশ’ ক্যাডার পদসহ ২৮ হাজার দুইশ’ ৫৫টি নতুন পদ সৃষ্টির কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ২৮ বছর পর জাতির পিতা প্রদত্ত আইজিপি’র র‌্যাঙ্ক ব্যাচ পুনঃ প্রবর্তন করেছি। আইজিপি’র পদকে সিনিয়র সচিবের মর্যাদা দিয়েছি। পুলিশ বিভাগের একাধিক পদকে গ্রেড দুই থেকে থেকে গ্রেড এক-এ উন্নীত করেছি। পুলিশের দুটি সিকিউরিটি ও প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ছাড়াও পুলিশের ইউনিটগুলোতে যানবাহন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে এবং তদন্তের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গঠনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সর্বোপরি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মান উন্নয়নের জন্য আমরা এসআই/সার্জেন্টকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং ইন্সপেক্টরকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে উন্নীত করেছি।
তিনি বলেন,‘জামায়াত-শিবিরের আক্রমণে যেসব পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, তাদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এনে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় যেসব পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, তাদের অনুদান ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ এবং নিহত সদস্যদের অনুদান তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করা হয়েছে। পুলিশের অনেক দিনের প্রত্যাশা শতকরা ৩০ ভাগ ঝুঁকিভাতা মঞ্জুরির বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ পুলিশ শীর্ষস্থানে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, নারী পুলিশ সদস্যরা জাতিসংঘের হাইতি ও কঙ্গো মিশনে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। নারী পুলিশের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে দুটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে। আরো ছয়টি খুব শিগগিরই চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বায়নের যুগে পুলিশের কাজের ধরন ও পরিধি বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জঙ্গিবাদ, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মাদক পাচার ও এর অপব্যবহার রোধ, চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারের মতো আরো নানা অপরাধ দমনে পুলিশকে কাজ করতে হচ্ছে। আর এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণে উন্নত প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষিত হতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার বর্তমান সরকারের আমলে প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আগে বেহাল অবস্থায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর প্রশিক্ষণ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পেশাদার বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে।
আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উজ্জ্বল অর্থনীতির দেশের তালিকায় নাম উঠে এসেছে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি তখন সাধিত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও দিকনির্দেশনায় যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দেশের পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পুলিশ বাহিনীর সকল আবদার শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button