রোহিঙ্গাদের দুঃসহ যন্ত্রণার অবসান কবে ?

Ruhingaমিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানরা বিশ্বের নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি। এভাবে পরিচিত হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে। আবহমানকাল থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে বসবাস করে এলেও সেখানকার সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা তাদেরকে বিদেশি বা বঙালি বলে ঘৃণা করে। মিয়ানমার সরকার সর্বশেষ লোক গণনার সময় তাদের নৃতাত্বিক পরিচয় রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের বাঙালি শব্দটি ব্যবহার করতে বলা হয়। এ কারণে অনেক রোহিঙ্গা লোক গণনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। আসলে মিয়ানমারের শাসক থেকে বৌদ্ধ ধর্মগুরু পর্যন্ত রোহিঙ্গা পরিচিতির ব্যাপারে বিরোধিতা রয়েছে। এ কারণে তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে সরকারিভাবে দেশের মোট ১৩৫টি নৃগোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। বস্তুত স্বদেশভূমিতে তারা বছরের পর বছর ধরে সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের দ্বারা নিগৃহীত, ভোটাধিকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপনে তারা বাধ্য হচ্ছেন। সংখ্যাগুরু বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর, মসজিদ-মাদরাসা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা অগণিত নিরপরাধ রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করে চলেছে। জীবনের ভয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বড় কথা হলো, দেশটিতে অসহায় ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কথা বলার মতো কেউ নেই।
এমনকি গণতন্ত্রের নেত্রী অংসান সূচিও এব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের ভোট হারানোর ভয়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সাহস পাচ্ছেন না। চলতি বছর নভেম্বরে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে। আসলে কোনো দেশ যদি দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং সে দেশে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা বলবৎ থাকে তাহলে সেখানকার জাতিগত সমস্যাগুলো প্রজ্বলিত হয়ে গোটা জাতির মধ্যকার সুপ্রবৃত্তিগুলোকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়, মিয়ানমার তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ কারণেই মিয়ানমারের রাখাইন [আরাকান] প্রদেশ এখন কার্যত রোহিঙ্গাদের জন্য নরকে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গাবিরোধী রাখাইন জনগোষ্ঠী ও কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্টরা যৌথভাবে এই বিশেষ মুসলিম জনগোষ্ঠীটির জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে এবং তাদের বাকস্বাধীনতা ও চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য অনুসারে, ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা শ্রেণী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, বেশিরভাগ রোহিঙ্গার মিয়ানমারের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। তাদের ওপর নানারকম অন্যায় ও অবাঞ্ছিত কর আরোপ করা হয়েছে। তাদের ভূমি জবরদখল এবং ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। বিয়ের ওপর অন্যায় ও অনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে ব্যাপক দাঙ্গা-হাঙ্গামার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ ঘটনার পর প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রাজধানী সিওওয়ের [আকিয়াব] বাইরে শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গারা উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তিকর পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। এসব শিবিরে ত্রাণকর্মীদের স্বাধীনভাবে চলাচলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এভাবে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ভীতিকর ও অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এসবের উদ্দেশ্য হলো রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমার ত্যাগ করে বাংলাদেশ কিংবা অন্য কোনো দেশে চলে যায়। ত্রাণ শিবিরের বাইরে বেরিয়ে নিজের বসতবাড়ি পর্যন্ত দেখার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে উৎপীড়ন-নিপীড়ন ও অধিকারবঞ্চিত থাকার ফলে রোহিঙ্গারা নিরাপদে বাঁচার আশায় ইতোমধ্যে অর্ধেকের মতো মিয়ানমার ত্যাগ করে চলে গেছেন।
মিয়ানমারে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সুযোগ তাদের দেয়া হয় না। ভালো কাজের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। এ কারণে রোহিঙ্গারা এখন ব্যাপক সংখ্যায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাড়ি জমাচ্ছেন। ক্ষুধা ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় বাংলাদেশে অবস্থানকারীসহ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা এ বছরের প্রথম চার মাসে সমুদ্রপথে বিদেশে গমন করেছেন। সিওওয়ের মতো প্রধানত রাখাইন সম্প্রদায় বসবাসকারী শহরগুলো থেকে রোহিঙ্গা গ্রাম ও শরণার্থী শিবিরগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে বলে দি ইকোনমিস্টের এক সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে এখানে রোহিঙ্গাদের পক্ষে নিরাপদে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উঁচু তারের বেড়া দিয়ে রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। সিওওয়েতে ট্যাক্সি ব্যবসা ছিল এমন একজন রোহিঙ্গা বলেছেন, এখন তাকে গ্রামে কমসংখ্যক লোককে মোটরসাইকেলে করে আনা-নেয়া করতে হচ্ছে। এর ফলে তার আয় আগের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে। বেশিরভাগ রোহিঙ্গা কৃষক ও মৎস্যজীবী। রাখাইনদের বাধার মুখে কৃষকরা তাদের জমিতে চাষ করার জন্য যেতে পারেন না। রাখাইনদের বাধা নিষ্পত্তি পেরিয়ে যদিওবা কোনো রোহিঙ্গা সমুদ্রে মাছ ধরার কিছুটা সুযোগ করে নিতে পারেন। তথাপিও তাদের অনেক সময় নৌযান স্বল্পতার মুখে পড়তে হয়। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য, তাদের ওপর আর কোনো হামলা যাতে না হয়, সে জন্যই তাদের এভাবে রাখা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা এটাকে দীর্ঘকালের বৈষম্যমূলক নীতির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করে। এভাবে তাদের রাখাইন জনগোষ্ঠীর সাথে মিলেমিশে বসবাস করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা বৈষম্যের শিকার। গত তিন বছরে কোনো রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীকে সিওওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ দেয়া হয়নি। মুমূর্ষ কোনো রোগীকে শহরতলির হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হয় না। একজন ত্রাণকর্মী বলেন, এটা রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক আচরণ। ২০১১ সালে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর ফলে একনায়কত্ববাদী শাসনের জায়গায় কিছুটা বেসামরিক সরকারে প্রত্যাবর্তন সূচিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা তাদের পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু তাদের সে আশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বেশি সময় লাগেনি।
মিয়ানমারে অন্যান্য সম্প্রদায়ের উন্নতি ঘটলেও রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। আগামী নভেম্বরে মিয়ানমারে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাতে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে সরকারের তরফ থেকে তার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে করা হয়ে গেছে। কারণ রোহিঙ্গাদের ভোটারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য সরকারও রোহিঙ্গাবিরোধী সেন্টিমেন্টকে ভোটের সময় কাজে লাগাতে চায়। অধিকাংশ রোহিঙ্গা যেহেতু ভোটার নন, তাই ভোটের রাজনীতিতে তাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তাই সেখানে এখন উগ্রপন্থী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের খুশি করার চেষ্টা লক্ষণীয়। সরকারি দলের ধারণা, ভোটারদের মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষ বজায় রাখতে পারলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংসান সুচির দলকে পরাজিত করা সহজ হবে। এদিকে মানবাধিকার ও আইনের শাসনের পক্ষে বিভিন্ন সভা, সেমিনারে সুচি গলা ফাটালেও তাকে রোহিঙ্গাদের রক্ষার পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে হাজার হাজার রোহিঙ্গার হৃদয়বিদারক আহাজারি ও কয়েকটি দেশে গণকবর আবিষ্কৃত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিশ্ববাসীর নজর ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার ওপর পড়ে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত এ সঙ্কট নিরসনে সোচ্চার হয়। এশিয়ার যেসব দেশ নিজেদের দায়কে অস্বীকার করে আসছিল এখন তারা সমুদ্রে ভাসমান অসহায় রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে অস্থায়ী ভিত্তিতে থাকতে দিতে রাজি হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং আরও কয়েকটি দেশ রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করার প্রশ্নে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে ওই অঞ্চলের সাধারণ জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন তা জানতে বিবিসি এক সমীক্ষা চালিয়েছে।
ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সমুদ্রে ভাসমান অভিবাসীদের করুণ অবস্থা দেখে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে অস্থায়ী ভিত্তিতে বসবাসের সুযোগ দেয়া উচিত। স্থানীয় পত্রিকা মালয়েশিয়া স্টার লিখেছে, দেশটি ভিয়েতনাম ও বসনিয়ার শরণার্থীদের গ্রহণ করতে পারলেও, রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে পারবে না কেন? তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে ভবিষ্যতে তাদের দেশে শরণার্থীর ঢল নামবে কিনা, সে ব্যাপারেও তারা উদ্বিগ্ন। মালয়েশিয়া মুসলিমপ্রধান দেশ। তাই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে সে দেশের জনগণের তেমন কোনো আপত্তি নেই। দেশটি বিগত বছরগুলোতে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ মানুষ চায় তাদের দেশ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করুক। ইন্দোনেশিয়া নিজ দেশের দরিদ্র্য ও নিরক্ষতা সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ সমস্যাই সেখানকার মানুষে কাছে সবচেয়ে বড়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যা বহুল দেশের পক্ষে বাড়তি মানুষের চাপ বহন করা দুরূহ। অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, সরকার যখন নিজ দেশের মানুষের জন্যই পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে না, সেখানে দেশটি কীভাবে অসহায় রোহিঙ্গাদের ভার বহন করবে? রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের সামান্য সহানুভূতি পর্যন্ত নেই। মিয়ানমার সরকার ও সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধরা মনে করেন, রোহিঙ্গারা প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে এসেছে। তাদের মন্তব্য থেকে মনে হয়, তারা মানব পাচারকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান বলে মনে করে। মিয়ানমারের যেসব সাংবাদিক রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন, তারা সোস্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার শিকার হন। সম্প্রতি একদল নোবেল বিজয়ী অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যার মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তবে মিয়ানমার সরকার নোবেল বিজযীদের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। নোবেল বিজযীদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো অত্যাচার গণহত্যার চেয়ে কম নয়।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারীদের মধ্যে আছেন- দক্ষিণ আফ্রিসার ডেসমন্ড টুটু, ইরানের শিরিন এবাদি ও পূর্ব তিমুরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা। নোবেল বিজিয়ীদের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার সরকার আরও বলেছে, একচোখা হয়ে এ মন্তব্য করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমারে বাস করে। দেশটির সরকার হাজার হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে ঘৃণা করে এবং তাদের নাগরিকত্ব মেনে নিতে চায় না। রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে সরকারের মদদে উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে। ২০১২ সালে উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হামলায় ১ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হন এবং দেড় লাখ গৃহহীন হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর থেকে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার অনুরোধ জানালেও মিয়ানমার সরকার তা অগ্রাহ্য করে আসছে। সম্প্রতি আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরে মানব পাচারকারীদের নৌকায় ভাসমান অবস্থায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীর খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জঙ্গলে অগণিত রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী অভিবাসী এবং সেই সাথে নির্যাতন শিবির ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরই প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পক্ষে জোর দাবি উঠেছে। মিয়ানমার সৃষ্ট এই দুর্গতি ও দুর্দশা কীভাবে দূর করা যাবে? ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশে পুনর্বাসন করে কী এ সঙ্কটের নিরসন হবে? বিশেজ্ঞদের মতে, তা সম্ভব নয়। যেহেতু এ সমস্যার মূলে মিয়ানমার সরকার, তাই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
তবে এ সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশকেও বড় ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী মিয়ানমার, বাংলাদেশের চট্টগ্রামসংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) প্রদেশ। এ প্রদেশে সাধারণত রোহিঙ্গা মুসলমানরা বসবাস করেন। বাংলাদেশের ভাষা ও ধর্মের সাথে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ভাষা ও ধর্মের মিল রয়েছে। তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের করুণ অবস্থার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমার সরকার ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে প্রথমে সোচ্চার হতে হবে। জাতিসংঘ, সার্ক, আইসি, আরব লীগ, আসিয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থায় রোহিঙ্গাদের দুর্গতি ও দুর্দশা তুলে ধরার ব্যাপারে বাংলাদেশকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। -এম এস শহিদ

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button