কক্সবাজারে ৩২ দেশের সমুদ্র মহড়া উদ্বোধন

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। তাই এ অঞ্চলের সমুদ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব সবার। সকলের ঐকান্তিক চেষ্টা না থাকলে সমুদ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ভৌগলিক সীমারেখা রাষ্ট্রকে পৃথক করলেও  দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে এলেই কেবল এটি সম্ভব।
গতকাল সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের ইনানীর রয়েল টিউলিপ হোটেলে ‘ইন্ডিয়ান ওশান  নেভাল সিম্পোজিয়াম- মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড  রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স)’ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেছেন। পরে এ মহড়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
ব্লু ইকোনোমির গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোকে  মেরিটাইম ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন আছি। সাগরের সম্পদ উত্তোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র খাতের উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সাগরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই সমৃদ্ধ এ মেরিটাইম ইকোনোমির উন্নতি হতে পারে। এ কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়াতেও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সরকারের ব্লু ইকোনমি এজেন্ডা বাস্তবায়নে নৌবাহিনী সাগরে ‘অতন্দ্র অভিভাবকের মত’ কাজ করছে। এভাবে সাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ‘আস্থার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ভারতীয় নৌ-বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল সুনীল লানবা। এ সময় প্রধান মন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধান, জাতীয় সংসদ সদস্য, সামরিক ও বে-সামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। ৩২ দেশের সমুদ্র মহড়া উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করেছে কক্সবাজারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
মহড়ায় ৪১টি যুদ্ধজাহাজ, ৩টি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও ৪টি হেলিকপ্টার নিয়ে মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ভারতীয় মহাসাগরীয় ২৩ টি দেশ। এ মহড়ায় পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকছে চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপানসহ ৯টি দেশের প্রতিনিধি।
সূত্র জানায়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কোন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য।
পর্যবেক্ষক ৯টি দেশ হলো- চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন।
উল্লেখ্য, আইওএনএস এর ১ম সম্মেলন ২০০৮ সালে ভারতে, ২য় সম্মেলন ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ৩য় সম্মেলন ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায়, ৪র্থ সম্মেলন ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এবং ৫ম সম্মেলন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনী আইওএনএসের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়। নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী জানুয়ারিতে তার এ দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষের আগে সুযোগ হওয়ায় সম্মেলনটি বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারেই করছেন তিনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button