আযান : তৌহিদের মহা-আওয়াজ

Azanইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ আহমাদ: প্রতিদিন বারবার আমাদের কানে মধুর আযানের ধ্বনি বেজে ওঠে। মসজিদের উঁচু মিনার থেকে লাউডস্পিকার দ্বারা সর্বোচ্চ স্বরে, সর্বোচ্চ তাকবীর ধ্বনি মুসলিম দেশগুলোয় দিনে পাঁচবার করে শোনানো হয়। ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার জামায়াতে শরীক হতে আল্লাহর প্রত্যেক বান্দাহর কানে আযানের ধ্বনি এভাবে উচ্চৈঃস্বরে শোনানো হয় প্রতিদিন। হাদীসে রয়েছে, আযানের আওয়াজ শুনতে পেলেই শয়তান বায়ু নির্গত করতে করতে দৌড়ে পালাতে থাকে। শয়তান স্বভাবের মানুষ যারা আছে, তাদের কাছেও আযানের আওয়াজ বিরক্তি কারণ।
বাংলাদেশের এক কুখ্যাত কবি আযানকে বেশ্যার ডাকের সাথে তুলনা করেছে। অন্যরাও নানান কথা বলে আযানের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলেই কথা বলে। অনেক অমুসলিম দেশে মাইকে আযান দেয়া নিষিদ্ধ।
কোরিয়ার ইথোয়ানের একমাত্র মসজিদে অতি অল্প আওয়াজের আযান শুনে মুয়াজ্জিনকে তার কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি জানালেন, জোরে আযান দেয়া সরকারের নিষেধ আছে। তাহলে আমাদের জানতেই হয় সেই আযানের মধ্যে কি জিনিস লুকিয়ে আছে, যা দ্বারা ঐ শয়তান, কাফের বেদ্বিনরা আযান সহ্য করতে পারে না।
আসলেই আযান বিরল এক যিকির। উচ্চৈঃস্বরে প্রচারিত এক মহা-আওয়াজ। সারা বিশ্বের কোটি কোটি মসজিদের মিনার থেকে এভাবে দিনে পাঁচবার করে আযান দিয়ে আকাশে-বাতাসে তৌহিদ ও রিসালাতের অতুলনীয় ঘোষণা ছড়িয়ে দেয়া হয়। সত্যিই এটা এক বিরল ঘোষণা। এর সাথে তুলনা করতে পারে- এমন কোনো ঘোষণা আর কোনো ধর্ম বানাতে পারে না। বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে এভাবেই একত্ববাদের মহা-পয়গাম মানবজাতির কাছে অনায়াসে পৌঁছে দিচ্ছে।
আযানের প্রথম তাকবীর হলো আল্লাহু আকবার। মানে হলো- আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। দুনিয়া জাহানের শ্রষ্টা, দুনিয়া ও পরকালের শ্রষ্টা, সব দেশের সব রাজা-বাদশাহর উপরে অবস্থিত যেই মালিক তিনি হলেন- আল্লাহ। আল্লাহু আকবার বলে সব শিরক, বিদাত প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহকেই সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও সার্বভৌমতত্বের মালিক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। দুনিয়ার সৃষ্টি, এর নিয়ন্ত্রণ, সব সৃষ্টি জীবের রিযিকসহ সব কল্যাণ-অকল্যাণের একক মালিক আল্লাহ। আল্লাহু আকবার চারবার করে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়, মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য, পরকালে বেহেস্তর জন্য আল্লাহর কাছেই আশ্রয় নিতে হবে। অন্য কোথাও মানুষের শান্তি নেই, সেই ঘোষণা রয়েছে এ আল্লাহু আকবারে। আযানের দ্বিতীয় ঘোষণা হলো- আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ। মানে সাক্ষ্যদিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। যিনি-ই এ ঘোষণায় একমত হয়ে যান, তিনিই তো হয়ে যান মুসলমান।
আল্লাহর অনুগত বান্দাহ হয়ে পুতপবিত্র আল্লাহর প্রিয় দাস হয়ে সেসব শিরক থেকে মুক্ত হয়ে যান। এভাবে দুইবার করে ঘোষক মুয়াজ্জিন এ আওয়াজ তোলেন। এরপর ঘোষণা হয়- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। মানে হলো- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। এটাই সেই রিসালাতের ঘোষণা, যা কালেমা তাইয়্যেবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর এক অংশ। প্রভু আল্লাহর অনুগত দাস হিসেবে নেতৃত্বের মাধ্যম মেনে নিতে হবে এ মুহাম্মদ (সা.) কে। এরপর ঘোষণা হয় হাইয়া আলাস সালাহ। মানে- এসো তোমরা নামাজের জন্য এসো। প্রভু আল্লাহর দরবারে সেজদাহ করে একক আল্লাহর আনুগত্যের প্রমাণ দিতে সবাইকে আহ্বান জানানো হয় এভাবে দুইবার করে। পরে ঘোষণা হয়- হাইয়া আলাল ফালাহ। মানে এসো কল্যাণের জন্য। জীবন-মরণের কল্যাণ এ নামাজেই নিহিত। মুক্তি ও কল্যাণের পিপাসায় যারা কাতর তাদেরই এ নামাজে আসতে হবে।
পুনরায় সেই প্রথম কথা আল্লাহু আকবার দুইবার উচ্চারণ করে মানুষকে বারবার সাবধান করে দেয়া হচ্ছে। আল্লাহই একক ও বিরাট- এ ঘোষণা মানুষের হৃদয়মূলে গেঁথে দেয়া হয় তা হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু। মানে আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই। এটাই নির্ভেজাল তৌহিদের ঘোষণা। আল্লাহর পরিচয় এখানেই। আল্লাহ মানুষের প্রভু। আল্লাহই আমাদের আইন দাতা, বিধান দাতা। আমাদের ওপর সার্বভৌম ক্ষমতাধর একক এ আল্লাহ। আযান এভাবেই সারা বিশ্বে যুগ যুগ ধরে উচ্চ আওয়াজে প্রচারিত হচ্ছে।
মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠে প্রচারিত এ আযান শুনেই লাখো-কোটি মানুষ আল্লাহর দরবার মসজিদে দৌড়ায়। হযরত বিল্লালের সেই আযান শুনে রাসূলসহ (সা.) সাহাবায়ে কেরাম মুগ্ধ হয়ে যেতেন।
চারদিকে শিরক-বিদায়াতের এত আয়োজন প্রতিরোধ সত্ত্বেও এ আযানের মাধ্যমেই একত্ববাদের আওয়াজ মানুষকে আল্লাহর অনুগত বান্দাহর মিছিল এগিয়ে চলেছে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে। আল্লাহর জয়গান গেয়ে চলেছে মানুষ ছাড়াও সব সৃষ্টজীব, গাছ-পালা, তরুলতা। আকাশে-বাতাসে চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button