মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে ব্রিটেনে বিতর্ক

Charlieমতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কী বুঝায়? এর পরিসীমাই বা কত? অথবা মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল এ নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশ ব্রিটেনে। মোট কথা মতপ্রকাশের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে দেশটিতে। বিশেষ করে ফ্রান্সের সাপ্তাহিক ব্যঙ্গ ম্যাগাজিন শার্লি এবদুর ঘটনা এবং পত্রিকাটির পরবর্তী ভূমিকা নিয়ে সারা বিশ্বে একটি ভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর কিছুদিন পরই ব্রিটেনে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজার প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দিয়েছে দেশটির জনগণ।
সম্প্রতি ব্রিটেনের কয়েক হাজার মানুষ বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংজ্ঞা নির্ধারণের জন্য তাদের সরকারের কাছে অবেদন করেছে। দেশটিতে বসবাসকারী মুসলিমদের সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ধর্মের সমালোচনা করার অধিকারের পক্ষে বক্তব্য দেয়ায় ব্রিটেনের মুসলমানরা বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আইন মন্ত্রণালয়ে করা এই আবেদনে ২৫ হাজার লোক সই করেছে। এ আবেদনের মাধ্যমে তারা বাক এবং মতপ্রকাশের বিষয়ে আইনসম্মত একটি সংজ্ঞা চেয়েছে। ওই মন্ত্রণালয়ের এক নারী মুখপাত্র মিসরের অনলাইন পত্রিকা আলআহরামকে জানিয়েছেন, ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিশীল। তবে এ অধিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি দুই বন্ধুকধারীর গুলিতে প্যারিসে শার্লি এবদুর অফিসে এর সম্পাদকসহ ১১ জন নিহত হন। এই ঘটনার পরপরই ‘আমি শার্লি ’ উল্লেখ করে ম্যাগাজিনটি প্রথম পাতায় হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ক্রন্দনরত একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। ফলে বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলোসহ অন্যান্য দেশেও এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়। তাদের এই আচরণকে ‘অপ্রয়োজনীয় উসকানিমূলক’ বলে সমালোচনা করা হয়। খ্রিষ্টান সম্পদায়ের পোপ ফ্রান্সিস শার্লি এবদুর সমালোচনা করে এক মন্তব্যে বলেন, ‘প্রত্যেক ধর্মই মর্যাদাপূর্ণ’ এবং ‘সার্বজনীন কল্যাণ’ সম্পর্কে কথা বলার সময় অবশ্যই বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পোপের এই মন্তব্যের ব্যাপারে ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেন, আমি মনে করি একটি স্বাধীন সমাজে যে কারো ধর্ম নিয়ে সমালোচনার অধিকার রয়েছে। ওই আবেদনে মানহানিকর এবং স্বাধীন মতামতের বিষয়ে একটি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ইসলামের নবী সা:-এর সম্পর্কে কটূক্তিকে ইসলামভীতি না বলে মতপ্রকাশের বা বাকস্বাধীনতা বিবেচনা করা হলে প্রকৃতপক্ষে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমা কতটুকু যা বিশেষ করে প্রকাশক এবং সাংবাদিকদের জন্য প্রয়োজন।
আবেদনটিতে ১০ হাজারের বেশি লোক সই করে। ফলে আইন মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে এর জবাব দেবে বলে আশা করা হয়েছিল। আর আবেদনটিতে যদি এক লাখ লোক সই করত তবে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বিতর্কের জন্য হাউজ অব কমন্সে উত্থাপন করা হতো। এমসিবি বলেছে, মুসলিমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। কিন্তু তাই বলে এই অধিকারের অপব্যবহার করা উচিত নয়।
এমসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, এটি সাধারণ বিষয়, মতপ্রকাশের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই। সরকার, সুশীলসমাজ ও গণমাধ্যমকে পরস্পরের প্রতি সম্মান ও ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য আহবান জানিয়েছে এমসিবি।
মুসলিম এবং অমুসলিমদের যৌথ স্বাক্ষরকৃত আবেদনটি যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। সই করার জন্য আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ থাকবে। আবেদনের নিয়মানুযায়ী শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী এবং দেশটির নাগরিকরা এতে সই করতে পারবে। এমসিবির মুখপাত্র ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের একটি উক্তি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শিরাক বলেছিলেন, কারো ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত লাগে এমন সবকিছু পরিহার এবং যথাযথ দায়িত্ব অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চা করা উচিত।
আল আহরাম অবলম্বনে মীম ওয়ালীউল্লাহ

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button