সাজদাহ্ আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম

Sajdahজান্নাতুল মহল সাজদাহ্: ইসলাম মানে আত্মসমর্পণ। একমাত্র আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ স্মরণে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই সাজদাহ্। সাজদাহ্ এক অনন্য বা অদ্বিতীয় সম্মাননা, যা শুধু আল্লাহরই প্রাপ্য।
মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘সাজদাহ্ করো আল্লাহর জন্য।’৪১. সূরা ফুসসিলাত: ৩৭।
‘তাই, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাজদায় পতিত হও আর তাঁর বন্দেগী করো। [সাজদাহ্] ৫৩. সূরা আন্ নাজম: ৬২
সাজদাহ্ অর্থ- চেহারা মাটিতে রাখা। পারিভাষিক অর্থ-আল্লাহর ‘ইবাদাতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারাসহ সাতটি অঙ্গ মাটিতে রাখা। নাকসহ কপাল, ২ হাত, ২ পা, ২ হাঁটু দ্বারা রাসূল (সাঃ) যেভাবেই সাজদাহ্ দিতে আদিষ্ট হয়েছেন, ঠিক সেভাবেই আদায় করার নাম সাজদাহ্।
সাজদাহর স্থান সর্বঊর্ধ্বে। সাজদার সময় বান্দা আল্লাহর সর্বাধিক নিকটে চলে যায়। তাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক শ্রেষ্ঠ মাধ্যম সাজদাহর। সাজদাহর মানে অবনত হওয়া। সাজদাহ মানে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। সাজদাহ্ মানে আত্মসমর্পণ করা। আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বান্দার মনে জাগ্রত হয় আল্লাহ্ভীতি, বিনয় ও নম্রতা। সাজদাহ্ ব্যতীত কেউ মুসলিম হতেই পারে না। অতএব, সাজদাহ্ ইসলামের মূল ‘ইবাদত। আল্লাহর নৈকট্যলাভের শ্রেষ্ঠ এক মাধ্যম।
মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তুমি সাজদাহ্ করো আর (আল্লাহ্র) নৈকট্য লাভ করো। [সাজদাহ্] ৯৬. সূরা আল ‘আলাক্ব : ১৯।
সাজদার সূচনা: সাজদাহ্ দ্বারা মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)কে সর্বপ্রথম অভ্যর্থনা জানানো হয়। এর দ্বারা মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করে মালাইকাদের প্রতি নির্দেশ দেন আদম (আঃ)কে সাজদাহ্ করার জন্য। ইবলিস ব্যতীত সকল মালাইকা সাজদাহ্ করল।
মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আমি তো তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি, অতঃপর মালাইকাদের (ফেরেশতাদের) নির্দেশ দিলাম আদমকে সাজদাহ্ করার জন্য। তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সাজদাহ্ করল। সে সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না। ৭. সূরা আল আ’রাফ: ১১।
ইবলিস বলল, আদম ‘মাটির’ তৈরি আর আমি ‘আগুনের’। কাজেই মাটির তৈরি মানুষকে আগুনের তৈরি জিন সাজদাহ্ করতে পারে না। সে অহংকার করল। আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করল।
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর ‘ইবাদাত করার জন্যই মানব জাতিকে সৃষ্টি করেন। তাই সাজদাহ্ কখনই আদম (আঃ)-এর জন্য প্রাপ্য ছিল না। বরং তা ছিল মানব জাতির প্রতি অন্যদের সম্মান প্রদর্শন। আল্লাহর নির্দেশ। যেমন-আল্লাহ্ নিদেশ দেন ‘বাইতুল্লাহর’ দিকে সাজদাহ্ দাও। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাকো, ওরই দিকে মুখ ফিরাও।’ ২. সূরা আল বাক্বারাহ্: ১৪৪।
তার অর্থ এই নয় বাইতুল্লাহ বা কা’বা ঘরকে সাজদাহ্ করা বা তার ‘ইবাদাত করা।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, এই (কাবা) ঘরের রবের ‘ইবাদাতা করো’।  ১০৬. সূরা আল-কুরায়শ: ৩।
সাজদাহ্ শুধু আল্লাহ্র প্রাপ্য, আল্লাহ্র জন্য: সাজদাহ্ হলো আল্লাহর প্রাপ্য এবং আল্লাহর প্রতি যাবতীয় ‘ইবাদাতের শ্রেষ্ঠাংশ। নৈকট্য লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম সাজদাহ্। আল্লাহ মানব জাতির জন্য সালাতের মতো একটি ইবাদাতের বিধান দিয়েছেন। অতঃপর সারা বিশ্বের মানুষের সাজদার দিক-নির্দেশনা বা প্রতীক হিসাবে বায়তুল্লাহ বা কা’বা নির্ধারণ করেছেন। ফলে, সমগ্র জগতের মানুষ আল্লাহর আদেশে বায়তুল্লাহকে কিবলা হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। বায়তুল্লাহ ক্বিবলাহ বা দিক, কিন্তু ‘ইবাদাত আল্লাহ্র জন্য। সাজদাহ্ আল্লাহর জন্য। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হলো রাত, দিন, সূর্য আর চন্দ্র। সূর্যকে সাজদাহ্ করো না, চন্দ্রকেও না। সাজদাহ্্ করো আল্লাহ্কে যিনি ওগুলোকে সৃষ্টি করেছেন যদি সত্যিকারভাবে একমাত্র তাঁরই তোমরা ‘ইবাদাত করতে চাও।’ ৪১. সূরা ফুসন্ইসলাত : ৩৭।
সকল সৃষ্টি সাজদাহ্ করে আল্লাহর জন্য: ‘ইন্না লিল্লাহি’ (নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্র জন্য)। ‘আসবাহানা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ’ (মহান আল্লাহর জন্যই আমরা এবং সকল রাজত্ব সকালে উপনীত হই)। আল-হামদুলিল্লাহ- সকল প্রশংসা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য। আর এই প্রশংসা আদায়ে সাজদাহ্ আল্লাহ্র জন্য।
আল্লাহর সৃষ্টি আসমান-জমিন। সবকিছুই মহান আল্লাহ্র জন্য সাজদাহ্ করে- তারা অবনত হয় আর তারা অনুগত এক আল্লাহ্। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আসমানে আর জমিনে যা কিছু আছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র প্রতি সাজদায় অবনত হয় আর তাদের ছায়াগুলোও।’ [সাজদাহ্] ১৩. সূরা র্আ্ রা’দ।
‘তারা কি আল্লাহর সৃষ্টি করা জিনিসের দিকে লক্ষ্য করে না, যার ছায়া আল্লাহ্র প্রতি সাজদার অবস্থায় ডানে-বামে পতিত হয়, আর তারা বিনয় প্রকাশ করে? আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু, মালাইকা (ফেরেশতারা) সমস্তই আল্লাহকে সাজদাহ্ করে; তারা অহঙ্কার করে না।’  ১৬. সূরা আন্ নাহ্ল : ৪৮-৪৯।
‘তৃণলতা গাছপালা (তাঁরই জন্য) সাজদায় অবনত। ৫৫. সূরা আর রহমান : ৬।
উপরের আয়াতগুলো থেকে বুঝা যায় যে, নভোম-ল ও ভূম-লের সবই আল্লাহর জন্য সাজদাহ্ করে। আল্লাহ্ সুবহানাহু তাআলা বার বার বলেন, তারা অহঙ্কার করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, মানুষের মধ্যে কতক তাঁকে (আল্লাহ্কে) সাজদাহ্ করে আর কতক মানুষ যারা (ইবলিসের অনুসারী) অহঙ্কারবশত: সাজদাহ্ করে না।
সাজদাহ্ এক গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত: পৃথিবীর জীবনকে কুরআনে বলা হয়েছে- ‘হায়াতুদ্দুনিয়া’। আর এই দুনিয়া মানুষের জন্য সাময়িক পরীক্ষা কেন্দ্র। জান্নাত থেকে নেমে আসা মানুষ পৃথিবীর পরীক্ষাস্থলে ঈমান ও নেক কাজের পরীক্ষা শেষে আবার প্রত্যাবর্তিত হবে শেষ আবাসস্থল জান্নাতে, অন্যথায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
আল্লাহ্ তা’আলা কেবল মানুষ ও জিন্্ জাতিকে তাঁর ‘ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন, ‘আমি জিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।’ ৫১. সূরা আয্যা-রিয়া-ত: ৫৬।
তাহলে ‘ইবাদাতের জন্য মানুষ সৃষ্টি। ‘ইবাদাতের মধ্যে সর্বোচ্চ তরিকা- সাজদাহ্।
সাজদাহ্ সংক্রান্ত আয়াতগুলো গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই তাঁর ‘ইবাদাত করে। এমনকি আসমান-জমিনের সকলেই আল্লাহর পবিত্র মহিমা ঘোষণা করে, আল্লাহ্কে সাজদাহ করে। তারা অহঙ্কার করে না। মহান আল্লাহ্ বলেন, “তৃণলতা গাছপালা (তাঁরই জন্য) সাজদায় অবনত।”  সূরা আর রহমা-ন : ৬।
“তুমি কি দেখো না, তিনি হলেন আল্লাহ, আসমান ও জমিনে যারা আছে সকলেই যাঁর প্রশংসাগীতি উচ্চারণ করে আর (উড়ন্ত) পাখীরাও তাদের ডানা বিস্তার করে? তাদের প্রত্যেকেই তাদের ‘ইবাদাত ও প্রশংসাগীতির পদ্ধতি জানে, তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে খুবই অবগত।” সূরা আন্ নূর : ৪১।
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সমস্ত জীব ও জড়বস্তু আল্লাহর ‘ইবাদাত করে, সাজদাহ করে, আল্লাহর তসবীহ পাঠ করে। কিন্তু মানুষ ও জিন্ ব্যতীত কারও হিসাব হবে না এবং পরীক্ষাও হবে না। কারণ, মানুষ ব্যতীত কোন জীব ও জড়বস্তুর ক্ষতি করার কোন শত্রু নেই এবং মানুষের মতো তাদের জ্ঞান শক্তিও নেই। মানুষ স্বীয় জ্ঞান দ্বারা তাদের চির শত্রু শয়তানকে প্রতিহত করে আল্লাহর নিদর্শনসমূহ হতে জ্ঞান লাভ করে। জ্ঞান লাভ করে মানুষের এক বিশাল দল কৃতজ্ঞতা আদায়ে আল্লাহর ‘ইবাদাতে আল্লাহর সাজদায় লুটিয়ে পড়েÑ যা ইবলিস করেনি। মহান আল্লাহ বলেন, “যারা তোমার প্রতিপালকের নিকট আছে তারা তাঁর ‘ইবাদাত করার ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে না, তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে আর তাঁর জন্য সাজদাহ্য় অবনত হয়।” (সাজদাহ্)১১৪ সূরা আল আ’রাফ : ২০৬।
“আমার নিদর্শনাবলীতে কেবল তারাই বিশ্বাস করে যাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে আর তারা অহঙ্কার করে না।” (সাজদাহ) সূরা আস সাজদাহ : ১৫।
মহান আল্লাহ বলেন, “আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু ফেরেশতারা, সমস্তই আল্লাহকে সাজদাহ করে; তারা অহঙ্কার করে না।” সূরা আন্ নাহ্ল : ৪৯।
অতএব, সাজদাহকারীর সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য : ১. সাজদাহকারী ঈমানদার বা বিশ্বাসী, ২. সাজদাহকারী অহংকার করে না, ৩. সাজদাহ্কারী আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। অতএব, সাজদাহ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদাত।
সলাতে সাজদাহ্ গুরুত্ব : সলাতে সাজদাহ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সলাতে সাজদাহ একটি বড় রুকন যা ব্যতীত সলাত শুদ্ধ হয় না।
“হে মু’মিনগণ! তোমরা রুকূ’ করো, সাজদাহ করো আর তোমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদাত করো।” সূরা আল হাজ্জ : ৭৭।
আয়াতটিতে সুস্পষ্ট, আল্লাহর নির্দেশ সাজদাহ করো, তোমার রবের ‘ইবাদাত করো। আর এ সাজদাহ, রুকু ‘ইবাদাত সলাতের মধ্যে আদায় করতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, আর তা আল্লাহভীরু ব্যক্তিবর্গ ছাড়া অন্য সকলের কাছে নিশ্চিতভাবে কঠিন।” সূরা আল বাক্বারাহ : ৪৫।
“হে মু’মিনগণ! ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” সূরা আল বাক্বারাহ : ১৫৩।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা অধিক দু’আ করো, সাজদারত অবস্থায় দু’আ কবুল হয়। কারণ, তখন বান্দা আল্লাহ্র অধিক নিকটবর্তী হয়।” সহীহ মুসলিম।
অতএব, সলাতে সাজদার মধ্যে আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাওয়ার উত্তম সময়।
আল্লাহর নৈকট্যলাভে সাজদাহ : আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন, । “আরও সাজদাহ করো, আর নৈকট্য লাভ করো।” সূরা আল ‘আলাক্ব : ১৯।
সাজদার মধ্যে দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। কারণ, সাজদাহ একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। কারণ, সাজদাহ একমাত্র আল্লাহর জন্য।
আবূ হুরাইরাহ (রাযিআল্লাহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহ তা’আলার অধিক নিকটবর্তী হয়, যে অবস্থায় সে সাজদাহরত থাকে। অতএব, তখন তোমরা অধিক দু’আ করতে থাকো। সহীহ মুসলিম হা. ২/২১৬, সুনান আন নাসায়ী- হা. ২/১৪৮।
মানুষ ও জিনের মধ্যে যারা বিনয় ও আনুগত্যের সাথে আল্লাহকে সাজদাহ করে তারা বিশেষভাবে আল্লাহর সন্তোষ লাভ করে। তারাই আল্লাহর নৈকট্যলাভ করবে।
ফলে আখিরাতেও তারা আল্লাহর নৈকট্য পাবে ইনশা-আল্লাহ। মহান আল্লাহ বলেন, “মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর যে সব লোক তার সঙ্গে আছে তারা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের পরস্পরের প্রতি দয়াশীল। তাদেরকে তুমি দেখবে রুকূ’ ও সাজদায় অবনত অবস্থায়, তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে নিয়োজিত। তাদের চিহ্ন হলো, তাদের মুখমন্ডলে সাজদার প্রভাব পরিস্ফূট হয়ে আছে।” সূরা আল ফাতহ : ২৯।
সহীহুল বুখারী’র হাদীসে বর্ণিত যে, “কিয়ামতের দিন এক সময় আল্লাহ লোকদেরকে বলবেন, আমি তোমাদের রব। সবাই বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। (সেই সময়) নাবীগণ ছাড়া আর কেউ তাঁর সাথে কথা বলবে না। আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, “তোমরা কি তাঁর (আল্লাহর) কোন চিহ্ন জান? তারা বলবে “সাক বা পায়ের নলা”র তাজাল্লী”। সেই সময় ‘সাক’ খুলে দেয়া হবে।  তখন সব ঈমানদার ব্যক্তি সাজদায় পড়ে যাবে।
তবে যারা দুনিয়ায় প্রদর্শনীর জন্য আল্লাহকে সাজদাহ করত তারা থেকে যাবে। তারা সেই সময় সাজদাহ করতে চাইলে, তাদের মেরুদন্ড শক্ত হয়ে একটি তক্তার ন্যায় হয়ে যাবে (তাই তারা সাজদাহ করতে পারবে না)।
অতএব সুস্পষ্ট, দুনিয়ায় যারা আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাজদাহ আদায় করত, যারা ঈমানদার, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধানে নিয়োজিত, তাদের চিহ্ন হলোÑ তাদের মুখমন্ডলে সাজদার প্রভাব পরিস্ফুট, তারাই কেবল কিয়ামতের দিন আল্লাহকে সাজদাহ করবে। আল্লাহু আকবর!
সাজদাহ্র পদ্ধতি-রাসূল (সাল্লাল্লাহু “আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দেখানো পদ্ধতি : মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান জীব। বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা মানুষকে তাঁর ‘ইবাদাত করার জন্য যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানব জীবনের প্রতিটি ভাল কাজ তখনই ‘ইবাদাত যখন তা আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর রাসূলের শিখানো পদ্ধতিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” সূরা আল আহযাব : ২১।
অতএব সুস্পষ্ট, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দেখানো বা শিখানো পদ্ধতিই ‘ইবাদাত। সাজদাহ্ তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেভাবে সাজদাহ্ করেছেন সাতটি অঙ্গ দ্বারা আমাদেরকেও সেভাবেই সাতটি অঙ্গে সাজদাহ দিলে তা কবুলযোগ্য হবে ইনশা-আল্লাহ। আর তা না হলে তা ‘ইবাদাত হিসাবে গণ্য হবে না বরং তা নষ্ট হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য করো আর রাসূলের আনুগত্য করো আর (তা না করে) তোমাদের ‘আমালগুলোকে নষ্ট করে দিও না।” সূরা মুহাম্মাদ: ৩৩।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনায় সাজদাহ্: ঈমানদার ব্যক্তির জন্য সাজদার গুরুত্ব অপরিসীম। মু’মিনরা আল্লাহ্কে সাজদাহ্ করতে ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে দ্বিধাবোধ করে না। মহান আল্লাহ্ বলেন, “দাউদ বুঝতে পারল আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। তখন সে তার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল, সাজদায় লুটিয়ে পড়ল ও তার পানে ফিরে আসল।” (সাজদাহ্) সূরা সাদ : ২৪।
প্রকৃতপক্ষে, সাজদার সময় দয়াশীল ও ক্ষমাশীল আল্লাহর কাছে দয়া-ক্ষমা, করুণা, অনুগ্রহ, রহমাত, ভালোবাসা প্রভৃতি লাভ করার আশাও করা হয়। উল্লিখিত আয়াতে দাউদ (আলায়হিস সালাম)-এর ক্ষমা প্রার্থনা ও সাজদায় লুটিয়ে পড়া একটি তাৎপর্যময় উদাহরণ। তিনি একজন নাবী হয়েও তার পরীক্ষায় ভীত হয়ে পড়েছিলেন। সাজদাহ কত গুরুত্বপূর্ণ ও মহামূল্যবান তা ইবলিস জানত। ইবলিস একজন জিন। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে ‘ইবাদাতের জন্য। সে ছিল খুব বুদ্ধিমান ও পরহেজগার। এ কারণে, মালাইকাদের সাথে জান্নাতে থাকত। মালাইকাদের সৃষ্টি শুধু আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য, তাই মালাইকাগণ আদম (আলায়হিস সালাম)কে সাজদাহ্ করেনি। ফলে তার পরিচয় সে অকৃতজ্ঞ। যারা ইবলিসের মতো অকৃতজ্ঞ তাদের সবাইকে আল্লাহ্ জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” এ বিষয়ে কুরআনে মহান আল্লাহ্ ও ইবলিসের কথপোকথনে বর্ণিত, “তারপর আমি (শয়তান) তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না। তিনি (আল্লাহ্) বললেন, ধিকৃত আর বিতাড়িত হয়ে এখান থেকে বেরিয়ে যা, তাদের মধ্যে যারা তোমাকে মান্য করবে তোমাদের সবাইকে দিয়ে আমি অবশ্যই জাহান্নাম ভর্তি করব। সূরা আল আ’রাফ : ১৭-১৮।
অতএব, কৃতজ্ঞতা আদায়ে সাজদাহ্ অনেক বড় ‘ইবাদাত। অতএব, এই ‘ইবাদাতের মধ্য দিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উত্তম।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাজদার মধ্যে কৃতজ্ঞতা আদায় ও ক্ষমা প্রার্থনার দু’আ শিখিয়ে দিয়েছেন “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহম্মাগফিরলী।” “হে আল্লাহ! আমাদের রব! আমরা আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।” সহীহুল বুখারী- ডা. ৭৯৪, সহীহ মুসলিম- হা. ৪৮৪।
মহান আল্লাহ্ বলেন, “বলো, “তোমরা কুরআনে বিশ্বাস করো কিংবা বিশ্বাস না করো, ইতোপূর্বে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদেরকে যখন কুরআন পাঠ করে শুনানো হয়, তখন তারা অধোমুখে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে।’ আর তারা বলে, “আমাদের রব্ব মহান, পবিত্র; আমাদের রব্বের ওয়া’দা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তারা কাঁদতে কাঁদতে অধোমুখে সাজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তা তাদের বিনয় আর নম্রতা বাড়িয়ে দেয়। (সাজদাহ্) সূরা ইসরা : ১০৭-১০৯।
আয়াতটিতে সুস্পষ্ট, কুরআন পাঠ শনে তারা কৃতজ্ঞতা আদায় সাজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। আর কাঁদতে কাঁদতে তারা সাজদায় লুটিয়ে পড়ে।
যারা সাজদাহ্ করে না: অন্যদিকে আরেক দল আল্লাহ্কে বা আল্লাহর অসীম নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে। ফলে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের প্রতি চরম অসন্তুষ্ট হবেন। তারা কুরআনের পাঠ শুনে আল্লাহ্কে সাজদাও করে না, আত্মসমর্পণও করে না। তাদেরকে আল্লাহ্ অহঙ্কারী বলেছেন, অবাধ্য বলেছেন। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন, “অতএব তাদের কী হলো যে তারা ঈমান আনে না? আর তাদের কাছে যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন সাজদাহ্ করে না।” (সাজদাহ্) সূরা আল ইনশিক্বা-ক্ব : ২০-২১।
“তাদেরকে যখন বলা হয় ‘রহমান’-এর উদ্দেশে সাজদায় অবনত হও, তারা বলে ‘রহমান’-এর উদ্দেশে সাজদায় অবনত হও, তারা বলে ‘রহমান আবার কী? আমাদেরকে তুমি যাকেই সাজদাহ্ করতে বলবে আমরা তাকেই সাজদাহ্ করব না-কি?’ এতে তাদের অবাধ্যতাই বেড়ে যায়।” (সাজদাহ্) সূরা আল ফুরক্বা-ন : ৬০।
“যেদিন (কিয়ামতে) পায়ের গোছা (হাঁটুর নিম্নভাগ) উন্মোচিত হবে আর তাদেরকে ডাকা হবে সাজদাহ করার জন্য, কিন্তু তারা সাজদাহ্ করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমান লাঞ্ছনা তাদের উপর চেপে বসবে। (দুনিয়াতে) তারা যখন সুস্থ ও নিরাপদ ছিল তখনও তাদেরকে সাজদাহ্ করার জন্য ডাকা হত (কিন্তু তারা সাজদাহ্ করত না), কাজেই ছেড়ে দাও আমাকে আর তাদেরকে যারা এ বাণীকে অস্বীকার করেছে। আমি তাদেরকে ক্রমে ক্রমে, আস্তে আস্তে এমনভাবে ধরে টান দিব যে, তারা একটু টেরও পাবে না।”
সাজদাহ্ না করার পরিণতি: মহান আল্লাহ্ বলেন, “তিনি বলেন, “নেমে যা এখান থেকে, এর ভিতরে থেকে অহঙ্কার করবে তা হতে পারে না, অতএব বেরিয়ে যা, অধমদের মাঝে তোর স্থান।” সে বলল, ‘তাহলে যেদিন সবাই (দুনিয়া ছেড়ে) উঠবে সেদিন পর্যন্ত আমাকে সময় দাও।’ তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তুই নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। সে বলল, যেহেতু তার কারণেই (পথ থেকে) আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ, কাজেই আমি অবশ্যই তোমার সরল পথে মানুষদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকব। তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব, তুমি তাদের অধিকাংশকেই শোকর আদায়কারী পাবে না। তিনি বললেন, ধিকৃত আর বিতাড়িত হয়ে এখান থকে বেরিয়ে যা, তাদের মধ্যে যারা তোকে মান্য করবে তোদের সবাইকে দিয়ে আমি অবশ্যই জাহান্নাম ভর্তি করব।” সূরা আল-আ’রাফ : ১৩-১৮।
আয়াতটিতে সুস্পষ্ট, ইবলিস সাজদাহ্ না করার কারণে বা আল্লাহর নির্দেশ পালন না করার কারণে, জান্নাত থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। অধমদের মাঝে তার স্থান। তখন সে অবকাশ চায়Ñ যে মানুষের কারণে তার এ অবস্থা সেই মানুষকে সে তার দলে অন্তর্ভুক্ত করবে। তাদের মধ্যে যারা শোকর আদায় করবে না, ইবলিসের মতো সাজদাহ দিবে না, আল্লাহ্র নির্দেশ অমান্য করবে তাদের সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ব করা হবে। মহান আল্লাহ্ বলেন,
‘তুমি কি দেখো না! যে আল্লাহকে সাজদাহ্্ করে যারা আকাশে আছে, আর যারা পৃথিবীতে আছে আর সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, পর্বতসমূহ, বৃক্ষরাজি, জীবজন্তু এবং মানুষের মধ্যে অনেকে? আর অনেকের প্রতি শাস্তি সাব্যস্ত হয়ে গেছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করতে চান, তাকে সম্মানিত করার কেউ নেই। আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।’ [সাজদাহ্] ২২. সূরা আল হাজ্জ : ১৮।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘একদলকে তিনি সঠিক পথ দেখিয়েছেন, আর অন্য দলের প্রতি গোমরাহী নির্ধারিত হয়েছে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক করে নিয়েছে আর মনে করছে যে তারা সঠিক পথে আছে।’ ৭. সূরা আল আ’রাফ : ৩০।
সাজদার মূল্যায়নে জান্নাত : আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘আদম সন্তান যখন সাজদার আয়াত পাঠ করে অতঃপর সাজদাহ্ করে, শয়তান তখন সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, হায়! তাকে সাজদাহ্ করতে বলা হয়েছে, সে সাজদাহ্ করেছে, তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সাজদাহর আদেশ করা হয়েছে, আমি অবাধ্য হয়েছি, তাই আমার জন্য জাহান্নাম ধার্য্য হলো।’ সহীহ মুসলিম, সুনান ইবনু মাজাহ্, মুসনাদ আহমাদ মাদান ইবনু আবু তালহাহ্ ইয়া’মারী(রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল(সা:)-এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান(রা:)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো ।
আমি বললাম,আপনি আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যার উপর আমল করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাত দান করবেন । কিংবা আপনি আমাকে আল্লাহর একটি প্রিয়তম আমলের সংবাদ দিন। তিনি নীরব রইলেন। আমি আবার বললাম। তিনি এবারও কিছু বললেন না।অত:পর আমি তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহর উদ্দেশ্যে তুমি অধিক সাজদাহ্ করো। এর দ্বারা আল্লাহ তোমার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমার একটি পাপ মোচন করে দিবেন। মাদান বলেন, আমি দারদাহ্ (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে একই প্রশ্ন করলাম।
সাওবান আমাকে যা বলেছেন, তিনিও আমাকে অনুরূপ বলেছেন। [সহীহ মুসলিম, মিশকা-তুল মাসা-বীহ-হা-৮৩৭]।
* রাবী’আহ ইবনু কা’ব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসূল (সা.)-এর সাথে রাত যাপন করতাম। একদা আমি তার জন্য ওযূ ও ইস্তেঞ্জা করার জন্য পানি আনলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পার। তখন আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি আপনার সাথে জান্নাতে থাকতে চাই। রাসূল (সা.) বললেন, ওটা ছাড়া আর কিছু চাও কি? আমি বললাম, এটাই চাই। রাসূল (সা.) বললেন, ‘তাহলে বেশি বেশি সাজদার দ্বারা তুমি এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো।’ [সহীহ মুসলিম-হা-৪৮৯, মিশকা-তুল মাসা-বীহ-হা. ৮৩৬]।
নাবী (সা.) বলেছেন, আমার যে কোন উম্মাতকে কিয়ামতের দিন আমি চিনে নিতে পারব। সাহাবীগণ বললেন, এতসব সৃষ্টিকূলের মধ্যে আপনি তাদেরকে কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, ‘তুমি যদি কোন আস্তাবলে প্রবেশ করো যেখানে কালো ঘোড়ার মধ্যে এমনসব ঘোড়া থাকে যার হাত পা ও মুখ ধবধবে সাদা হয়, তবে কি তুমি উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না? সাহাবীদের সবাই বললেন, হ্যাঁ, পারব। তিনি বললেন, ‘ঐদিন সাজদার কারণে আমার উম্মাতের চেহারা সাদা ধবধবে হবে। আর ওযূর কারণে, হাত-পা উজ্জ্বল সাদা হবে। [মুসনাদ আহমাদ, সিলসিলা সহীহাহ্-হা. ২৮৩৬]।
তারা তাদেরকে সাজদার চিহ্নসমূহ দেখে চিনে নিবেন। আল্লাহ জাহান্নামের আগুনকে ঈমানদারের সাজদার চিহ্নসমূহ জ্বালানো হারাম করে দিয়েছেন। এভাবে চিহ্ন দেখে তাদেরকে তারা বের করবেন। [সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম]।
অতএব, সাজদার মূল্যায়নে সাজদার চিহ্নসমূহে জাহান্নামের আগুন হারাম। সাজদার মূল্যায়নে জান্নাত।
পরিশেষে : মানুষ আল্লাহকে সাজদাহ্ করেও অন্য পাপের কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। অতঃপর এক সময় আল্লাহর দয়ায় সাজদার কারণে জাহান্নাম হতে রক্ষা পাবে। কিন্তু যারা জীবনে কখনও সাজদাহ্ করেনি তারা কখনও জাহান্নাম হতে নাজাত পাবে না। জাহান্নামে চিরস্থায়ী বসবাসের অনেক কারণ বা অপরাধ আছে, তন্মধ্যে আল্লাহকে সাজদাহ্ না করা বা আল্লাহর নিদর্শনসমূহে অস্বীকার করা অন্যতম।
জাহান্নাম নয়, আমাদের চাওয়া জান্নাত। আমাদের গন্তব্যস্থল-জান্নাত। অতএব, আসুন! জীবনের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর উপর আশা-ভরসা করে বিনয় ও নম্রতার সাথে একমাত্র আল্লাহকে সাজদাহ্ করি আর সাজদাহর মধ্যে দু’আ করি, ‘হে আল্লাহ! এই সাজদাহর বদৌলতে আপনার নিকট আমার জন্য প্রতিদান লিখে রাখুন, এর দ্বারা আমার পাপসমূহ মুছে দিন। এটাকে আপনার কাছে সঞ্চয় হিসাবে জমা রাখুন। আর একে আমার পক্ষ থেকে কবূল করুন, যেমন কবূল করেছেন আপনার বান্দা দাঊদ (আ.)-এর পক্ষ থেকে। [সুনান আত্ইতরমিযী-২/৪৭৩]।
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সাজদাহ্ করছি, আপনার উপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই নিজেকে সঁপে দিয়েছি। আমার মুখম-ল সাজদাহে অবনত সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দিয়েছেন। [সহীহ মুসলিম- হা. ১/৫৩৪]।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘(জান্নাতে প্রবেশ করে) তারা বলবে- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি তাঁর ওয়াদাকে সত্যিকারভাবে পূর্ণ করেছেন, আর আমাদেরকে (জান্নাতের) জমিনের অধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা জান্নাতের যেথায় ইচ্ছে বসবাসের জায়গা করে নিতে পারি। সৎকর্মশীলদের প্রতিফল কতই না উত্তম!’ ৩৯. সূরা আয্-যুমার : ৭৪। আল্লাহুম্মা আমীন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button