সহশিক্ষা মুসলিম মেয়েদের ধর্ম ত্যাগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

ধর্মীয় বিদ্বেষ, জনগণকে বিভক্ত করার খেলা ভারতকে ধ্বংস করবে

ভারতীয় মুসলমান কিংবা যেকোনো নাগরিকের সাথে বেইনসাফি ও বৈষম্যমূলক আচরণ অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানি। তিনি বলেছেন, দেশে একদিকে ধর্মীয় উগ্রবাদের ইন্ধন দেয়া হচ্ছে এবং জনগণের মস্তিস্কে ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে দেয়ার কুৎসিত সিলসিলা খুব জোরালোভাবে অব্যাহত রয়েছে, অপরদিকে শিক্ষা ও রাজনীতিতে মুসলমানদের কোণঠাসা করতে মারাত্মক পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে জনগণকে বিভক্ত করার এ খেলা দেশকে ধ্বংস করবে।
গত রোববার নয়াদিল্লিতে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ভারতীয় মুসলমানরা বর্তমান যে সঙ্কটময় অবস্থার সম্মুখীন, সেদিকে ইঙ্গিত করে সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মাদানি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, বিগত কয়েক বছর দেশের অর্থনীতি খুবই দুর্বল এবং বেকার সমস্যাও আরো প্রকট হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনরা উন্নয়নের ঢোল পেটাচ্ছে এবং এই অস্থির পরিবেশে পক্ষপাতদুষ্ট মিডিয়া তাদের খেলায় সঙ্গ দিচ্ছে।
দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন মাওলানা আরশাদ মাদানির দাবি- অর্থনীতি ও বেকার সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দিতেই ক্ষমতাসীনরা ধর্মীয় উগ্রবাদ বৃদ্ধির চক্রান্ত করে যাচ্ছে। মাওলানা মাদানি বলেন, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে জনগণকে বিভক্ত করার এই খেলা দেশের ধ্বংস ডেকে আনবে। ধর্ম ইস্যুর পর্দা দিয়ে দেশের প্রকৃত পরিস্থিতি থেকে জনগণের দৃষ্টি বেশিদিন আবৃত করে রাখা যাবে না।
প্রবীণ খ্যাতিমান এ আলেম মনে করেন, রুটি-কাপড়-বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা। সরকার যদি রাজনৈতিক ঘৃণার বদলে বেকার সমস্যা দূর করণে মনোযোগী না হয় এবং শিক্ষিত যুবকদের চাকরি না দেয়- তাহলে সেই দিন বেশি দূরে নয়- যেদিন জাতির শ্রেষ্ঠ এ সন্তানেরা প্রতিবাদী হয়ে রাস্তায় নেমে আসবে। আসাম, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড রাজ্যে মুসলমানদের ভূমিহীন করার যে ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করা হচ্ছে, তার কঠোর নিন্দা জানান মাওলানা আরশাদ মাদানি।
তিনি বলেন, আসামে ‘সরকারি জমি’ দখল করার অভিযোগে সেখানে শত শত বছর ধরে বসবাসরত মুসলিম বসতিগুলোকে উৎখাত করা হচ্ছে, মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরে মহাকবের সামনে পার্কিং লট নির্মাণের জন্য মুসলমানদের গৃহহীন করার পরিকল্পনা চলছে এবং উত্তরাখণ্ডে হরিদ্বারে রেলপথ প্রশস্ত করার আড়ালে ৪৩টি মুসলিম এবং কিছু অমুসলিম পরিবারকে বাস্তুচ্যুত করার প্রচারণা শুরু হয়েছে। যদিও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে, কিন্তু হুমকি রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এটা কি ইনসাফ ও ন্যায়বিচার- যে লোকেরা কয়েক দশক ধরে এখানে বসতি স্থাপন করেছে, তাদের বাস্তুচ্যুত করা, তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দেয়া এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিকল্প জমি না দেয়া?
মাওলানা আরশাদ মাদানি বলেন, সহশিক্ষা মুসলিম মেয়েদের ‘ধর্মত্যাগ’ এর দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং এটি রোধ করতে আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত। ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া ধর্মত্যাগের প্রলোভনকে বিপদ হিসেবে আখ্যায়িত করে মাওলানা মাদানি বলেন, ‘এটি পরিকল্পিতভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে, যার আওতায় আমাদের মেয়েদের টার্গেট করা হচ্ছে’।
‘এ ফিতনা রোধে অবিলম্বে ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনে পরিস্থিতি বিস্ফোরক হয়ে উঠতে পারে এবং সহশিক্ষা ব্যবস্থার কারণে এ প্রলোভন জোরদার হচ্ছে, আর সে কারণেই আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম। তারপর মিডিয়া আমাদের উপস্থাপন করে, নেতিবাচক দিকনির্দেশ করে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন যে, মাওলানা মাদানি মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে, আমরা সহ-শিক্ষার বিরুদ্ধে, আমরা মেয়েদের শিক্ষার বিরুদ্ধে নই’।
মাদানি বলেন, ‘আমরা যা করতে পারি না কেন, জাতির কল্যাণ ও তাদের শিক্ষাগত উন্নয়নের জন্য আমাদের এখনই করতে হবে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতি হিসেবে আমরা ইতিহাসের অত্যন্ত সঙ্কটময় মোড়ে রয়েছি।
তিনি অভিযোগ করেন, একদিকে যেমন আমরা নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছি, অন্যদিকে আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমাদের এই নীরব ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করতে হয় এবং সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হয়, তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে’। তিনি বলেন, ‘জাতির ইতিহাস সাক্ষী যে, প্রতিটি যুগে শিক্ষাই অগ্রগতির চাবিকাঠি।
‘সুতরাং আমাদের সন্তানদের শুধু উচ্চশিক্ষার দিকেই আকৃষ্ট করতে হবে না, তাদের মধ্যে থেকে হীনমন্যতা দূর করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করতে হবে এবং এভাবেই আমরা আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে পারি। বৈঠকে জমিয়ত ওলামায়ে হিন্দের লিগ্যাল সেলের লড়াই করা মামলাগুলোর অগ্রগতিও পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে আসামের নাগরিকত্ব আইন এবং দেশে উপাসনার স্থান সুরক্ষা আইন বহাল রাখার গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে। প্রটেকশন অফ প্লেস অফ ওয়ার্শিপ অ্যাক্ট, ১৯৯১ রক্ষার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করে জমিয়ত সংস্থাটি একটি আবেদন করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button