টার্কিশ এয়ারলাইন্সে এখন রেকর্ড সংখ্যক মহিলা পাইলট

মহিলা পাইলটের সংখ্যার ক্ষেত্রে তুরস্কের জাতীয় পতাকাবাহী টার্কিশ এয়ারলাইন্স (টিএইচওয়াই) রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এই এয়ারলাইন্সে ২০০৫ সালে মহিলা পাইলটের সংখ্যা ছিলো মাত্র ৬ জন। বর্তমানে ২১১। এসব মহিলা পাইলট সব ধরণের বিমান পরিচালনা করে থাকেন। স্বল্প ও দীর্ঘ দুরত্বের। টিএইচওয়াই হচ্ছে বিশ্বে সবচেয়ে বেশী মহিলা পাইলট রয়েছে এমন এয়ারলাইন্সসমূহের অন্যতম। এর মহিলা ক্যাপ্টেনের সংখ্যা ৩৯ এবং ফার্স্ট অফিসার ১৭২ জন। এছাড়া আরো আছেন প্রশিক্ষণ গ্রহণরত কর্মকর্তা। এসব পাইলট তুরস্কসহ সারা বিশ্ব থেকে সংগৃহীত।

ত্রিশের দশকে তুরস্কের বিমান চলাচলের ইতিহাসে প্রথম তুর্কি মহিলা পাইলট ছিলেন বেদ্রিই তাহির গোকমেন। এরপর আসেন তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্কের দত্তক কন্যারা, যারা ১৯৩৯ সালে বিশ্বের প্রথম মহিলা কমব্যাট পাইলট বিবেচিত হন। যা-ই হোক, ১৯৯৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত তুরস্কে মহিলা পাইলটরা বানিজ্যিক এয়ারলাইন্সে যোগদান করেননি। ১৯৯৩ সালে এমেল আরমান দেশের বানিজ্যিক এয়ারলাইন্সে প্রথম মহিলা ক্যাপ্টেন হন। তিনি ১৯৯৭ সালে এয়ারবাস-৩৪০ বিমানের ফার্স্ট অফিসারের আসনে বসে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে গিয়ে পৌঁছেন। এভাবে মহাসাগর পাড়ি দেয়া প্রথম তুর্কী পাইলট হিসেবে তিনি ইতিহাসে নিজের নাম লিখিয়ে নেন।

ফ্লাইট প্রশিক্ষণের পর বেসামরিক লোকজন ও মহিলা পাইলটেরা তুরস্কের বেসামরিক বিমান চলাচলের জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেন। অথচ আগে শুধু টার্কিশ বিমান বাহিনীর লোকজনই এতে ঢোকার সুযোগ পেতেন। টিএইচওয়াই এর জনৈক ক্যাপ্টেন, যার স্বামীও একজন পাইলট, জোর দিয়ে বলেন, মাঝে মাঝে কিছু বিমানযাত্রী মহিলাদের পাইলটের আসনে দেখে অবাক হন, যদিও ইদানীং মহিলা পাইলটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যখন তারা আমাদের কেবিন ক্রুদের প্রতি তাদের বিস্ময় ও আনন্দের কথা প্রকাশ করেন, তখন অবশ্যই আমাদের আনন্দ হয়। ফ্লাইট শেষে যাত্রীরা আমাদের উদ্বুদ্ধকরণের উৎস হিসেবে কাজ করেন, যখন তারা তাদের আনন্দ ও আবেগ প্রকাশ করেন।

৩২ বছর বয়সী দিদেম বায়রাকদার টার্কিশ এয়ারলাইন্সে গত ২ বছর যাবৎ একজন ফার্স্ট অফিসার হিসেবে বিমান পরিচালনা করছেন। তিনি তুরস্কের ইয়েদিতেপি ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রোনিক ইঞ্জিনীয়ারিং বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে বিদেশে মাস্টার্স করেন।

তিনি বলেন, আমি একজন পাইলট হতে চেয়েছিলাম। আমার পরিবারের সমর্থন নিয়ে আমি একটি প্রাইভেট ফ্লাইট স্কুলে আমার পাইলট প্রশিক্ষন সম্পন্ন করি। বর্তমানে আমি টার্কিশ এয়াররাইন্সের ৭৩৭ বিমান বহরে একজন ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কাজ করছি।

দিদেম বায়রাকদার আরো বলেন, টিএইচওয়াই এর একজন পাইলট হিসেবে আমি আসলেই আনন্দিত এবং গর্বিত। টার্কিশ এয়াররাইন্স তুরস্ক ও গোটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ এয়ারলাইন্সগুলোর অন্যতম। আমি দেখতে পাই বোর্ডিং ব্রিজ কিংবা সিঁড়ি দিয়ে আসা যাত্রীরা আমাকে দেখে মুচকি হাসে, শিশুরা হাত নাড়ে। এটা আমার সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত।

২৮ বছর বয়সী ইরেম পয়রাজ টার্কিশ এয়ারলাইন্সে গত ২বছর যাবৎ কাজ করছেন একজন ফার্স্ট অফিসার হিসেবে। তার পিতা একজন পাইলট ছিলেন। তিনি বিমানগুলোতেই বেড়ে ওঠেছেন। পায়রাজ বলেন, এই বিমানই ছিলো আমার শৈশব। আমি ভাবতাম ভবিষ্যতে এটাই হবে আমার সবচেয়ে ভালো চাকুরী।

তিনি বলেন, আমরা অনেক গন্তব্যে যাই, এটা আমাকে গর্বিত করে, কারণ আমরা জাতীয় পতাকা বহন করি এবং টিএইচওয়াই সারা বিশ্বে পরিচিত। ইরেম আরো বলেন, আমি সবাইকে পাইলট হতে সুপারিশ করি। আমাদের পুরুষ সহকর্মীরা অধিক পরিশ্রমী এবং আমরা তাদের কাছ থেকে, বিশেষভাবে, আমাদের ক্যাপ্টেনদের নিকট থেকে প্রচুর সহায়তা পাই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button