আল-কুরআন সঠিক পথের দিশারী

জান্নাতুল মহল: বিস্ময়কর এ গ্রন্থ-কুরআন যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা আল্লাহর বাণী বা ওহী। নিশ্চয় এই কুরআন সঠিক পথের দিশারী, সঠিক পথ নির্দেশ।
আল্লাহর বাণী বা কুরআন অবতীর্ণ- আল্লাহর নিকট হতে। ‘আযীযুল হাকীম-আল্লাহর নিকট হতে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে মহাপরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে।” [৪৫নং সূরা আল জা-সিয়াহ-২ এবং ৪৬নং সূরা আল আহক্বা-ফ : ২]।
‘অবশ্যই এ কুরআন জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। [২৬নং সূরা আশ শু’আরা : ১৯২] ‘এটা ঐ (মহান) কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ।’ [২নং সূরা আল বাক্বারাহ : ২] আয়াতটিতে সুস্পষ্ট সম্পূর্ণ সন্দেহমুক্ত এই কিতাব, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এর নিকট থেকে অবতীর্ণ, এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই আবার এই কিতাবের বাণী আল্লাহর সে ব্যাপারেও কোন সন্দেহ নেই। আর সন্দেহ নেই- এই কিতাব মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ। সঠিক পথের দিশারী।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার প্রতি যা নাযিল করেছি তাতে তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার মতো কোন সূরা এনে দাও আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে আহ্বান করো।’ [২নং সূরা আল বাক্বারাহ : ২৩] ‘বলো, ‘এ কুরআনের মতো একখানা কুরআন আনার জন্য, যদি সমগ্র মানব আর জিন একত্রিত হয় তবুও তারা তার মতো আনতে পারবে না, যদিও তারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে।’ [১৭নং সূরা ইসরা : ৮৮] সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। মানুষ বা জিন জাতি একত্রিত হয়ে চেষ্টা করলেও এমন কিতাব কখনই আনতে পারবে না। অতবএ, আমাদের দায়িত্ব এই কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
এই কিতাব কার মাধ্যমে প্রেরিত? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, ‘বিশ্বস্ত আত্মা (জিবরাঈল) একে নিয়ে অবতরণ করেছে।’ [২৬নং সূরা আশ্ শু’আরা : ১৯৩] আয়াতটিতে সুস্পষ্ট, জিবরাঈল (আ.) কুরআনের বাণী নিয়ে অবতরণ করেছেন। জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর প্রেরিত দূত বা ম্যাসেঞ্জার। কুরআনে এই ম্যাসেঞ্জারকে ‘মালাইকা’ বলা হয়েছে। আর সব মালাইকাদের সর্দার জিবরাঈল (আ.)  রুহুল আমীন। তার মাধ্যমে আল্লাহ কুরআনের বাণী পাঠান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, ‘শয়তানরা তা (অর্থাৎ কুরআন) নিয়ে অবতরণ করেনি।’ [২৬নং সূরা আশ্ শু’আরা : ২১০] “তারা এ কাজের যোগ্য নয় আর তারা এর সামর্থ্যও রাখে না।” [২৬নং সূরা আশ্ শু’আরা : ২১১] এই কিতাব কার ওপর অবতীর্ণ হয়? কি উদ্দেশ্যে? আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর এই কুরআন অবতীর্ণ হয়।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এগুলো হলো আল্লাহর আয়াত যা সত্যতা সহকারে তোমার কাছে তিলাওয়াত করা হচ্ছে। কাজেই তারা আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের (ওপর বিশ্বাস না করলে এর) পর আর কোন্ কথায় বিশ্বাস করবে? [৪৫নং সূরা আল জা-সিয়াহ : ৬] ‘এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল করেছি যাতে তুমি উম্মুল কুরা (মাক্কাহ শহর) ও তার চারপাশে যারা আছে তাদের সতর্ক করতে পার, আর সতর্ক করো একত্রিত হওয়ার দিন সম্পর্কে, যে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। (একত্রিত হওয়ার পর) এক দল যাবে জান্নাতে, আরেক দল যাবে জাহান্নামে’। [৪২নং সূরা আশ্ শূরা : ২১১] ওপরের আয়াতগুলোতে সুস্পষ্ট, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর নাবীকে বলেন, এই কিতাবের আয়াত বা বাণী যা সত্যতা সহকারে তোমার কাছে তিলাওয়াত করা হচ্ছে। কাজেই মানুষরা আল্লাহ ও তাঁর আয়াত বা বাণীর ওপর বিশ্বাস করবে। আর তা আরবী ভাষায়, যাতে তারা সহজে বুঝে। সতর্ক হতে পারে। আর এই সতর্কতা জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য আর জান্নাতে যাওয়ার জন্য। যা সঠিক পথের দিশারী।
‘হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তা (রিসালাত) প্রচার করো, যদি না করো তাহলে তুমি তাঁর বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করলে না। মানুষের অনিষ্ট হতে আল্লাহই তোমাকে রক্ষা করবেন, আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে কক্ষনো সৎপথ প্রদর্শন করবেন না।’ [৫ন সূরা আল মায়িদাহ্ : ৬৭] ওপরের আয়াতটিতে সুস্পষ্ট, মহান আল্লাহ্্ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ দিচ্ছেন বা দায়িত্ব দিচ্ছেন-তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ কুরআনের বাণী, তা (রিসালাত) প্রচার করো। আল্লাহর বাণী বা বার্তা অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য-মানুষের মাঝে তা প্রচার করা যাতে তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়।
কুরআনের বাণী কখন অবতীর্ণ? রমাযান মাস- যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকদের পথ প্রদর্শক এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ [২নং সূরা আল বাক্বরাহ : ১৮৫] “সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! আমি একে অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে,  কেননা) আমি (মানুষকে) সতর্ককারী। এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়।” [৪৪নং সূরা আদ্ দু-খান : ২-৪] “আমি কুরআনকে ক্বদরের রাতে নাযিল করেছি। তুমি কি জানো ক্বদরের রাত কী? ক্বদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম।” [৯৭নং সূরা আল ক্বদর : ১-৩] আয়াতগুলোতে সুস্পষ্ট, কুরআন রমাযান মাসে, বরকতময় এক রাতে অবতীর্ণ হয়। যে রাতে রুজি-রিযক, হায়াত-মউত, প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়। সেই রাতটিকে ভাগ্যের রাত বা কল্যাণময় রাত বা বরকতময় রাত বলা হয়। সেই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আর তা হলো-রমাযান মাসের শেষ দশকে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা রমাযানের শেষ দশকে এ রাত তালাশ করো।” [সুনান আত তিরমিযী-হা: ৭৯২] কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে সেই রাত কল্যাণময়। সেই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। সেই রাতে বিরাজ করে শান্তি আর শান্তি। কারণ কুরআন সকল মানুষের পথপ্রদর্শক এবং হিদায়েতের সুস্পষ্ট বর্ণনা এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।
কোন ভাষায় নাযিল? “সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।” [২৬নং সূরা আশ্্ শু’আরা : ১৯৫] কুরআন কি? কুরআন সকল জ্ঞানের উৎস-জ্ঞানের আলো। সমগ্র মানবজাতির জীবন বিধান। সঠিক পথের নির্দেশনা। আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য সঠিক পথের দিশারী।
“ইয়াসীন। শপথ হিকমাতপূর্ণ কুরআনের।” [৩৬নং সূরা ইয়া-সীন : ১-২] ‘এ (কুরআন) মানুষের জন্য জ্ঞানের আলো, আর নিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য পথের দিশারী এবং রহমত স্বরূপ। [৪৫ নং সূরা আল জা-সিয়াহ্-২০] কার জন্য এই বাণী বা বার্তা/মূল বাণী কি? ‘এটা মানুষদের জন্য একটা বার্তা যার দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে আর তারা জানতে পারে যে, তিনি এক ইলাহ্ আর যাতে বুদ্ধিমান মানুষেরা উপদেশ লাভ করে।’ [১৪ নং সূরা ইবরা-হীম-৫২] ‘কাজেই জেনে রেখ, আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ্ নেই।’ [৪৭ নং সূরা মুহাম্মদ-১৯] এই কুরআন মানুষের জন্য একটা বার্তা। তওাহীদের বার্তা। এর মূল লক্ষ্য-তাওহীদের বাণী সাক্ষ্য দেয়া। তাওহীদের বাণী বা মূল বাণী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ (আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই)। এই বাণীতে বিশ্বাস স্থাপন করা বুদ্ধিমানের কাজ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাই বলেন, কিতাবের এই মূল বাণী বুদ্ধিমানের জন্য, যারা আদেশ লাভ করে তাদের জন্য। কাজেই এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করা অপরিহার্য। এই কিতাবের বাণী জীবিতদের জন্য। আর যারা বিশ্বাস করে না তাদের জন্য অকাট্য দলিল।
‘যাতে সে (আত্মিকভাবে) জীবিতকে সতর্ক করতে পারে আর কাফিরদের বিরুদ্ধে অকাট্য দলিল হতে পারে।’ [৩৬ নং সূরা ইয়া-সীন-৭০] এই কুরআন জ্ঞানীদের জন্য, চিন্তাশীলদের জন্য : ‘এটি একটি কল্যাণময় কিতাব তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি যাতে তারা এর আয়াতগুলোর প্রতি চিন্তা-ভাবনা করে, আর জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে থাকে।’ [৩৮ নং সূরা সাদ-২৯] মুত্তাকিদের জন্য, মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের দিশারী : ‘এটা ঐ (মহান) কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ।’ [২ নং সূরা আল বাক্বারাহ্-২] ‘এ (কুরআন) সঠিক পথের দিশারী। যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ [৪৫ নং সূরা আল জা-সিয়্্া-১১] ‘আর তা নিশ্চিতই মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের দিশারী ও রহমত।’ [২৭ নং সূরা আন্্ নামল-৭৭] এই কুরআন উপদেশ গ্রহণের জন্য : ‘আমি কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য। উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি?’ [৫৪ নং সূরা আল ক্বামার-১৭, ২২, ৩২, ৪০] ‘আমি তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ [৪৪ নং সূরা আদ্ দু-খান-৫৮] ‘আমি এ কুরআনে মানুষের (জ্ঞান লাভের) জন্য যাবতীয় দৃষ্টান্ত বিশদভাবে বিবৃত করেছি কিন্তু মানুষ অধিকাংশ বিষয়েই বিতর্ককারী।’ [১৮ নং সূরা আল কাহ্্ফ-৫৪] কুরআন কোন্ পথ দেখায়? কুরআন পথ দেখায়-সিরাতুল মুস্তাকীম-সালাতে দাঁড়িয়ে যে পথের জন্য আমরা আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাই (ইহ্দিনাস সিরাতাল মুস্তাক্বীম)।
‘নিশ্চয়ই এ কুরআনে সেই পথ দেখায় যা সোজা ও সুপ্রতিষ্ঠিত, আর যারা সৎ কাজ করে সেই মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।’ [১৭ নং সূরা ইসরা-৯] ‘অথচ (ইসলামের) এ পথই তোমার প্রতিপালকের সরল-সঠিক পথ, যারা নসিহত গ্রহণ করে আমি তাদের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করে দিয়েছি।’ [৬ নং সূরা আল আন’আম-১২৬] ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন হলো ইসলাম।’ ৩নং সূরা আল ইমরান-১৯] অতএব, ইসলামের পথই সরল সঠিক পথ। ইসলামই মহান আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দীন- যা মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।
সঠিক পথ- সিরাতুল মুস্তাকিম-এ পথই দেখায় কুরআন। এই কারণে কুরআনের নির্দেশ পালনেই সফলতা আর না পালনেই ব্যর্থতা।
‘হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নসিহত আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর মু’মিনদের জন্য সঠিক পথের দিশা ও রহমত।’ [১০ নং সূরা ইউনুস-৫৭] আয়াতটিতে সুস্পষ্ট- যারা নসিহত গ্রহণ করে তাদের জন্য এই কুরআন সঠিক পথের দিশারী, নিরাময় আর রহমত। আর যারা তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
‘এ (কুরআন) সঠিক পথের দিশারী। যারা গতাদের পালনকর্তার নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ [৪৫ নং সূরা আল জা-সিয়াহ-১১] ‘নিশ্চয়ই আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।’ [১৫ নং সূরা আল হিজর-৯] মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নিকট হতে এই কুরআন নাযিল হয়েছে। অতএব, এর সংরক্ষকও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ্।
প্রেরিত কিতাবের প্রতি ঈমান : ‘কাজেই (এ অবস্থার কথা চিন্তা করে) তোমরা ঈমান আনো আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি আর নেই নূর (কুরআন)-এর প্রতি যা আমি অবতীর্ণ করেছি। তোমরা যা করো সে ব্যাপারে আল্লাহ্ পুরোপুরি অবগত।’ [৬৪ নং সূরা আত্-তাগা-বুন-৮] অতএব, কুরআনের প্রতি ঈমান আনতে হবে-বিশ্বাস করতে হবে। আরো ঈমান আনতে হবে আল্লাহর প্রতি আর রাসূলদের প্রতি। আল্লাহ্র বাণী, আল্লাহ্র কিতাবের জ্ঞানার্জন করতে হবে। জানতে হবে, সবশেষে তা মানতে হবে। অনুসরণ করতে হবে তবেই সে ঈমানদার (মু’মিন)।
আর যারা ঈমান আনবে না, মুখ ফিরিয়ে নিবে- তাদের পরিণতি : ‘যে আল্লাহ্র আয়াত শুনে যা তার সামনে পাঠ করা হয়, অতঃপর অহমিকার সাথে (কুফরীর উপর) থাকে যেন সে তা শুনেইনি; কাজেই তাকে ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ দাও। আমার আয়াতগুলোর কোন কথা যখন সে অবগত হয় তখন তাকে ঠাট্টা বিদ্রুপের বিষয় বানিয়ে নেয়, তাদের জন্য আছে অপমানজনক শাস্তি। তাদের আড়ালে আছে জাহান্নাম, তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসবে না। আর আল্লাহর পরিবর্তে তারা যেগুলোকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে সেগুলোও (কাজে আসবে) না। তাদের জন্য আছে মহাশান্তি।’ [৪৫ নং সূরা আল জা-সিয়াহ্-৮-১০] ‘যখন তার কাছে আমার আয়াত আবৃত্তি করা হয়, তখন সে অহংকারবশত: এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেন সে তা শুনতেই পায়নি, যেন তার দুই কানে বধিরতা আছে, কাজেই তাকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ দাও।’ [৩১ নং সূরা লুক্বমান-৭] যারা ঈমান আনবে- তারাই সফলকাম : ‘যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়িম করে এবং আমি যে রিয্ক তাদেরকে দিয়েছি তাত্থেকে তারা ব্যয় করে। আর তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতিও তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই তাদের প্রতিপালকের হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, আর তারাই সফলকাম।’ [২নং সূরা আল বাক্বারাহ্-৩-৫] ‘তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল হোক, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে, সৎ কাজের আদেশ করে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করে আর এরাই সফলকাম।’ [৩ নং সূরা আল-ইমরান-১০৪] ‘যারা ঈমান আনে আর সৎ কাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের বাগান।’ [১৮ নং সূরা আল ক্বাহ্ফ-১০৭] ঈমান আনার পর নেক আমল : নেক আমলের জন্য রাসূলের রিসালাতে বিশ্বাস। রাসূলের অনুসরণেই সকল ‘ইবাদাত, সকল কর্ম- তবেই তা নেক আমল। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, রাসূল তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। তিনি তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ করো আর যা নিষেধ করেন তা বর্জন করো।
‘তোমাদের জন্য আল্লাহ্র রাসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করে।’ [৩৩নং সূরা আল আহ্যা-ব-২১] ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ করো, আর তোমাদেরকে যাত্থেকে নিষেধ করে তাত্থেকে বিরত থাকো, আল্লাহ্কে ভয় করো, আল্লাহ্ কঠিন শাস্তিদাতা।’ [৫৯ নং সূরা আল হাশর-৭] ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য করো আর রাসূলের আনুগত্য করো আর তোমাদের ‘আমলগুলোকে নষ্ট করে দিও না।’ [৪৭নং সূরা মুহাম্মদ-৩৩] সবশেষে রাসূল (সাঃ)-এর দু’টি বাণী- যার অনুসরণে নিরাপত্তা, যা আঁকড়ে ধরলে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টো জিনিস ছেড়ে গেলাম। যতদিন তোমরা এ দু’টোকে আঁকড়ে রাখবে, তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। সে দু’টো হলো আল্লাহ্র কিতাব এবং তাঁর নবীর সুন্নাত তথা হাদীস।’ [সুনান আবু দাউদ-হা. ৪৫৩৩, মুয়াত্তা মালিক-হা. ৪৪-৪৬, সুনান ইবনু মাজাহ্্-১/৫৪, ৫৬, ৫৭] আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করল যা করতে আমরা নির্দেশ দিইনি সে আমল বাতিল।’ [সহীহ্ মুসলিম-হা. ১৮/১৭১৮] আসুন, আল্লাহ্র কাছে দু’আ করি-‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যা অবতীর্ণ করেছ আমরা তার উপর ঈমান এনেছি, রাসূলের আনুগত্য স্বীকার করেছি। সুতরাং আমাদেরকে সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করো। [৩ নং সূরা আল-ইমরান-৫৩] আল্লাহুম্মা আমীন

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button