জিলহজের দশদিন অবহেলার নয়

তামীম রায়হান:
সময়ের পরিক্রমায় আমরা এখন জিলহজ মাসের সূচনায়। আরবি বর্ষ হিসেবে এ মাস সর্বশেষ মাস। সারা বছরের অন্য দিনগুলোর তুলনায় এ মাসের প্রথম দশদিন আল্লাহ পাকের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দিন হিসেবে বিবেচিত।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বিভিন্ন হাদিসে জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন রোজা রাখা এবং অন্যান্য আমলের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
আল্লাহ পাক যাদের তওফিক দিয়ে সৌভাগ্যবান করেছেন, তারা এখন পবিত্র কাবার জিয়ারতে দিবারাত্রি ব্যস্ত। আর আমরা যারা যেতে পারিনি, আমাদের জন্যও সান্নিধ্য ও নৈকট্যপ্রাপ্তির দয়া ও করুণার দুয়ার খুলে রেখেছেন পরম করুণাময়।
আমরা ভেবে থাকি, হজের কয়েকদিন এবং কুরবানির দিনই এ মাসের আলোচিত সময়। কিন্তু না, জিলহজ মাস শুধু কুরবানি জন্য নয়। বরং মাসের শুরু থেকে কুরবানির দিন পর্যন্ত প্রতিটি প্রহর আল্লাহ পাক নেকি অর্জনের অফুরন্ত সুযোগ দিয়ে রেখেছেন। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজের প্রথম দশদিনকে বছরের সর্বোত্তম দিন হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।
পবিত্র কুরআনে সুরা ফজরের প্রথমদিকের আয়াতে আল্লাহ পাক এ দশদিনের রাতের কসম করেছেন। এভাবে এ কসম এবং বিশেষভাবে এ রাতগুলোর কথা উল্লেখ করার মাধ্যমে এ দিন ও রাতগুলোর মর্যাদা প্রতীয়মান হয়।
আবু দাউদ এবং সুনানে তিরমিজিসহ আরও কয়েকটি হাদিস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের প্রথম নয়দিন, আশুরার দিন এবং প্রতি মাসে যে কোনো তিন দিন নিয়মিত রোজা রাখতেন।
কাজেই এ দিনগুলোতে একজন প্রকৃত মুসলমান তার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে সাধ্যমতো আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হতে পারেন। রোজা, নামাজ ও কোরান তিলাওয়াতের মধ্যে এ সময়টা অতিবাহিত করলে পূণ্যের খাতায় অনেক বড় সঞ্চয় হিসেবে থাকবে।
শুধু কুরবানির দিনটি নয়। বরং বাকি দিনগুলোও আল্লাহ পাকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথাও মনে রাখা প্রয়োজন। যারা নিশ্চিতভাবে কুরবানি করার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তাদের উচিত, কুরবানির আগে এ দশদিন যেন নিজের চুল কিংবা নখ না কাটা। মুসলিম শরিফের বর্ণনায় উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমরা জিলহজের চাঁদ দেখবে ও তোমরা কুরবানির পশু জবাই করার ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকবে, তবে তোমরা এ কয়দিন নিজেদের চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।
মুহাদ্দিসগণ বলেছেন, এ নিষেধ হারামের পর্যায়ে নয়। বরং কেউ করলে তা মাকরুহ হবে বলে উলামায়ে কেরাম মত দিয়েছেন।
উৎসবপ্রিয় বাংলাদেশে কুরবানির অনেক আগে থেকেই আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করে। ঈদকে কেন্দ্র করে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি নানা রকম কেনাকাটায়। এসবের মধ্যে যেন সীমালঙ্ঘন না হয় এবং আনন্দে বিভোর হয়ে এ দিনগুলোর সুবর্ণ ফজিলত থেকে বঞ্চিত না হই, সেদিকেও সচেতন থাকা প্রয়োজন।
ইসলাম আমাদের বিশুদ্ধ করার প্রয়াসে বারবার আমাদের পরম স্রষ্টার দয়া ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বারবার আমাদের পাপ মোচনের সুযোগ করে দেয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেভাবেই আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই হেলায় ফেলায় যেন আমাদের সময়গুলো কেটে না যায়, আসুন আমরা সে ব্যাপারে যত্নবান হই।
লেখক-শিক্ষার্থী, দাওয়া ও মাস কমিউনিকেশন, কাতার ইউনিভার্সিটি, কাতার

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button