প্রথমবার রেমিট্যান্স কমল বাংলাদেশের

Economyবাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। বিদায়ী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এক হাজার ৪২২ কোটি ৭০ লাখ (১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ কম।
২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৪৪৬ কোটি (১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা।
রেমিট্যান্স সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে মাত্র ১ কোটি (১০ মিলিয়ন ডলার) ডলার রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা।
এরপর থেকে প্রতিবছরই আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে। কেবল বিদায়ী অর্থবছরই ব্যতিক্রম। এ বছরে রেমিট্যান্স বাড়েনি; উল্টো কমেছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। দশ বছর আগে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এসেছিল ১০ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। পরের দুই বছর রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬৫ এবং ১২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এক হাজার ৪৪৬ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১২১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এপ্রিল ও মার্চ মাসে এসেছিল যথাক্রমে ১২৩ কোটি ও ১২৮ কোটি ৮৬ লাখ ডলার।
তবে সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে গত বছরের জুনের চেয়ে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। গত বছরের জুনে এসেছিল ১০৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। অর্থবছর শেষে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসায় সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, অর্থবছরের শেষের কয়েক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ায় ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রায় সমান রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থবছরের প্রথম দিকের প্রবাহ দেখে মনে হয়েছিল এবার রেমিট্যান্স বেশ খানিকটা কমবে। কিন্তু শেষের চার মাসে (মার্চ থেকে জুন) ১২০ কোটি ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স আসায় সে আশঙ্কা আর থাকেনি। শেষ পর্যন্ত যেটা এসেছে সেটাকে ভালোই বলব আমি।
আগের অর্থবছরের চেয়ে বিদায়ী অর্থবছরে রেমিট্যান্স সামান্য যেটা কমেছে সেটা মূলত ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ার কারণে কমেছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেশি হওয়ায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ডলারের দর ছিল ৮১ টাকা ৭৭ পয়সা। ওই অর্থবছরের প্রায় পুরো সময় ডলারের দর ৮০ টাকার উপরে ছিল। বুধবার সেই ডলারের দর ছিল ৭৭ টাকা ৬৩ পয়সা।

রিজার্ভ ২১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার
শেষদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাত মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ছাইদুর রহমান।
১৬ জুন নতুন রেকর্ড গড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন ২১০০ কোটি (২১ বিলিয়ন) ডলার অতিক্রম করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল সেই রিজার্ভ বেড়ে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে অর্থাত্ জুলাই-মে সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
অন্যদিকে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ।

এবার আকুর বিল ৯৭ কোটি ডলার
মে-জুন মেয়াদে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ৯৭ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। বৃহস্পতিবার আকুর এই দেনা পরিশোধ করা হবে।
আকুর দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে আসবে।
তবে ঈদ সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় দ্রুত তা আবার ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুই মাস পর পর আকুর দেনা পরিশোধ করে বাংলাদেশ। গত ৮ মে মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১১৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button