আবার নির্যাতনের কবলে ক্রিমিয়ার মুসলমানরা

Crimia Muslimক্রিমিয়ার মুসলিম তাতাররা সোভিয়েত আমলে যে ভয়াবহ নির্যাতন ভোগ করেছিল, এখন তারা আবার একই ধরনের নির্যাতনের যুগ ফিরে আসার বিষয় প্রত্যক্ষ করছে। গত মার্চ মাসে মুসলিম প্রধান তাতার অঞ্চল রাশিয়া দখলকরার পর তাদের ওপর রুশ শাসকদের নির্যাতন শুরু হয়। রেডিও ফ্রি ইউরোপ গত ২৯ নবম্বের জানায়, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ক্রিমিয়ান তাতার মজলিসের ডেপুটি প্রধান নারিমান জেলায়েল বলেন, একই ধরনের জনসমাবেশ ও মিছিল থেকে জনগণকে বিরত রাখতে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষ জনগণকে আরো বলার চেষ্টা করছে, তোমরা যদি মজলিসের পথ অনুসরণ কর, তাহলে তাদের মতো একই ভাগ্যবরণ তোমাদেরও করতে হবে। তোমরা প্রতিবাদ মিছিল বা অন্যান্য কর্মকান্ডে অংশ নেবে না, নিলে মজলিস তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না।
গত ২৫ নবেম্বর জনৈক পুলিশ অফিসারের ওপর হামলার কথিত অভিযোগে আদম ইবুলিসভকে গ্রেফতার করা হয়। গত মে মাসে ক্রিমিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর আরমানস্কেডের নিকটবর্তী স্থানে সংঘর্ষের সময় উক্ত পুলিশ অফিসার হামলায় আহত হন বলে উল্লেখ করা হয়। গত মাসের পুলিশের ওপর উক্ত হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মুসা আপকারিক্সেমাভ, রোস্তম আবদুর রাহমানকে ও তায়ের মেলদায়েভকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ৩ মে প্রখ্যাত মুসলিম তাতার নেতা মোস্তফা জামিল লেভকে ক্রিমিয়ায় প্রবেশ বাধা দেয়ায় আরমানস্কের নিকটে হাজার হাজার মুসলিম তাতারের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে বলা হয়।
জামিলেভ সোভিয়েত যুগে বিখ্যাত মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ৬ দফা কারাভোগ করেন। ক্রিমিয়ার তাতার নেতারা এক বিবৃতিতে তাদের অববাহিকাকে রাশিয়ার অঙ্গীভূত করার প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করেন। গত মার্চ মাসে অববাহিকার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এক গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে রাশিয়া গ্রাস করার উদ্যোগ নেয়। গণভোট রুশ উদ্যোগের প্রতি ৯৬ শতাংশ ভোট পড়ে। এরপর কয়েকটি পদক্ষেপের মাধ্যমে মস্কোপন্থী ক্রিমিয়া পার্লামেন্ট বিতর্কিত অববাহিকা রাশিয়ার অঙ্গীভূত করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়ে একটি আইন পাস করে। তাড়াহুড়া করে ১৫ মার্চ আয়োজিত গণভোট তাতাররা বর্জন করে। তবে রুশ সেন্যদের বন্দুকের নলের মুখে যারা ভোট দিতে বাধ্য হয় তারাও না সূচক ভোট দেয়।
এই নতুন গ্রেফতারের নিন্দা করেছেন ক্রিমিয়ান নেতারা। কারণ তাদের আবার সাবেক যুগের পুলিশী ব্যবস্থার দিকে সিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মজলিসের ডেপুটি নেতা জেনারেল প্রশ্ন করেন, কি ধরনের পুলিশ যারা পুলিশ হিসেবে কথা বলছে? তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত ইউক্রেনিয়ান বারকুত দাঙ্গা পুলিশ? এরা এখনো রাশিয়ান আইনানুযায়ী চলে, এমনকি অনেক পুলিশ অফিসার ইউক্রেনিয়ান ইউনিফরমড। সুতরাং এটা পরিষ্কারভাবেই রাজনীতির বিষয়। বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তায়ের মেলদায়েড ও ইমিল খুরবেদিনভ এ ব্যাপারে একমত হন। খুরবেদিনভ বলেন, এটা শতভাগ রাজনৈতিক বিষয়।
তিনি বলেন, তদন্তকারীরা একটি ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মেলদায়েভ ভিডিওর ছবি সম্পর্কে বলেন, এতে দেখা যায় এক ব্যক্তি পুলিশের ওপর হামলা করছে। উক্ত ব্যক্তি এই হামলার কথা পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করেছে। এটাকে ক্যাম্পোফ্লোজ করা হয়েছে বলে ওই আইনজীবীকে জানিয়েছে। তাতাররা ক্রিমিয়ায় শত শত বছর ধরে বাস করে আসছিল ১৯৪৪ সালে স্ট্যালিন নাৎসিদের সঙ্গে সহযোগিতা করার অভিযোগ এনে ২ লাখের বেশি তাতারকে তাদের নিজ বাসস্থান থেকে উৎখাত করে অত্যন্ত দুঃসহ অবস্থায় উজবেকিস্তান ও অন্যান্য স্থানে পাঠায়।
অনেকেই এতে মারা যায়। সোভিয়েত সরকার তাদের বাড়িঘর দখল করে নেয়। মসজিদগুলো ধ্বংস করে। আশির দশকে পেরোস্কইকার পরে তারা আবার নাস্তিক্যবাদের জোয়াল থেকে মুক্তি পায়। ১৯৮০’র দশকের শেষের দিকে তাদের নিজ বাড়িঘরে ফেরার সুযোগ পায় অনেকে। ’৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলে অধিকাংশই ক্রিমিয়ায় ফিরে আসে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button