উলামা-মাশায়েখ ও হেফাজত নেতৃত্বের সুনামহানীর জন্য একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে : শাহ আহমদ শফী

গত ১১ ও ১২ এপ্রিল চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত শানে রেসালাত সম্মেলনে হেফাজত আমীরের একটি বক্তব্য এবং হেফাজতের বর্তমান অবস্থান নিয়ে কয়েকটি মিডিয়ায় নেতিবাচক সংবাদ প্রচারের প্রেক্ষিতে হেফাজতে ইসলামের আমীর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক দেশের শীর্ষ আলেম শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.) এক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সোমবার বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে দেয়া বিবৃতিতে হেফাজত আমীর বলেন, হেফাজতে ইসলাম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতির মাধ্যমে আমরা বার বারই স্পষ্ট করেছি যে, ইসলাম ও মুসলিম জীবনধারা নিরাপদ রাখা এবং সঠিক পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে কাজ করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য। ঈমান-আক্বিদা ও ইসলাম বিরোধী কোনো তৎপরতা বা প্রতিকূলতা দেখা না দিলে মুসলমানদের মাঝে সঠিক ইসলামী বিধি-বিধান ও শান্তি-শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণের প্রচার এবং শিরক, বিদআতসহ সকল ধর্মীয় কুসংস্কার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকবে। হেফাজতে ইসলাম কখনোই কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না, তেমনি কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যও কাজ করবে না। তবে যে বা যারাই ক্ষমতায় থাকুক, ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিলে হেফাজতের আন্দোলনে তাদের স্বস্তিবোধ করার কারণ নেই। ইসলামের পক্ষে যে বা যারাই কাজ করবেন, তারা হেফাজতের আন্দোলনের কারণে উপকৃত হবেন। বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম দ্বীনি ও ইসলাহী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনো কোনো রাজনৈতিক বা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন কোনো দাবি বা কর্মসূচি দেয়নি। ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনাকারী নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীতার বিরুদ্ধে আমাদের চলমান আন্দোলনেও আমরা যে ১৩টি দাবি উপস্থাপন করেছি, তার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট দাবির অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমাদের দাবি ও প্রতিবাদ কর্মসূচী একান্তই ঈমান-আক্বীদা, ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট। আমাদের এই অবস্থানের কোনোই হেরফের হয়নি।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আরো বলেন, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল পরস্পর বিপরিতমুখী অবস্থানে রয়েছেন। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে দেশের স্থিতিশীলতা ও জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতা ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে কাজ করা ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বার বার আমি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য, গণমানুষের প্রত্যাশিত সেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দেশে এখনো আসেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব যেন বেড়েই চলেছে। এসব কারণে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি ক্রমান্বয়ে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। যে কারণে অনেকেই হেফাজতে ইসলামকে বর্তমান রাজনৈতিক দুর্দিনে কান্ডারি হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা এবং আমাদের অরাজনৈতিক নীতি-আদর্শের কারণে সরাসরি সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কোনোই সুযোগ নেই। তাছাড়া আমাদের ঈমানী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্য দৃঢ় রাখার স্বার্থেই আমরা কোনো একটা পক্ষের হয়ে কাজ করতে পারি না। এ কারণে আমরা শুরু থেকেই বার বার বলে এসেছি যে, আমাদের বিরোধ কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে, তাদের ও তাদের সহযোগী নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে। লালদিঘীর শানে রেসালাত সম্মেলনে দেশ ও জাতির প্রতি আমি এই বার্তাটাই দিতে চেয়েছি যে, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথেই হেফাজতে ইসলামের শত্রুতা নেই। মুসলমান হিসেবে আমরা সকলেই ভাই ভাই। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী যে কোনো অপতৎপরতা ও নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলেরই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান থাকা চাই। যারা বিভিন্নভাবে অভিযোগ করতে চায় যে, আমরা বিশেষ কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছি, আমি শুধু তাদের ভুলটা সংশোধন করে হেফাজতে ইসলামের অরাজনৈতিক অবস্থানটা পরিষ্কার করেছি। ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ একটা আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ১৩ দফা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে বড় ধরণের কর্মসূচি দেয়ার পরিবেশ বর্তমানে নেই। এটাকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক রূপ দেয়ার সুযোগ নেই। ১৩ দফার শান্তিপূর্ণ ঈমানী আন্দোলনের পাশাপাশি আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থানকে বজায় রেখে আরো জোরদার করাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তৌহিদী জনতা ও আলেম সমাজ যতোদিন ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখতে সমর্থ হবেন, ততোদিন ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলার সাহস কেউ পাবে না।
তিনি আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদসহ সকল কুফরী, শিরকী ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেমন সোচ্চার ভূমিকা পালন করে এসেছে, বর্তমানেও তা চালিয়ে যাচ্ছে। বরং আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে এবং আমাদের কাজের পরিধিও অনেক বেড়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতেও হেফজতে ইসলাম দেশব্যাপী শত শত ওয়াজ মাহফিল, ধর্মীয় সমাবেশ ও শানে রেসালাত সম্মেলনের মাধ্যমে ১৩ দফার যৌক্তিকতা জনগণের সামনে তুলে ধরাসহ মুসলমানদের ঈমানী দায়িত্ব সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি এবং ধর্মীয় নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলন করে যাচ্ছে। সুতরাং হেফাজত সম্পর্কে ভুল বুঝা বা বিভ্রান্ত হওয়ার কোনই সুযোগ নেই। সেই ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ের মতো বর্তমানেও হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে দেশের আলেম সমাজ ইসলাম, মুসলমান ও দেশ-জাতীর স্বার্থে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং যে বা যারাই হেফাজতের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা করতে চায়, বুঝতে হবে তারা কার্যতঃ ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার মধ্যে বিভেদ তৈরি করে নাস্তিক্যবাদের পক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে।
হেফাজত আমীর আরো বলেন, চিহ্ণিত দুয়েকটি পত্রিকা বার বার বার্ধক্যতার কারণে আমার ছেলে মাওলানা আনাস মাদানীর প্রতি আমার দুর্বলতাসহ নানা বিষোদগারমূলক কাল্পনিক মনগড়া আভিযোগ রটাচ্ছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, একজন পিতা হিসেবে মাওলানা আনাস মাদানীর প্রতি যতটা স্নেহ থাকা উচিত, তাই আছে। এর বাইরে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক ও হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমার পুত্র হিসেবে মাওলানা আনাস মাদানীর বিশেষ কোনো কর্তৃত্ব নেই। রেলওয়ের জায়গা নিয়ে যে বা যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেটাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার উত্তরোত্তর ছাত্র সংখ্যার বৃদ্ধির কারণে আবাসন, পানি ও হাজার হাজার ছাত্রের বসবাস ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করার স্বার্থেই হেফাজতের আন্দোলন শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই মাদ্রাসাসংলগ্ন বাংলাদেশ রেলওয়ের অনাবাদি ভূমি লিজ সূত্রে বরাদ্দ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছি। এর সাথে হেফাজতের ১৩ দফা আন্দোলনকে জড়িয়ে ফেলা শুধু চরম মিথ্যাচারই নয়, বরং এটা হেফাজতে ইসলাম ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও শত্রুতা ছাড়া আর কিছু নয়। রেলওয়ের জায়গা বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার নামে। কিন্তু এর সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচারের কোনোই যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এ ধরণের মিথ্যা সংবাদ ও অপপ্রচারের আমি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, দেশের কোটি কোটি মুসলমান ও আলেম সমাজের ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক প্রাণের সংগঠন ও ঐক্যের প্লাট ফরম হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে নেতিবাচক ও জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, এমন যে কোনো সংবাদ প্রকাশে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ সাইট এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। দায়িত্বশীল সকলেরই মনে রাখা উচিত, যে কোনো ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশের কারণে সংগঠনের সুনামহানি ঘটলে উলামা-মাশায়েখ, তৌহিদী জনতা ও ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। সত্যকে আড়াল করে চরম মানহানীকর ও মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনা দায়িত্বশীল কোনো সংবাদ মাধ্যমের কাজ হতে পারে না। সুতরাং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনসহ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
মুহাদ্দিস, মুফতী ও শিক্ষকবৃন্দের প্রতিবাদ
এদিকে দৈনিক মানব জমিনসহ কয়েকটি পত্রিকায় সম্প্রতি হেফাজত আমীর ও তাঁর পুত্র মাওলানা আনাস মাদানী সম্পর্কে মনগড়া ও মিথ্যাচারপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা মুহাদ্দিস, মুফতী ও শিক্ষকবৃন্দ।
গতকাল বিকেলে দেয়া এ বিবৃতিতে তারা বলেন, সংগঠনের আমীর এবং দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.) দেশের সর্বজনমান্য একজন শীর্ষ আলেম ও পীর-বুযুর্গ। ইসলামী শিক্ষার বিস্তারের পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সুরক্ষা, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান এবং ইসলাম ও মুসলমানদের যে কোনো সংকটময় সময়ে তাঁর দিক-নির্দেশনা ও সুদক্ষ নেতৃত্ব দেশ ও জাতির জন্য এক বিশাল সম্পদ। সুদক্ষ নেতৃত্বের যোগ্যতাবলে তিনি এশিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনার পাশাপাশি আরো অনেকগুলে বড় বড় সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে রয়েছেন। সুতরাং এ ধরণের একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারীর বিপক্ষে যে কোনো সংবাদ প্রচারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি ব্যাপকভাবে যাচাই বাছাই করা অপরিহার্য কর্তব্য।
বিবৃতিতে তারা বলেন, হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী যদি অর্থ-সম্পদ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অর্জনের প্রতি মনোযোগ দিতেন, বর্তমানে তাঁর কোটি কোটি টাকার সম্পদ থাকতো। জৌলুসপূর্ণ বাড়ী-গাড়ি ছাড়াও ভোগবিলাসিতার কোনো কমতিই থাকতো না তাঁর। অথচ ব্যক্তি জীবনে আল্লামা শাহ আহমদ শফী একেবারে সাদাসিধে জীবন যাপন করে আসছেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ন্যায়-নিষ্ঠ সততা ও আমানতদারির কথা সর্বমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত। সুতরাং এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিন্দুমাত্রও অবকাশ নেই। এ নিয়ে কিছু বলা বা অপপ্রচারের মানেই হচ্ছে এদেশের উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যবিনাশী চরম শত্রুতা করার নামান্তর। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের দোসররাই একমাত্র এ ধরণের জঘন্য কাজে জড়িত হয়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি করতে পারে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, পীরে কামেল আল্লামা শাহ আহমদ শফী (দা.বা.) বর্তমানে ৯০ বছর বয়স অতিক্রম করছেন। শারীরিক অসুস্থতা, দুর্বলতা ও বার্ধ্যকত্যাজনিত কারণে তাঁর পাশে থাকা এবং সেবা-যতেœ শরীক হওয়া সন্তান হিসেবে মাওলানা আনাস মাদানীর উপর একান্ত কর্তব্যও বটে। এর মানে হেফাজত আমীর সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম বা তাঁকে ভুল বুঝিয়ে কেউ সুবিধা অর্জন করছেন, তা নয়। তিনি সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হলে এশিয়ার অন্যতম একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এতো সুচারুরূপে পরিচালনা করতে পারতেন না। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক), সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ এবং বিশ্বব্যাপী আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ এতগুলো বড় বড় সংগঠনের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারতেন না।
তারা বলেন, দৈনিক মানব জমিন, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক আমাদের সময়সহ কতিপয় মিডিয়া ও ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তিবিশেষ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হেফাজত আমীর ও তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার চালিয়ে আলেম সমাজের সুনামহানি ও ঐক্যবিনাশী ষড়যন্ত্র করছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও কথিত জঙ্গীবাদের সাথে হেফাজতে ইসলাম ও আলেম সমাজকে জড়িয়ে উস্কানীমূলক মিথ্যাচার চালিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে জঘন্য মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিমূলক অপবাদ ছড়িয়ে ১৩ দফার ঈমানী আন্দোলনকে কলঙ্কিত করে সমাজে আলেমদেরকে হেয় করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা বলেন, কোটি কোটি তৌহিদী জনতা উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে এ ধরণের কদর্য অপপ্রচারে কখনোই বিভ্রান্ত হবে না। আন্তর্জাতিক ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী চক্র এবং তাদের এদেশীয় দোসর নাস্তিক্যবাদিদের যোগসাজশেই এসব পরিচালিত হচ্ছে বলে আমাদের স্পাষ্ট ধারণা। সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর উপর আস্থা-বিশ্বাসের ধারা বাদ দেয়া এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠার পর ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। হেফাজতে ইসলামের ঐক্যবদ্ধ দৃঢ় অবস্থানের কারণে ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি মহল কোণঠাঁসা হয়ে পড়ায় এখন তারা শীর্ষ আলেমদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা রটনাসহ নানা অপপ্রচার শুরু করেছে। এদেশের ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতা কখনোই এসব অপপ্রচারে কান দিবে না। বরং এতে করে তৌহিদী জনতা ও আলেম সমাজের ঐক্য আরো দৃঢ় হবে বলে আমরা আশাবাদি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দেশ, ইসলাম ও আলেম উলামা বিরোধী এসব খেলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় এদেশের আলেম সমাজের নেতৃত্বে কোটি কোটি দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী ও মিথ্যাচারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে মোটেও বিলম্ব করবে না। এদেশের কোটি কোটি আলেম ও তৌহিদী জনতা ঈমান-আক্বিদা ও ইসলামের হেফাজতের পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাবে। বিজ্ঞপ্তি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button