৫ জানুয়ারির নির্বাচন হতাশাজনক : যুক্তরাজ্য

Gov৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের হতাশা এবার প্রকাশ করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে তাদের এ অবস্থান তুলে ধরা হয়।
এর আগে গত ২২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এ হতাশার কথা জানিয়েছেন। ওই সময় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয় এমন একটি মুক্তসমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বের প্রশ্নে একমত হন উভয়ে।
বৃহস্পতিাবার বাংলাদেশের মানবাধিকার সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি কেস স্টাডি আপডেট’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি ছাড়াও বলা হয়, বাংলাদেশের মিডিয়া বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের সমালোচনাকারী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক করা হচ্ছে। সীমিত করা হয়েছে এনজিওর কর্মকাণ্ড। এতে বাংলাদেশে সবার অংশগ্রহণমূলক একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয় বিশেষভাবে। শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে ডেভিড ক্যামেরন এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি অব্যাহত রয়েছে বাংলাদেশে।
প্রতিবেদনে নাগরিক সমাজ (সিভিল সোসাইটি) ও মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব করার সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সেভেন মার্ডার প্রসঙ্গও স্থান পেয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সহিংসতার ঝুঁকি রয়ে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিােভ-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সহিংসতা কমে এলেও এনজিওগুলো নির্বাচনের পর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। ২০১৪ সালে গৃহীত নতুন নীতি ও আইন নাগরিকসমাজের ব্যাপ্তি ও মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব হওয়া নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না হলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপে হবে না মনে করে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হওয়ার প্রোপটে আওয়ামী লীগ উপর্যুপরি দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনের দিন ২১ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক স্কুলভিত্তিক নির্বাচনী কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া হয়। নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রতি প্রতিশ্র“তিবদ্ধ রয়েছে, ২০১৩ সালের চেয়ে অনেক কম হরতাল ও অবরোধ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ জানুয়ারি ওই সময়ের মানবাধিকারবিষয়কমন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ার্সি রাজনৈতিক জবাবদিহি সমাধানে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি সব দলের ভীতি প্রদর্শনমূলক কর্মকাণ্ড এবং অবৈধ সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি জোরদার এবং কোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিহিংসার আশঙ্কা ছাড়াই ভবিষ্যতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আগ্রহ ও সমতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে সব প্রধান দল প্রার্থী দেয়। প্রথম দুই দফা নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে পড়ার পর শেষ তিন দফায় আওয়ামী লীগ অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়। এনজিও ও মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী এটা ঘটেছিল ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় হস্তেেপর মাধ্যমে।
ব্যারোনেস ওয়ার্সি বিষয়টি নিয়ে ১৩ মে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সাথে আলোচনা করেছিলেন। তিনি এসব খবরের পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত করে যথাযথ পদপে গ্রহণে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মার্চে ওই সময়ে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের প্রতিমন্ত্রী অ্যালেন ডানকান বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করে আরো টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতার প্রাথমিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। একই সাথে জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রে সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
এতে বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০১৩ সালের রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়মুক্তি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। এনজিওগুলো জানিয়েছে, ২০১৪ সালের প্রথম ছয় মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে দৃশ্যত আইনপ্রয়োগকারী বাহিনীগুলোর হাতে ক্রসফায়ারে বিপুলসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জে প্রকাশ্যে সাতজনকে অপহরণ এবং পরে তাদের লাশ নদীতে পাওয়া যাওয়ার ঘটনায় দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ হত্যার সাথে র‌্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগের পর বাংলাদেশের সংসদ, হাইকোর্ট ও নাগরিক সমাজ বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানায়। সরকার প্রতিশ্র“তি দেয়, অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হবে। এ মৃত্যুতে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিন র‌্যাব সদস্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দাখিল করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার নতুন আইন প্রণয়ন কিংবা বিদ্যমান আইনগুলোতে সংশোধন আনায় নাগরিক সমাজের ব্যাপ্তির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল মিডিয়ার আশ্রয় নিয়ে যারা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাদের তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে আটক করা হচ্ছে। তা ছাড়া প্রস্তাবিত ‘ফরেন ডোনেশনস অ্যাক্ট’টি নাগরিক সমাজের কার্যক্রম সীমিত করে দিতে পারে।
আরো দু’টি ঘটনা নাগরিক সমাজের মধ্যে এ ধারণা জোরদার করেছে; বাংলাদেশ সরকার সমালোচনা ও ভিন্নমত প্রকাশের সম্ভাব্য চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। সদ্য প্রণীত জাতীয় সম্প্রচার নীতি মিডিয়ার স্বাধীনতার ওপর রাশ টেনে ধরবে বলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’টি টিভি চ্যানেল এবং একটি সংবাদপত্র পুরোপুরি বা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজের অনেক সংগঠন ক্রমবর্ধমান নজরদারি, হয়রানি ও ভীতিপ্রদর্শনের কথা বলেছে। এ ছাড়া সম্প্রতি সরকারের নতুন সংবিধান সংশোধনের ফলে সংসদীয় কর্তৃপ বিচার বিভাগের সদস্যদের অভিশংসন করার মতা ফিরে পেয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২২ জুলাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেন। ক্যামেরন নির্বাচন নিয়ে তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন। উভয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং মিডিয়ার স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এমন উন্মুক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপে একমত হন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button