সুলতানদের নীরবতা: মুসলিম শাসনব্যবস্থা ও আমাদের সময়ের গণহত্যা
তেল আবিব আর গাজাকে কবরস্থানে পরিণত করেই সন্তুষ্ট নয়—এখন তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে পূর্ব দিকে, ইরানের মাটিতে, এমন এক ধরণের উন্মত্ত সাহসিকতা নিয়ে যা সাধারণত দেখা যায় জেমস বন্ড সিনেমার খলনায়ক কিংবা শেষ নিঃশ্বাসে থাকা ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে। গত এক বছরে ইসরায়েল তার ছায়াযুদ্ধকে রূপান্তর করেছে খোলামেলা উসকানির মঞ্চে: বিজ্ঞানীদের হত্যা, কনস্যুলেট বোমা হামলা, সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা এবং প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সাথে একের পর এক ধ্বংসাত্মক তৎপরতা। একবার-দুবার নয়—একটি ধারাবাহিক অভিযানে যা আন্তর্জাতিক আইনকে হাস্যকর বানিয়ে দিয়েছে।
আর এই পুরো সময়জুড়ে, ইরান প্রতিউত্তর দিয়েছে আগুন দিয়ে নয়, বরং কূটনৈতিকভাবে একে বলা হয় “কৌশলগত সংযম”—অর্থাৎ এমন এক সচেতন ধৈর্য, যা আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য নেওয়া হয়। কিন্তু এই ধৈর্য এখন হয়তো ফুরিয়ে আসছে। ওয়াশিংটনের খোলা চেক এবং মুসলিম বিশ্বের নির্বাক তাকিয়ে থাকার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠা নেতানিয়াহুর ইসরায়েল যা করছে, তা দেখে তেহরান এখন বুঝতে শুরু করেছে যা গাজা অনেক আগেই জেনে গেছে: গণহত্যার মুখে সংযমকে আর জ্ঞানী সিদ্ধান্ত বলা যায় না—এটা ধীরে ধীরে আত্মহত্যার নামান্তর।
এখন ২০২৫ সাল, এবং গাজা আবার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে এবার সেই ধ্বংস এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যা আর কোনও শব্দ বা উপমা দিয়ে ঢেকে রাখা সম্ভব নয়—না “সংঘাত”, না “অভিযান”, না “নিরাপত্তা প্রতিক্রিয়া”। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে, ইসরায়েলি রাষ্ট্র ২০ মাসব্যাপী এক ভয়াবহ অভিযান চালিয়েছে—বোমাবর্ষণ, অনাহার ও গণহত্যার মাধ্যমে—যার ফলে গাজা এখন যেন এক কবরস্থান যেখানে শুধুমাত্র ওয়াই-ফাই চালু আছে।
আর যখন বিশ্বের অনেক অংশ তা দেখে আতঙ্কে থাকলো—বা আরও খারাপ, নির্লিপ্ত রইলো—তখন মুসলিমরা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বসে অপেক্ষা করছিলেন, আশায় ছিলেন, কিছু হবে, কেউ কিছু করবে, তাদের নামে যারা শাসন করেন, তারা কিছু বলবেন বা করবেন।
তারা অপেক্ষা করেছে উপসাগরীয় রাজপরিবারগুলোর দিকে, যারা পেট্রোডলার আর পাখির পালকে মোহিত হয়ে সময় কাটাচ্ছেন, তারা যেন অবশেষে কেবল ক্যালিগ্রাফিতে লেখা নরম বিবৃতি ছাড়িয়ে কিছু করেন। তারা অপেক্ষা করেছে পাকিস্তান ও তুরস্কের দিকে—পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী মুসলিম সামরিক শক্তির দাবিদার—যারা যেন একবার অন্তত প্রাসাদ ও ব্যারাক থেকে বেরিয়ে শুধু কথাবার্তা নয়, কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেন। তারা অপেক্ষা করেছে, কারণ তারা বিশ্বাস করেছিল। বিশ্বাস করেছিল যে হয়তো একবার হলেও, ক্ষমতা শুধু শাসকদের রক্ষা করতে নয়, নির্যাতিতদের রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হবে।
এটা নয় যে মুসলিম বিশ্বে ক্ষমতার অভাব আছে। বরং একেবারে উল্টো। উপসাগরীয় দেশগুলো এমন এক অর্থনৈতিক শক্তির ওপর বসে আছে, যার মাধ্যমে তারা পুরো পশ্চিমা অর্থনীতিকে কিনে ফেলতে পারে—সপ্তাহের মাঝে কোনও এক মঙ্গলবারে। আর তুরস্ক ও পাকিস্তান—তাদের রয়েছে বিশাল ও অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনী। তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য, যার আছে ড্রোন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা। পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, যার জেনারেলরা প্রায়শই পুরো দুনিয়াকে মনে করিয়ে দেন যে তারা “পূর্ণ মাত্রার প্রতিরোধের” জন্য —অর্থাৎ প্রয়োজনে পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।”
তবুও, যখন বিষয় গাজা, তখন এই শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যেন তাদের কৌশলপত্র, সাহস এবং দায়িত্ববোধ সব হারিয়ে ফেলেছে।
আসুন শুরু করি উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো দিয়ে—সেই মরুর বংশধররা, যারা পররাষ্ট্রনীতিকে যেন একটি ব্র্যান্ডিং প্রচারাভিযান মনে করে। কল্পনাও করা যেত যে, অকল্পনীয় সম্পদ ও ঐতিহাসিক ধর্মীয় বৈধতাসম্পন্ন এই রাষ্ট্রগুলো অন্তত ইসরায়েলের ওপর—অথবা তাদের অভিভাবক ওয়াশিংটনের ওপর—তেল-চাপ, কূটনৈতিক পাল্টা জবাব, কিংবা অন্তত সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু বাস্তবে, তাদের প্রধান প্রতিক্রিয়া ছিল: মাঝে মাঝে একটি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন, কয়েক ট্রাক ত্রাণ পাঠানো (যার ছবি সুন্দরভাবে তোলা হয়), আর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু শোকাহত টুইট প্রকাশ। সমস্যাটা এই নয় যে তারা গাড়ির চালকের আসনে ঘুমিয়ে আছে—তারা বরং উল্টো দিকে গাড়ি চালাচ্ছে।
এই পেট্রো-রাজপুত্ররা ভেলকি দেখানোর গুরু হয়ে উঠেছে। জনসমক্ষে তারা “ফিলিস্তিনি ইস্যু” নিয়ে কথা বলে যেন এটি একটি প্রিয় পারিবারিক সম্পদ। আর গোপনে তারা চুক্তি স্বাক্ষর করে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, আর ইসরায়েলি প্রযুক্তি স্টার্টআপে বিনিয়োগ করে যেন আগামীকাল আর আসবে না—যা গাজার জন্য দুঃখজনকভাবে বাস্তব হয়েছে। তাদের ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন কোনো মুক্তির নয়, বরং এক ধরণের বাণিজ্যিক লিকুইডেশনের: একে রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে রূপান্তর করো, শোককে বুলডোজ করে দাও, তারপর সাগরপাড়ের সম্পত্তি হিসেবে বিক্রি করো।
তবে, তেল-সম্রাটদের কাছ থেকে নৈতিক দেউলিয়াপন আশা করা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু বড় কেলেঙ্কারিটি লুকিয়ে আছে অন্যত্র। বহু বছর ধরে মুসলিম বিশ্ব পাকিস্তান ও তুরস্কের দিকে তাকিয়ে থেকেছে—যুগ যুগ ধরে ন্যায়, সার্বভৌমত্ব ও প্রতিরোধের ইতিহাস বহনকারী শক্তিশালী সামরিক শক্তি হিসেবে। কিন্তু এখানেও বাস্তবতা যেন সেই আশা-ভঙ্গের এক নির্মম সংশোধনী।
পাকিস্তান, উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছে নিজেকে বাহবা দিতে, এই বলে যে তারা “বৃহত্তর ভারতকে ঠেকাতে পেরেছে” সর্বশেষ সীমান্ত উত্তেজনায়। বিমানবাহিনীর জেট উড়েছে। বিশ্লেষকেরা দৃঢ়তা প্রশংসা করেছে। রাজনীতিবিদরা জাতীয় সম্মান নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছে। অথচ যখন গাজার আকাশে ইসরায়েলি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান শিশুদের বোমায় ছিঁড়ে ফেলছিল, তখন পাকিস্তানের “বিমানযোদ্ধারা” দৃশ্যপটে ছিল না। বুঝা গেল, এই তথাকথিত প্রতিরোধ কেবল তখনই সম্ভব যখন প্রতিপক্ষ ওয়াশিংটনের আশীর্বাদপুষ্ট নয়।
ব্যঙ্গাত্মক ব্যাপারটা ভুলে যাওয়া চলবে না: যখন ভারত নাকি একটি “লাল রেখা” অতিক্রম করে, তখন পাকিস্তান ছিল জেট স্ক্র্যাম্বল ও পাল্টা হামলার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু যখন একটি বাস্তব গণহত্যা বাস্তব সময়ে শুরু হলো, সেই দখলদার রাষ্ট্রকে ঘিরে যার যুদ্ধাপরাধের দীর্ঘ ইতিহাস আছে, তখন পাকিস্তানের সামর্থ্য সীমাবদ্ধ রইল কিছু জাতিসংঘ ভাষণ, কিছু হ্যাশট্যাগ, আর একটি সময়মতো দোয়া মাহফিলের মধ্যে। যেসব জেনারেল দিল্লির দিকে মুহূর্তেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে দিতে পারেন, তারা হঠাৎ করে “কূটনৈতিক জটিলতা” আর “কৌশলগত হিসাব-নিকাশে” বাঁধা পড়ে গেলেন। সহজভাবে বললে, এই তো কাপুরুষতা—উর্দি পরে শুধু রঙ বদলেছে।
অন্যদিকে তুরস্ক দেখায় এক বিস্ময়কর ভূরাজনৈতিক নাটক। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলেছেন মুসলিম ইস্যুতে সাহসী প্রতিরক্ষাকারীর পরিচয়ে। তিনি ২০০৯ সালে দাভোসে শিমন পেরেজের ওপর চটে গিয়ে মঞ্চ ছেড়েছিলেন—সে ঘটনাটি আজও লোকমুখে। তার ভাষণগুলো অনেক সময় জুমার খুতবার মতো শোনায়। যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা সামান্য মাত্রাতেই পৌঁছেছিল, তখন তুর্কি বাহিনী “ভ্রাতৃত্বের সমর্থনে” প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলে খবর এসেছিল। অথচ গাজার জন্য, সে রকম কোনো ভ্রাতৃত্বের নমুনা দেখা যায়নি।
ভাবা যেত, গাজার ভৌগোলিক নিকটতা বিবেচনা করে—তুর্কি বিমানঘাঁটি থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার পথ—এরদোয়ানের সামরিক বাহিনী অন্তত একটি মানবিক এয়ার করিডোর, একটি নো-ফ্লাই জোন, বা প্রতীকি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে হত্যাযজ্ঞ থামাতে। কিন্তু না। আঙ্কারার এই “সুলতান” আগ্রাসন থামাতে নয়, কেবল আগ্রহী আগুনে ঝাঁঝালো বক্তব্য দিতে এবং কৌশলগত নিষ্ক্রিয়তা বজায় রাখতে। তার ড্রোন পৃথিবীর নানা স্থানে উড়ে বেড়ায়, কিন্তু যেখানে সত্যিকারের প্রয়োজন, সেখানে নয়। তার মিত্রতা বাতাসের মতো দিক বদলায়। তার “উম্মাহ” ভাবনার সীমা যেন শুধু বসফরাস পর্যন্ত। এবং এখন, সেই ভীরুতার ঝড় আমরা নিজেরাই কুড়াচ্ছি।
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক তাণ্ডবের কোনো জবাবদিহিতা না থাকার ফলে নেতানিয়াহু শুধু সাহসী হননি—তিনি উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন। মুসলিম বিশ্বের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর প্রতিরোধ না থাকায়, এবং ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে নিঃশর্ত সমর্থন পেয়ে, তেল আবিব গাজা ধ্বংসের সীমা পেরিয়ে ইরানের দিকেও উসকানি দিতে শুরু করেছে। বিমান হামলা, গুপ্তহত্যা, সাইবার আক্রমণ—এসব এখন ইসরায়েলের নিয়মিত পররাষ্ট্রনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেন গোটা অঞ্চলটি একটা ভিডিও গেম এবং তেল আবিব তার বেপরোয়া খেলোয়াড়। এটাই ঘটে যখন একটি পরমাণু-সজ্জিত বর্ণবাদী রাষ্ট্রকে লাগামহীনভাবে চলতে দেওয়া হয়—তারা নিজেদের অজেয় বলে ভাবতে শুরু করে।
গালফের রাজা-সুলতানরা, যারা নিজেদের সার্বভৌমত্বের রক্ষক বলে দাবি করে, কিছু না করেই গোটা অঞ্চলটিকে আগুনে ভরে তুলেছে—এবং এখন সেই আগুনে তারাও দগ্ধ হতে যাচ্ছে।
আর যেটা এই বিশ্বাসঘাতকতাকে আরও বেদনাদায়ক করে তোলে, তা হলো—এই অবস্থার পরিণতি রোধ করা এতটাও কঠিন ছিল না।
কেবল একটি হুমকি—একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধের ইঙ্গিত, এমন একটি বার্তা যে নির্দিষ্ট লাল রেখা অতিক্রম করা যাবে না—এটুকু করলেই হয়তো ইসরায়েলের আক্রমণ কিছুটা হলেও সংযত করা যেত। এখানে তেল আবিব আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে প্রতিরোধ, পরিণতি, এবং গণহত্যার খরচটা খুবই বেশি করে তোলার কথা। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো চেষ্টা পর্যন্ত করেনি।
আর যারা বলে যে এই দেশগুলো পশ্চিমা প্রতিশোধের ভয়ে অচল হয়ে পড়েছিল—তারা আমাদের বিভ্রান্ত করছে।
পশ্চিমা বিশ্ব, তাদের যতই গর্জন থাকুক না কেন, সর্বশক্তিমান নয়। তারা একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই রাজনৈতিকভাবে দুর্বল, অভ্যন্তরীণভাবে অস্থির, এবং পরিপূর্ণ চাপের মধ্যে আছে। তাদের লাল রেখাগুলো কোনো ঐশী আদেশ নয়; সেগুলো চ্যালেঞ্জযোগ্য, দরকষাকষির উপযোগী—কখনো কখনো হাস্যকর পর্যন্ত।
যেটার অভাব, তা সুযোগ নয়—ইচ্ছাশক্তির। এই মুসলিম শাসকরা অসহায় নয়। তারা সহযোগী। তাদের নীরবতা কোনো দুর্ঘটনা নয়—এটা কৌশলগত।
দশকের পর দশক ধরে, মুসলিম শাসকরা “জীবন রক্ষা সর্বাগ্রে”, “ক্রোধের চেয়ে আনুগত্য উত্তম”—এই মতবাদে বিশ্বাস করে এসেছে। তারা ওয়াশিংটনের রোষে পড়ার ভয় করে, নিষেধাজ্ঞার ভয় করে, “দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র” তকমা পাওয়ার ভয় করে।
কিন্তু এর চেয়েও বেশি, তারা নিজেদের জনগণকে ভয় পায়। তারা জানে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত অবস্থান তাদের জনগণকে এমনভাবে উদ্বেলিত করতে পারে, যেটা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
তাই তারা বেছে নেয় ভীরুতার পথ: কৃত্রিম উদ্বেগ, সুচারু নিষ্ক্রিয়তা, এবং ক্ষমতার নৌকাকে না হারানোর প্রতিজ্ঞা।
এই পাপাচারী জোট—স্বৈরশাসকদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকতার—মুসলিম বিশ্বকে এক ‘অক্ষমতার থিয়েটারে’ পরিণত করেছে।
শাসকরা কেফিয়ে পরে ঘুরে বেড়ায়, জনগণ শোকের পোশাক পরে। জেনারেলরা বুক ফুলিয়ে হাঁটে, শহীদদের লাশ গাদা হয়ে জমে।আর তখন গাজা পুড়তে থাকে।
তেতো সত্য হলো—মুসলিম শাসকরা আজ উপনিবেশিক সহিংসতার ঝাড়ুদার হয়ে উঠেছে। ওরা ধ্বংসযজ্ঞ থামায় না, বরং পরে এসে ময়লা পরিষ্কার করে। তারা সম্মেলন ডাকে, অথচ সেই সময়েই হাসপাতাল বোমায় উড়ে যায়। তারা বিবৃতি দেয়, আর শিশুদের কবর দেওয়া হয় গণকবরে। তারা এক হাতে ত্রাণ পাঠায়, আর অন্য হাতে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মেলে। কিন্তু ইতিহাসের স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী।
একদিন স্কুলের বাচ্চারা এই যুগের কথা পড়বে এবং জিজ্ঞেস করবে: “গাজা যখন মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছিল, তখন মুসলমানরা কোথায় ছিল?” উত্তর হবে: প্রেস রিলিজে, ফটোশুটে, আর নৈতিক ভীরুতায়। তারা দেখবে যে মুসলিম বিশ্বের শাসকরা, যারা ছিল সেনাবাহিনী, সম্পদ, আর ভাষণের মালিক, তারা বেছে নিয়েছিল বিশ্বাসঘাতকতার পথ। তারা দেখবে, কুদসের রক্ষকরা সেই সময়ে নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তারা জানবে, ফিলিস্তিন শুধু শত্রুদের দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতা হয়নি, বন্ধুদের দ্বারাও পরিত্যক্ত হয়েছে। আর যেদিন সেই জবাবদিহির দিন আসবে, সেদিন কোনো সোনালী পাতার কুরআন কিংবা প্রাসাদের খুৎবা দিয়ে পরিত্রাণ মিলবে না। যারা কিছু করতে পারত—কিন্তু করল না—তাদের বিচার হবে তাদের কথার ভিত্তিতে নয়, বরং তাদের নিষ্ক্রিয়তার ভিত্তিতে। গণহত্যার সময় নিরপেক্ষতা মানে হলো সহযোগিতা। এবং এমন অশুভতার সামনে নীরবতা শুধু বধিরতাই নয়— এটা অভিশপ্ত। -অধ্যাপক জুনাইদ এস. আহমাদ (আইন, ধর্ম এবং বিশ্ব রাজনীতি বিষয়ক শিক্ষক ও সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ ইসলাম অ্যান্ড ডিকলোনাইজেশন (CSID) এর পরিচালক)
[এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব এবং দা সানরাইজ টুডে‘র সম্পাদকীয় নীতির সাথে তা প্রতিফলিত হয় না।]