গাজায় এতিমদের চোখেমুখে কেবলই বিভীষিকার স্মৃতি

Gazaগাজায় ইসরাইলের ৫১ দিনের হামলায় এক হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি শিশু এতিম হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। সরকারি ভাষ্যমতে, ওই হামলায় দুই হাজার ১৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১১ হাজার আহত হয়েছেন। প্রায় অর্ধেক গাজাবাসী বাস্তুহারা হয়েছেন। এ ছাড়া হাজার হাজার বাড়ি, মসজিদ, হাসপাতাল ও সমাধি বিধ্বস্ত হয়।
জাতিসঙ্ঘ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরাইলের ‘অপারেশন প্রটেকটিভ এজ’ নামে অভিযানের ফলে গাজায় নতুন করে ১৫ শ’  শিশু এতিম হয়।
কোনো কোনো পরিবারে মা-বাবার সাথে অন্য ভাইবোনেরাও নিহত হয়। মিডল ইস্ট মনিটরে বিসান দাহের (৮) নামে এমন এক শিশুর কথা তুলে ধরা হয়। ইসরাইলি হামলায় তার মা-বাবা ও চার ভাইবোন নিহত হন। ছোট্ট এই মেয়েটি জানায়, ‘আমরা বাসায় বসেছিলাম। তবুও তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমাদের কাছে রকেট ছিল না। আমার মা, বাবা ও আমার সব ভাইবোন বেহেশতে  চলে গেছেন।’
ইসরাইলি হামলার পর সে ছয় ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়েছিল। পরে হাসপাতালকর্মীরা তাকে টেনে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তার অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। সে জানায়, আমার পুরো জ্ঞান ছিল, তবে চোখ ছিল বালুতে ঢাকা। আমি তখন আমার মাকে দেখতে চেয়েছিলাম।
দাহের এখন তার বিবাহিত বোন নোহার সাথে থাকে। তার চোখে কেবলই সেই দিনের বিভীষিকা ভাসে। তার কথা বলা, তার চলাফেরায় সেই আতঙ্কই দেখা যায়।
জাতিসঙ্ঘ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় ইসরাইলি হামলার কারণে অন্তত তিন লাখ ৭৩ হাজার শিশু মনোস্তাত্ত্বিক জটিলতায় পড়েছে। কোনো কোনো শিশু এ নিয়ে তিনবার যুদ্ধের বীভৎসতার মুখে পড়ল। ছয় বছরের মধ্যে এ নিয়ে তিনবার ইসরাইল গাজায় বড় ধরনের হামলা চালায়।
গাজার একমাত্র বড় এতিমখানাটিতে ১২০ এতিম বাস করে। আল-আমল এতিমখানাটির কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা আরো এতিমকে ভর্তি করতে প্রস্তুত।
এতিমখানাটির পরিচালক আইয়াদ আল-মাসরি সংবাদমাধ্যমকে আলী (১০) ও ইব্রাহিম আল-শিমবার (১১) নামে দুই এতিমের কাহিনী তুলে ধরেন। তাদের এক স্বজন তাদের জাতিসঙ্ঘের একটি স্কুলে নিয়ে যায়। সেখানেও ইসরাইলি হামলা হয়। এতে আলী নিহত হয়, ইব্রাহিম হয় আহত।
এই প্রতিবেদক গাজা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমির হামাদের (১১) দেখা পান। সে এবং তার চার ভাইবোন তাদের দাদির সাথে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে। ইসরাইলি বিমান হামলায় তাদের মা-বাবা মারা যান, তাদের বাড়িটিও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়।
ভাইবোনদের মধ্যে আমিরই বড়। ওই হামলা মা-বাবার সাথে সে-ও মারা যাবে বলে তার মনে হয়েছিল। সেই দিনের কথা মনে পড়লে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। সে জানায়, তারা [তার মা-বাবা] সে দিন সকালে নাশতার পর কফি পান করছিলেন। তখনই একটি রকেট তাদের বাড়িতে হানা দেয়। আমি জানতাম, তারা মারা গেছেন।’
ছোটভাই নূরকে (৬) দেখিয়ে সে জানায়, ‘আমি দেখলাম সে রক্তের সাগরে সাঁতার কাটছে। তাকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।’
আমির ও তার অপর তিন ভাইবোন অলৌকিকভাবে অক্ষত থেকে যায়। কিন্তু ওই বাড়িতে অবস্থানকারী তার অপর চার স্বজন নিহত হন। ছোট্ট আমির জানায়, আমি আমার ভাইবোনদের যতœ নেবো। তবে আমার ভয় হচ্ছে, আমার মা-বাবা আর কখনো বাড়ি ফিরবে না।
ওই পাঁচ এতিম এখন তাদের ৬০ বছর বয়সী দাদির সাথে বাস করছে। ওই এলাকায় তার দাদির বাড়িটিও হামলায় বিধ্বস্ত। তিনি জানান, আমি কখনো তাদের ছেড়ে যাবো না। তবে আমি নিশ্চিত, তারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে। কারণ তাদের দাদার বয়স ৭০-এর বেশি, তার চাকরিও নেই।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button