ঈদুল আজহার গুরুত্বপূর্ণ আমল

মো: আমানুল্লাহ আমান: ‘ঈদুল আজহা’ মুসলিম উম্মাহর জীবনে অন্যতম একটি ধর্র্মীয় উৎসব- আত্মত্যাগ ও মানবতার বার্তা নিয়ে দুয়ারে হাজির হয় প্রতিবছর। জিলহজ্বের দশ তারিখে মহাসমারোহে পালিত হয় বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য ও সৌহার্দ্যপূর্ণ এ ইবাদত। অন্যদিকে ‘কুরবানি’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে নৈকট্য অর্জন করা, কারো কাছাকাছি যাওয়া। আর তার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পশু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জবাই করা। ঈদের দিনের বিশেষ কিছু আমল:
মিসওয়াক ও গোসল করা
মিসওয়াক ও গোসল স্বাভাবিক অবস্থায় সুন্নাত। ঈদের দিন এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা, ঈদের নামাজে বহু মানুষের সমাগম হয়। সেখানে পূর্ণ পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হয়ে উপস্থিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘নবী আলাইহিস সালাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন গোসল করতেন।’ (নাসবুর রায়াহ ১/২১৬)।
উত্তম পোশাক পরিধান
ঈদের দিন নিজের পোশাকাদির মধ্যে থেকে উত্তম ও সুন্দরটা পরিধান করা সুন্নত। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- ‘নবী আলাইহিস সালাম প্রত্যেক ঈদে ডোরাকাটা কাপড় পরিধান করতেন। (সুনানুল বায়হাকী-৬৯৩২)।
নামাজের আগে কিছু খাওয়া
ঈদুল ফিতরের দিন নামাজের উদ্দেশ্যে ঈদগাহে যাওয়ার আগে কিছু খেয়ে নেওয়া মুস্তাহাব। ঈদুল আজহার দিন এমনটি মুস্তাহাব নয়; বরং কুরবানি হয়ে যাওয়ার পর দিনের প্রথম খাবার হিসেবে কুরবানির গোসত খাওয়া মুস্তাহাব। ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করা জায়েজ নয়।
ফেরার পথে রাস্তা পরিবর্তন
ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক রাস্তা এবং ঈদের নামাজ শেষ করে অন্য রাস্তায় ঘরে ফেরা মুস্তাহাব। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, নবী আলাইহিস সালাম ঈদের দিন (ঈদের থেকে ফেরার পথে) রাস্তা বদল করতেন। (বুখারী: হাদীস নং ৯৮৬)।
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া-আসা
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যেতেন। তাঁর সামনে একটি বর্শা বহন করে নেওয়া হতো এবং সেটা নামাজের সময় তাঁর সামনে ‘সুতরা’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো। (বায়হাকী: হাদীস নং ৬৩৬৪)
অন্য বর্ণনায় আছে, নবী আলাইহিস সালাম ঈদগাহে যেতেন পায়ে হেঁটে, ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরতেন পায়ে হেঁটে। (প্রাগুক্ত: হাদীস নং-৬৩৬৫)।
ঈদগাহে যাওয়া-আসার পথে তাকবীর বলা
ঈদগাহে যাওয়ার পথে উঁচু আওয়াজের তাকবীর বলা সুন্নত। নাফে (রা.) বর্ণনা করেছেন যে-
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) উভয় ঈদের নামাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হতেন। ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত (রাস্তায়) তাকবীর বলতেন। ঈদগাহে পৌঁছেও ইমাম নামাজ আরম্ভ করার আগ পর্যন্ত তিনি তাকবীর বলতেন। (সুনানে দারাকুতনী: হাদীস নং ১৭৩১)।
আবু আব্দুর রহমান সুলামী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, সাহাবায়ে কেরাম ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহায় অনেক বেশী তাকবীর বলতেন। (হাকেম: হাদীস নং ১১০৭)।
এই তাকবীরকে তাকবীরে তাশরীক বলা হয়। তাকবীরটি হচ্ছে- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহ আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’
শিশুদেরকে ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া
বড়রা ঈদগাহে যাওয়ার সময় ছোটদেরকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। এটাও একটি মুস্তাহাব আমল। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণিত হাদীসে আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই ঈদের দিন (ঈদগাহের উদ্দেশ্যে) বের হতেন ফযল ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ, আব্বাস, আলী, জাফর, হাসান, হোসাইন, উসামা ইবনে যায়েদ, যায়েদ ইবনে হারেসা ও উম্মে আয়মানের ছেলে আয়মানকে সঙ্গে নিয়ে। উঁচু আওয়াজে তাকবীর বলতে বলতে কামারদের রাস্তা ধরে তিনি ঈদগাহে যেতেন এবং নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর বাড়ি আসতেন মুচিদের রাস্তা দিয়ে। ( সহীহ ইবনে খুযায়মা: হাদীস নং- ১৪৩১)
ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায়
ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্বাদা। বুখারীর বর্ণনায় আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহে যেতেন।
মসজিদে ঈদের নামাজ
যদি বৃষ্টিপাত হতে থাকে, অথবা বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা থাকে, তাহলে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়া জায়েজ। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে- একবার ঈদের দিন বৃষ্টি হচ্ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবীদেরকে নিয়ে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। (আবু দাউদ: হাদীস নং-১১৬২)
কুরবানির হুকুম
অনেক আলেমের মতে কুরবানি সুন্নত। তারা নীচের হাদীসটির মাধ্যমে দলিল পেশ করে থাকেন। নবীপত্মী উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
যখন তোমরা যিলহজ্বের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন চুল, নখ ইত্যাদি কাটা বন্ধ রাখে। (মুসলিম: হাদীস নং-৫২৩৪)। এই হাদীস ইঙ্গিত করে যে, করবানি মানুষের ইচ্চাধীন। ইচ্ছা হলে করবে, না হলে করবে না।
বেশির ভাগ হানাফী আলেমের মতে কুরবানি ওয়াজিব। এই দাবির প্রথম দলিল হচ্ছে পবিত্র কুরআনের আয়াত। আল্লাহ তায়ালা সূরা কাউসারে বলেছেন- ‘আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি, সুতরাং তোমরা রবের জন্য নামাজ পড়ো এবং কুরবানি করো।’ (সূরা কাউসার: ১,২)।
একটি হাদীসে আছে, আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন- ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, সামর্থ্য থাকার পরও যে ব্যক্তি কুরবানি করবে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে-কাছেও না আসে।’ (মুসনানে আহমদ: হাদীস নং-৮২৭৩)।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button