ব্রিটিশদের কাছে আকর্ষণ হারাচ্ছে ‘কারি হাউস’

দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিটিশ রন্ধনশিল্পের অন্যতম আকর্ষণ ছিল কারি হাউসগুলো। কিন্তু এগুলো দিন দিন তাদের জৌলুস হারাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের রুচির পরিবর্তন ও অন্যন্য অনেক বিকল্প তৈরি হওয়াই এর কারণ বলে জানিয়েছেন মাইকেলিনের তালিকাভূক্ত একজন শেফ।
এ বিষয়ে বার্মিংহামে ভারতীয় রেস্তোরাঁ ‘ওফিম’ এর পরিচালক আক্তার ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য-সচেতন নতুন প্রজন্মের চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার কারণে প্রতি সাপ্তাহে কিংবা মাসে মাসে কারি হাউসগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই শেফ বলেন, ‘গত ৪০ বছর ধরে কারি হাউসগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও এখন সেগুলো আকর্ষন হারাচ্ছে।’

২০১০ সালে গর্ডন রামসের ‘এফ ওয়ার্ড’ এ ‘সেরা স্থানীয় রেস্তোঁরা’ ও ২০১১ সালে বিবিসি’র গ্রেট ব্রিটিশ মেনুর খেতাবজয়ী আক্তার আরও বলেন, ‘আমি সবসময় ব্রিটিশ কারি শিল্পকে উৎসাহিত করেছি, তবে প্রায় ১০ বছর আগে আমি সমস্যায় পড়েছিলাম কারণ আমি বলেছিলাম যে ভারতীয় খাবারগুলো আরও ভাল হওয়া দরকার। সে সময় রাতে ভারি খাবার এবং সকালে খারাপ পেটের চল ছিল। কিন্তু এখন লোকেরা ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় খাবার এবং ব্রিটিশ তরকারীগুলির মধ্যে পার্থক্য দেখতে শুরু করেছে – যার কারণেই এত রেস্তোঁরা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’ রাতের হালকা খাবারের জন্য তরুণরা আরও স্বাহ্যসম্মত বিকল্পের সন্ধান করছেন। তাদের জন্য ভালো বিকল্প হয়ে উঠেছে বোম্বে ক্যাফে ডিশুমের মতো স্ট্রীট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো। সারা দেশেই তাদের অনেকগুলো শাখা রয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে তাদের বিক্রির পরিমান ২৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবার ঘরে পৌঁছে দেয়া প্রতিষ্ঠান ‘ডেলিভারু’র জনপ্রিয়তাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের বিক্রির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় খাবার রুটি এবং রোল।
আক্তার বলেন, ‘এখনও কিছু মূলধারার কারি হাউস রয়েছে, তবে নতুন, তরুণ সমাজ ভারতীয় স্ট্রিট ফুডের সংস্কৃতিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে যা, হালকা এবং স্বাস্থ্যকর।’ দক্ষিণ পশ্চিম লন্ডনে অবস্থিত ভারতীয় স্ট্রীট ফুড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সেলিব্রিটি হান্ট চিট চাট চায়ের শেফ তানিয়া রহমান বলেন, ‘কেবল তরুণরাই খাবার সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠছে না, বরং বয়স্ক ব্রিটিশরাও ‘মুরগির টিক্কা মশালা’র মতো গুরুপাক খাবার পরিহার করছেন।’
চ্যানেল ৪ এর ডকুমেন্টারি ‘দ্য কারি হাউস কিড’ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভারতীয় রেস্তোরাঁগুলো ৯০ শতাংশই বাংলাদেশিরা চালায়। আগামী ১০ বছরের মধ্যে এর অর্ধেকই বন্ধ হয়ে যাবে। পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেনে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বাস। সেখানে এখন মাত্র ২০টি কারি হাউস চালু রয়েছে। ১৯৭০ এর দশকে এই সংখ্যা ছিল ৭০টিরও বেশি। শুধুমাত্র ২০১২ ২০১৬ সালের মধ্যেই ব্রিটেনে প্রায় ২ হাজার কারি হাউস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০১৭ সালে এশিয়ান ক্যাটারিং ফাউন্ডেশনের প্রধান সতর্ক করেছিলেন যে, আগামী ১০ বছরে ১৭ হাজারের মতো ভারতীয় রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button