প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান আর নেই
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় আলীয়া মাদরাসা মাঠে জানাযা
ইসলামি আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির, জামেয়া ইসলামিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান আর নেই ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১২টায় তিনি সিলেট নগরীর ঝেরঝেরি পাড়া বাসায় শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়েস হয়েছিল ৬৫ বছর। ১৯৫৩ সালের ৮ জুলাই সিলেটের গোলাপগঞ্জে তাঁর জন্ম।
শুক্রবার রাত ৩টায় নগরীর ঝেরঝেরি পাড়ার বাসা থেকে জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদরাসায় নেওয়া হয় প্রিন্সিপালের মরদেহ। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় আলীয়া মাদরাসা মাঠে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিস ও হাই প্রেশারসহ শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ৭ অক্টোবর তিনি চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দু’দিন আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমানের প্রতিষ্ঠিত সিলেটের জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সিলেট এমসি কলেজের অধ্যাপক সর্দার আলাউদ্দিন কর্তৃক পবিত্র কোরআন অবমাননা, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙা, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে সাহাবাদের অবমাননা, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে বিতর্কিত লেখিকা তাসলিমা নাসরিন কর্তৃক ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে কটাক্ক করে বই লেখা ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার সংগঠন সাহাবা সৈনিক পরিষদের ব্যানারে সিলেটে অসংখ্য সভা-সমাবেশ করেন। এছাড়াও দেশের নাস্তিক-মুরতাদবিরোধি আন্দোলনের সবসময়ই তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
১৯৭৪ সালে দেশের শীর্ষ আলেমদের তত্ত্বাবধানে সিলেটের কাজির বাজার এলাকায় সুরমা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী জামেয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া কাজির বাজার মাদরাসা। দারুল উলুম দেওবন্দের নীতিতে পরিচালিত এই মাদরাসা শুরু থেকেই সিলেবাসে বাংলা, ইংরেজিসহ জাগতিক বিষয় যুক্ত করে নতুন ধারার সূচনা করে।
অভিভক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনীতি থেকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ খেলাফত মসজিলের আমির নির্বাচিত হন প্রিন্সিপাল হাবীবুর রহমান। ২০১২ সালে ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশে খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক মৃত্যুবরণ বরণ করার পরে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তে দলের আমির নিযুক্ত হন মাওলানা হাবিবুর রহমান।
প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমানের শিক্ষা জীবনের শুরু ফুলবাড়ির বইটিকর প্রাইমারী স্কুল থেকে। পরে কিছুদিন রুস্তুমপুর কওমি মাদরাসায় পড়ে ভর্তি হন ফুলবাড়ি আজিজিয়া আলিয়া মাদরাসায়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ফুলবাড়ি মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে ফাজিল এবং ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিলেট আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক স্ত্রী, চার ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের জনক। তার বড় ছেলে মাওলানা মুসা বিন হাবীব জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদরাসার ভাইস প্রিন্সিপাল। দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা ইংল্যান্ড প্রবাসী। তৃতীয় ছেলে তারেক বিন হাবীব সিলেট মহানগর ছাত্র মজলিসের সভাপতি, চতুর্থ ছেলে তায়েফ বিন হাবীব ইংল্যান্ড প্রবাসী। তাঁর বড় জামাতা মাওলানা খতিব তাজুল ইসলাম ও দ্বিতীয় জামাতা মাওলানা আতাউর রহমান ইংল্যান্ড প্রবাসী, ছোট জামাতা মাওলানা সহল আল রাজি ব্যবসায়ী ও সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য।