শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক

Mujib১৫ আগস্ট শনিবার।  স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী।  জাতীয় শোক দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হচ্ছে।  এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুুল হামিদ এডভোকেট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।  সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।  দেশের সকল সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।  শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।  এর মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল কুরআনখানি এবং আলোচনা সভা।  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে ঢাকার ৩২নং ধানমন্ডির বাসভবনে সেনাবাহিনীর একদল তরুণ অফিসার ও জওয়ানদের হাতে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন।  ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।  পরবর্তীতে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়।  মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শোক দিবস পুনর্বহাল করা হয়।  এ উপলক্ষে আজকের দিনটি সাধারণ ছুটি পালিত হবে।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জে টুঙ্গীপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন।  ছাত্রজীবন থেকে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি করেন।  পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি সক্রিয়ভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত হন।  তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারের প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীন বাংলাদেশেরও প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এডভোকেট বলেন, বাঙালি জাতির শোকাবহ দিন আজ।  আমি এ দিনে শোকাহত চিত্তে গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার স্থপতি কালজয়ী শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের অম্লান স্মৃতির প্রতি।  জাতীয় শোক দিবসে পরম করুণাময় আল্ল¬াহর দরবারে সে দিনের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
অপরদিকে পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকা-ের শিকার হয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।  আমি সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।  ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও জনগণের নিকট থেকে তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি।  ১৫ কোটি বাঙালির অন্তরে তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার সংগ্রামী জীবনাদর্শ গ্রোথিত রয়েছে।
এদিকে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবসের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।  সংবাদপত্রগুলোতেও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।  মুক্তিযুদ্ধ, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।
১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ৪০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।  আগস্ট মাসের শুরু থেকে এ কর্মসূচি চলে আসছে।  তবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ব্যপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।  আজ শনিবার সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৪৫ মি. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ।  মহামান্য রাষ্ট্রপতিও প্রধানমন্ত্রীর এ কর্মসূচিতে যোগদান দিবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে আগমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকাল ৭টা ৩০মি: বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, কাজী জাফর উল্লাহ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি. এম মোজাম্মেল হক এমপি, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন, মির্জা আজম এমপি, এস. এম কামাল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থি থাকবেন।
টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা।  দুপুরে অস্বচ্ছল দু:স্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ।
বাদ আছর বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। আগামীকাল রোববার বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা।  সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
সৈয়দ আশরাফুলের আহ্বান: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি ১৫ আগস্ট ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button