দেখি বাংলার রূপ
শীতে আগমনী বার্তা এসে গেছে শেষ হেমন্তে। শীত মানেই বেড়ানোর মৌসুম। তাই চাইলেই এ মৌসুমে দেখে নেয়া যেতে পারে বাঙলার সুন্দর রূপ। লিখেছেন গাজী মুনছুর আজিজ।
দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া। সত্যি তাই, ছোট্ট হলেও ছয় ঋতুর এ দেশে চারপাশেই আছে নানা দর্শনীয় স্থান। আছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন।
আরও আছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৈকতপাড় কুয়াকাটা, বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদসহ নানা প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যের দর্শনীয় স্থান। এছাড়া এ দেশের আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আমাদের ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
সামনেই আসছে শীতের মৌসুম। আর শীত মানেই বাংলাদেশের পর্যটন বা বেড়ানোর মৌসুম। তাই চাইলে এ মৌসুমে দেখে নিতে পারেন বাংলার কিছুটা রূপ। তবে ঘুরতে বের হলে সবার আগে ভাবতে হবে, হাতে সময় আর বাজেট কত? কারণ, সময় কম থাকলে আশপাশে বা দিনে দিনে আসা যায় এমন স্থানে ঘুরতে যাওয়া ভালো। আর হাতে সময় থাকলে যেতে পারেন দূরে কোথাও।
তবে ঘুরতে বের হলে দলবেঁধে যাওয়া ভালো। এতে খরচ কম হয়। অন্যদিকে একা একা ঘোরার মজাও আলাদা। আর পারিবারিক ভ্রমণও অন্যরকম মজার।
ঘুরতে বের হলে আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সেটি হল যেখানে আগে যাওয়া হয়নি সেখানে যাওয়াকে প্রাধান্য দেয়া। তবে যেখানেই যান, সেখানে যাওয়ার আগে সেখানকার থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের সব ধরনের তথ্য জেনেই বের হওয়া উচিত। খুব ভালো হয়, যেখানে যাচ্ছেন সেখানে আগে কেউ গেছেন এমন কাউকে সঙ্গে নেয়া।
অথবা সেখানকার স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে সেখানকার তথ্য জেনে নেয়া। এছাড়া ভ্রমণ তথ্য নিয়ে বাজারে অনেক বই আছে। চাইলে সেসব বই দেখেও জানতে পারেন। আর এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেটে ভ্রমণের নানা তথ্য ও ছবি আছে। সেখান থেকেও তথ্য জেনে নিতে পারেন।
যারা সমুদ্র দেখতে পছন্দ করেন, তাদের সবার আগে যাওয়া উচিত কক্সবাজার। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত। এর পাশেই আছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। অথবা যেতে পারেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দেশ কুয়াকাটা। ঢাকা থেকে রাতের বাসে কক্সবাজার গিয়ে সারা দিন থেকে আবার রাতে ফেরা যাবে ঢাকার উদ্দেশে। তবে সেন্টমার্টিন গেলে আরও একদিন সময় লাগবে।
আর কুয়াকাটা গিয়ে এত কম সময়ে ফেরা যাবে না। কারণ, কুয়াকাটা যেতে হলে প্রথমে লঞ্চে বা বাসে পটুয়াখালী।
তারপর সেখান থেকে লোকাল বাসে কুয়াকাটা। তাই সেখানে যেতেই অনেক সময় লাগবে। অন্যদিকে পাহাড় যাদের কাছে টানে, তারা যেতে পারেন রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি। পাহাড়, অরণ্য আর আদিবাসীদের বর্ণিল সাজে সজ্জিত এ জনপদ।
এছাড়া সমুদ্র কিংবা পাহাড় যারা এড়িয়ে চলেন, তারা যেতে পারেন বনে-বাদাড়ে। আর বন দেখতে হলে প্রথমে আসতে পারেন সুন্দরবনে। এটি বিশ্বের একক বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। ঢাকা থেকে প্রথমে খুলনা, তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থার মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারেন সুন্দরবনে।
এছাড়া একা একা দিনে দিনে সুন্দরবনের স্বাদ পেতে যেতে পারেন করমজল। মোংলাঘাট থেকে ট্রলারে করমজল যেতে সময় লাগবে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। এছাড়া বিভিন্ন ভ্রমণ পরিচালনাকারী সংস্থার মাধ্যমে ঢাকা থেকেও সরাসরিও আপনি সুন্দরবনের উদ্দেশে আসতে পারেন।
অনেকেই ভাবেন, দেশের যে কোনো স্থানেই একা একা যাওয়া গেলে সুন্দরবন কেন যাওয়া যাবে না? আসলে তাদের ধারণা ভুল। কারণ, সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে হলে আপনাকে কমপক্ষে তিন-চার দিন সময় নিয়ে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে। আর সুন্দরবনে কখনও যে কোনো নৌকা বা ট্রলার নিয়ে একা একা বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যায় না।
তাই সুন্দরবনের মূল অংশে আপনাকে যেতে হলে ভ্রমণ পরিচালনাকারীদের সাহায্য নিতে হবে। অথবা নিজেদের ভাড়া করা লঞ্চ বা বড় ট্রলারেই যেতে হবে। আর লঞ্চ বা ট্রলার ছাড়া বন বিভাগ আপনাকে সুন্দরবনে একা একা প্রবেশের অনুমতিও দেবে না।
বন, সমুদ্র বা পাহাড় দেখা যাদের আছে, তারা আসতে পারেন সবুজ চা-বাগান দেখতে। সিলেট বিভাগজুড়ে রয়েছে অসংখ্য চা-বাগন।
তবে সবচেয়ে বড় ও বেশি চা-বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। রাতের ট্রেনে বা বাসে রওনা হয়ে সকালে নেমে সারাদিন চা-বাগান দেখে আবার রাতে ফেরা যাবে ঢাকায়। চাইলে শ্রীমঙ্গলে দিনে দিনে গিয়েও দেখে আসা যাবে। দেশের বিখ্যাত হাওরগুলোও রয়েছে এ চায়ের দেশে। হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, পাশুয়া, বাইক্কাসহ বিভিন্ন হাওরও দেখে আসতে পারেন সিলেট অঞ্চলে গেলে।
এছাড়া সিলেট অঞ্চলজুড়ে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য উদ্ভিদ উদ্যান বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এসব উদ্ভিদ উদ্যান বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। চা-বাগান আর বনাঞ্চল ছাড়াও সিলেট অঞ্চলে রয়েছে ছোট-বড় অনেক ঝরনা। মাধবকুণ্ড ঝরনাটিও আছে এ অঞ্চলের মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায়।
আর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বা পুরাকীর্তি দেখার জন্য আছে খুলনার ষাটগম্বুজ মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদ, দিনাজপুরের কান্তিজিউর মন্দির, কুমিল্লার ময়নামতি, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, বগুড়ার মহাস্থানগড়, ফরিদপুরের মথুরা দেউর, রাজশাহীর সোনামসজিদ, তোহাখানা, পুঠিয়া রাজবাড়ি, নাটোরের রাজবাড়ি, জমিদারবাড়ি, গণভবনসহ দেশের বিভিন্ন পুরাকীর্তির নিদর্শন।
এছাড়াও হরিণের রাজ্য দেখতে হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ, পাখির রাজ্য দেখতে সিলেটের হাওর ও ভোলা-নোয়াখালীর উপকূলের বিভিন্ন কাদাচর যেতে পারেন।
আর চাইলে আপনি আপনার জেলাটাই ঘুরে দেখতে পারেন শীতের এ মৌসুমে। কারণ, আমাদের প্রতিটি জেলারই রয়েছে নানারকম ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের চারপাশে যেদিকেই চোখ বুলাবেন সেদিকেই দেখা মিলবে রূপসী বাংলার মায়াবী রূপ।