গুনাহ মাফ ও সওয়াব অর্জনের সময়

Duwaরেহানা বিনতে আলী: ইসলাম শান্তির অপর নাম। আর এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মাধ্যম হিসেবে মহান রাব্বুল আলামিন দিয়েছেন পাঁচটি বুনিয়াদ। এ বুনিয়াদ বা ভিত্তি হলো- ঈমান, সালাত, সিয়াম, হজ ও জাকাত। অর্থাৎ মূল পাঁচটি স্তম্ভের তৃতীয়টি হলো সিয়াম বা রোজা। আর এই রোজাই হচ্ছে সবচেয়ে গোপন ইবাদত। কারণ সালাত, হজ, জাকাত প্রকাশের বা জানাজানির সুযোগ আছ, কিন্তু রোজা এমন একটি ইবাদত, শুধু বান্দা ও স্রষ্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আর এ জন্য এর পুরস্কারও অনেক বেশি এবং বিশেষ ধরনের। রাসূল সা: বলেছেন, মানুষের প্রতিটি কাজের ফল আল্লাহর দরবারে কিছু না কিছু বৃদ্ধি পায়, একটি নেককাজের ফলে ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে; কিন্তু আল্লাহ বলেন, রোজাকে তার মধ্যে গণ্য করা হবে না, কারণ রোজা শুধু আমার জন্য রাখা হয়, আর তাই আমিই এর প্রতিফল দান করব’ (হাদিসে কুদসি)।
অতএব, এত বড় নেয়ামতের ভাগিদার হতে হলে অবশ্যই সে ইবাদতটিও হওয়া চাই খাঁটি, নিরেট, নির্ভেজাল ও সর্বোত্তম মানের। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ইবাদতের সুফল আমরা বর্তমানে খুব কমই পাচ্ছি। কারণ, আমাদের ইবাদতগুলোর খুলুসিয়াত দিন দিন অনেকটাই কমে গেছে। আমরা শুধু কয়েকটা সিজদা, দিনে খাওয়া ত্যাগ বা উপবাস, কয়েকটি কাপড় বিলির মাধ্যমেই ইবাদতকে সীমাবদ্ধ করে রাখছি। অথচ ইসলাম হলো ঈড়সঢ়ষবষব পড়ফব ড়ভ ষরভব, পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আর তা যদি আমরা দিন দিন সঙ্কীর্ণ ও মিশ্রিত করে ফেলি তাহলে প্রতিবিধানের আশা কিভাবে করব? অর্থাৎ ইবাদতগুলোর নিয়ত, জ্ঞান ও বাস্তবতার ওপর গ্রহণযোগ্য হবে।
মূলত রোজার মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা পরহেজগারি অর্জন করা। আল্লাহ বলেন, ‘আশা করা যায় এর মাধ্যমে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’ অর্থাৎ দুনিয়ার সব ফিতনা-ফাসাদ, শিক্ষা, শিরক, কুফরি, সুদ-ঘুষ, জিনা-ব্যভিচার, অত্যাচার-জুলুম, গুম-খুন-হত্যা ইত্যাদি কাঁটা থেকে নিজেকে, সমাজ তথা দেশকে বাঁচিয়ে চলার নামই হলো তাকওয়া এবং সর্বোপরি আল্লাহকে ভয় করে দুনিয়াতে বাস করার নামই হচ্ছে তাকওয়া। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমরা যদি আল্লাহর আইন ভঙ্গ করি, অসৎ কাজে মানুষকে উৎসাহিত করি, ইসলাম ধ্বংসের কাজে ঐক্যবদ্ধ হই আবার সিয়াম সাধনাও করি তাহলে তা উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর নামান্তরই হবে। আর এভাবে সারা মাস রোজা রেখে এবং বছরের অন্যান্য সময়ে রোজা রাখলেও বাস্তবে তা কোনোই কল্যাণ বয়ে আনবে না। অর্থাৎ অনেক ভালো খাবার বা পুষ্টিকর খাবার নামীদামি খাবার খেলেই যেমন শরীরের পূর্ণতা আসবে না যদি তা বমি করে ফেলে দেয়া হয়, ঠিক তেমনি নামাজ-রোজা দ্বারা জীবনের কৃতকর্ম পরিবর্তন না করলে তাকওয়া হাসিল করা সম্ভব নয়। রাসূল সা: বলেন, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে কেবল ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া যার ভাগ্যে অন্য কিছুই জোটে না। তেমনি রাতে ইবাদতকারী অনেক মানুষও এমন আছে, যারা রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই লাভ করতে পারে না। যে সিয়াম সাধনায় রত, যে আল্লাহর ইবাদতে তৎপর, তার সব প্রার্থনা আল্লাহ পাকের দরবারে গ্রহণ করা হয় এবং তার যাবতীয় প্রয়োজনের আয়োজন করা হয়। যেমন অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত- ‘আল্লাহ পাক তার আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের নির্দেশ দান করেন যে, তোমাদের নিজস্ব ইবাদত মুলতবি করে রোজাদারের দোয়ার সময় আমিন আমিন বলতে থাকো।’
আর এই রমজানকে আলোকিত করেছেন শুধু কুরআনের জন্যই। অর্থাৎ আল্লাহ রমজানকে আলোকিত করেছেন, মর্যাদা দান করেছেন, নিয়ামতে ভরে দিয়েছেন, রহমত-বরকত-নাজাতের দ্বার খুলে দিয়েছেন কুরআন নাজিলের জন্য। আর এ মাসকে, রাতকে (কদর) এত মর্যাদা ও তাৎপর্য দিয়ে দিয়েছেন। তাই আমাদের উচিত, এই কুরআনের মাসের হক আদায় করা গুনাহ মাফ চাওয়ার মাধ্যমে, তাকওয়া হাসিলের মাধ্যমে এবং পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে। সর্বোপরি আমাদের অবশ্যকর্তব্য হলো- কুরআনি সমাজ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং ধীরে ধীরে তা কায়েম করা।
লেখক : প্রবন্ধকার

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button