মুরসিকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে : আল বারাদেই

Morsiমিসরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতচ্যুত করার পর দু’মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এ দু’মাসে মিসরে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। তবে এর মধ্যে উদারপন্থী ও ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত মুহাম্মদ আল বারাদেইর সাম্প্রতিক বক্তব্য সবার নজর কেড়েছে। মোবারকের শাসন আবার ফিরে আসার কথা উল্লেখ করে আল বারাদেই বলেছেন, মোহাম্মদ মুরসি সত্য ও ন্যায়ের পথে ছিলেন এবং বাস্তবতা হচ্ছে—তার বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র হয়েছে। আল বারাদেইর আগে মুরসি সমর্থক বিক্ষোভকারী জনতার ওপর সেনাবাহিনীর নৃশংস দমন অভিযান ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে অস্থায়ী সরকারের প্রধান আদলি মানসুরের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, মিসরের সেনাবাহিনী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম ও অর্থনৈতিক সেক্টরে হোসনি মোবারকের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে এবং এ কারণে মুরসিকে সরিয়ে দেয়া সহজ হয়েছে। মিসরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পেছনে কয়েকটি আরব দেশ, এমনকি আমেরিকা ও ইসরাইলেরও হাত ছিল বলে আল বারাদেই জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আল বারাদেইর ব্যক্তিত্ব, তার অবস্থান কিংবা হোসনি মোবারকের পতনের পর তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কেমন ছিল—সে বিষয়টির চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মিসরের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও গণহত্যার ঘটনার ব্যাপারে আল বারাদেইর অবস্থান স্পষ্ট হয়েছে। আল বারাদেই আবারও হোসনি মোবারক যুগের প্রত্যাবর্তন এবং দেশটির রাজনৈতিক ও প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে হোসনি মোবারকের অনুগতদের শক্তিশালী অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। মিসরের সেনাসমর্থিত অস্থায়ী সরকারও মোবারকপন্থীদের প্রভাব ও আধিপত্যের বিষয়টি স্বীকার করে। কারণ অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও উচ্চপদে যেসব ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই সাবেক শাসক হোসনি মোবারকের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অর্থাত্ মিসরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হাজেম আল-বেবলাওয়ির মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যই সাবেক স্বৈরশাসক মোবারকের অনুগত। বলা যায়, মোবারক আমলের মতো জরুরি অবস্থা মিসরে আবারও ফিরে এসেছে এবং দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী মুরসি সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে গুলি চালাচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, মিসরের বর্তমান সরকার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার নামে বৃহত্ রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মোবারক আমলে মিসরে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, এখনও সে অবস্থাই বিরাজ করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে প্রেসিডেন্ট মুরসি কিছু বিষয়ে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলেও বা বিষয়গুলো উপেক্ষা করলেও পরিস্থিতি এমন ছিল না যে, তার বিরুদ্ধে সেনা অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছিল। মিসরে অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আল বারাদেই বলেছেন, দেশের কোনো কোনো মহল বিদেশিদের যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে মুরসি সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চালিয়েছিল। এজন্য তারা মিসরের বিভিন্ন শহরে গোপন বৈঠকও করে। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জনগণকে মুরসির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামিয়ে আনা হয় এবং সেনাবাহিনী এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই তার দল মুসলিম ব্রাদারহুড নেতাকর্মীরা সেনাবাহিনীর রোষানলে পড়েন। এমন কোনো দিন নেই যেদিন মুরসি সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়নি। মিসরের জনগণ হোসনি মোবারককে খুনি মনে করে কিন্তু তারপরও আদালত তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করেছে। মিসরে এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে, তা দেশটির জনগণের বিপ্লবী আদর্শ ও ইচ্ছার পরিপন্থী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button