ভয়ানক অপরাধের বিস্তৃতি : মানুষ আতঙ্কিত

আবু সালেহ আকন: ভয়ানক অপরাধের বিস্তৃতি ঘটছে দেশজুড়ে। খুন-গুমসহ নানা অপরাধের বিস্তৃতিতে আতঙ্কিত মানুষ। নারীর সাত টুকরা লাশ, স্কুলছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবিতে হত্যার ঘটনা ব্যাপক ভীতির জন্ম দিয়েছে। ছাত্র হত্যার সঙ্গে পুলিশ সদস্য, র‌্যাবের সোর্স ও সরকারদলীয় নেতা জড়িত থাকার বিষয়টি আরো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে তুলে নেয়ার পরে রাজনৈতিক নেতাদের নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তো রয়েছেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে খুন, গুম, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি মারাত্মকরূপ ধারণ করেছে। কোনো কোনো অপরাধের ঘটনায় সরাসরি জড়িত রয়েছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে টেন্ডারবাজি ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় সমর্থকেরা নিজেদের মধ্যেই জড়িয়ে পড়ছেন সহিংস ঘটনায়। বাড়ছে হতাহতের ঘটনা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে সম্প্রতি ভয়ানক কিছু সহিংস ঘটনা মানুষকে ব্যাপক আলোড়িত করেছে। সিলেটে অপহরণের পর নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে আবু সাঈদ (৯) নামের এক স্কুলছাত্রকে। গত শনিবার রাতে নগরীর ঝর্ণারপাড় আবাসিক এলাকার পুলিশ কনস্টেবল এবাদুরের বাসা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। এই শিশুটিকে গত মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে। নগরীর রায়নগর এলাকা থেকে শিশুটি তার মামার বাসায় যাচ্ছিল। পথে তাকে অপহরণ করা হয়। এই ঘটনায় কনস্টেবল এবাদুরকে গ্রেফতার করার পর সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। সে বলেছে, এই অপহরণ, হত্যা ও গুমের সঙ্গে জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব এবং র‌্যাবের সোর্স গেদা মিয়া জড়িত। তারা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য শিশুটিকে অপহরণ করেছিল। পরে শিশুটি তাদের চিনে ফেলায় তারা মুক্তিপণের টাকা না নিয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলে।
এ দিকে গতকাল রাজধানীর বনানী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। সাত বছর বয়সী ওই শিশুটির লাশ পাওয়া যায় একটি ব্যাগে। কোত্থেকে কিভাবে লাশটি যাত্রীবাহী বাসে এলো তা জানতে বাসের চালক ও হেলপারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গতকাল ভোরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হন মাহতাব নামের এক সাংবাদিক। দুর্বৃত্তরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাহতাবকে মারাত্মক জখম করে তার টাকা-পয়সা ও মূল্যবান মালামাল নিয়ে যায়।
সম্প্রতি রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় এক তরুণীর সাত টুকরা লাশ উদ্ধার হয়। তরুণীর পরিচয় মিললেও কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ-গোয়েন্দারা।
এসব ঘটনার সঙ্গে নিখোঁজের ঘটনাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়ার পরে তাদের আর খোঁজ মিলছে না। গত ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার এক বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হয় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ২০ দলীয় জোটের মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদকে। গতকাল পর্যন্ত তার কোনো হদিস নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আদালত নির্দেশ দিলেও তারা সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে পারেনি। গত ৬ মার্চ মোহাম্মদপুর থেকে ধরে নেয়া হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান খোকনকে। এরপর তার খোঁজ মেলেনি। মিরপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম। প্রায় দুই সপ্তাহেও তার খোঁজ মেলেনি।
এ দিকে টেন্ডারবাজিতে অস্থির হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সরকারি দফতর। আর এগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন খোদ সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এমনকি প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার ঘটনাও ঘটেছে। গত ১০ মার্চ বাংলাদেশ সচিবালয়ের পাশে বিদ্যুৎ ভবনে ব্যাপক গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনা ঘটে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৮ জন আহত হন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতারও হচ্ছে না। এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও গতকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ভবনের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button