সাঈদীর রিভিউর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

Saydiজামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমীর ও দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) এবং সাজা বাড়ানোর সরকারের রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।
গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭ পাতার রিভিউর রায় প্রকাশ করা হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে বেঞ্চের বিচারপতিদের রায়ে স্বাক্ষরের পর তা আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়লেও ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছে অনেক দেরিতে। নিয়ম অনুয়ায়ী রায় প্রদানকারী বিচারপতিরা স্বাক্ষরের পর পরই তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়টি লিখেছেন। রায়ে বলা হয়েছে, ডিফেন্স পক্ষ সংক্ষুব্ধ হয়ে রিভিউ করেছে। আপিল বিভাগ এর প্রেক্ষিতে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করে। কিন্তু সংক্ষুব্ধ হওয়ার কারণগুলো রিভিউর নিষ্পত্তির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয়। আপিল বিভাগের শুনানিতে উত্থাপিত যুক্তির পুনরাবৃত্তি করেছেন ডিফেন্সপক্ষের কৌসুলি। এখানে রিভিউ আবেদনে পুনরায় নতুন করে শুনানির কোনো সুযোগ নেই। ডিফেন্স পক্ষ আপিল বিভাগের রায়ের ভুল দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে সারবত্তা বিবেচনায় সবকটি রিভিউ খারিজ করা হলো।
গত ১৫ মে আপিল বিভাগ দুটি রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। এরফলে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদন্ডের সাজা বহাল থাকে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন-বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো. সেলিম মিয়া জানান, রিভিউর রায়ের অনুলিপি গত মঙ্গলবার পেয়েছি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী বলেন, এ রায়ের মূল কপি আগেই সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছি। ছুটির কারণে তা ওয়েবসাইটে দেয়া হয়নি।
২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আল্লামা সাঈদী খালাস চেয়ে রিভিউ (পুর্নবেবেচনা) আবেদন করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সকালে আল্লামা সাঈদীর আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে আল্লামা সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদন্ডের পক্ষে রায় দেন। তবে তখনকার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা) ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদন্ডের রায় আসে। তারও আগে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায়ে আল্লামা সাঈদীর মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ড দেন।
আপিল বিভাগের রায়ে তিনটি পৃথক অভিযোগে প্রত্যেকটিতে আমৃত্যু জেল, অপর দুটি অভিযোগের একটিতে ১২ বছর এবং আরেকটিতে ১০ বছর করে কারাদন্ড দেয়া হয়। আলোচিত ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকান্ডে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড দেয়। আপিল বিভাগ এটিতে মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে ১২ বছর কারাদন্ড দেন। বিশাবালী হত্যাকান্ডে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদন্ড দেয়। এ অভিযোগে আপিল বিভাগ মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদন্ড দেন। অপর যে দুটি অভিযোগে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদন্ড দেন সে দুটি হলো গৌরাঙ্গ সাহার তিন বোনকে ধর্ষণ এবং এক থেকে দেড়শজনকে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ।
আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ে সকল অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলেন, প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতে বলেছে অভিযুক্ত (আল্লামা সাঈদী) রাজাকার, তিনি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন সুনির্দিষ্ট করে ৬,৭,৮,১০,১১,১৪,১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগে। কিন্তু ডিফেন্স পক্ষের আপিল এবং সাক্ষীরা ক্যাটাগরীভাবে দেখিয়েছে তিনি (আল্লামা সাঈদী) অপরাধ সংঘটনের স্থানে ওই সময়ে উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি রওশন আলীর (ডিডব্লিউ-৬) দোহাখোলায় ছিলেন। তিনি রাজাকার ছিলেন না এবং অপরাধ সংঘটিত করেছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা। প্রসিকিউশনের মামলা এবং ডিফেন্সের আপিল থেকে দেখা যায় অভিযুক্ত রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন প্রসিকিউশন তা চূড়ান্ত প্রমাণের (ক্রুশিয়াল ফ্যাক্ট) মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে দেখাতে ব্যর্থ। উপরন্তু ডিফেন্সপক্ষে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং প্রামাণ্যচিত্র পরিষ্কার সংশয় সৃষ্টি করে প্রসিকিউশনের করা তিনি ১৯৭১ সালে রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এ বিষয়ে। ফলে অভিযুক্তকে বেনিফিট অব ডাউট দেয়া হলো। আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত যে প্রসিকিউশন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ৬, ৭, ৮, ১০, ১১, ১৪, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভিযোগ সন্দোহীততভাবে প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে এবং তিনি (আল্লামা সাঈদী) সকল অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়ার অধিকারী। একইসঙ্গে অভিযুক্তের অপরাধ খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং তাকে খালাস দেয়া হলো।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা সাঈদীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদন্ড দেয়। আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন মোট ২০টি অভিযোগ আনে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে আল্লামা সাঈদীকে মোট আটটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আলোচিত ইব্রাহিম কুট্টি এবং বিশাবালী হত্যার অভিযোগে মুত্যুদন্ড দেয়া হয়। অপর ছয়টি অভিযোগে কোন সাজা উল্লেখ করেনি ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে একই বছরের ২৮ মার্চ আপিল করেন আল্লামা সাঈদী। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই গ্রেফতার করা হয় আল্লামা সাঈদীকে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button