সাবেক প্রধান বিচারপিত কামাল উদ্দিন হোসেনের ইন্তেকাল

সাবেক প্রধান বিচারপিত কামাল উদ্দিন হোসেন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বুধবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর। বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের পুত্রবধূ ফারমিন ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম।
বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের প্রথম নামাজে জানাজা গতকাল বাদ জোহর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সম্পন্ন হয়েছে। এতে ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট মসজিদের ইমাম মাওলানা মজিবুল হক। জানাজার আগে মরহুমের বড় ছেলে বুয়েটের প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। জানাজার নামাজে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ যোগ দেন। এ ছাড়া এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন, সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি, সহ-সম্পাদক এডভোকেট সাইফুর রহমানসহ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র, জুনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, বিচারপতি আবু সাঈদ স্মৃতি সংসদের নেতৃবৃন্দ।
মরহুমের দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে। পরে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বাদ মাগরিব মরহুমের কুলখানি তার গুলশানের বাসভবনে (রোড ৭৪, বাড়ি ৭০) হবে বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ড. ইজাজ হোসেন।
কামাল উদ্দিন হোসেন ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান হাইকোর্টে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। পরের বছর তিনি পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টে বিচারপতি হন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি দেশের চতুর্থ প্রধান বিচারপতি হিসেবে ওই বছরের ১ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এডভোকেট। গতকাল এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, তার মৃত্যুতে জাতি একজন গুণী ব্যক্তিকে হারালো। প্রেসিডেন্ট বার্তায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারপতি হোসেনের অবদান স্মরণ করেন। প্রেসিডেন্ট তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগ আরও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে বিচারপতি হোসেনের অবদানের কথা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতি তার মৃত্যুতে একজন সৎ ও দেশপ্রেমিককে হারিয়েছে। শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। সাবেক প্রধান বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল এক বাণীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, বিচারপতি কামাল উদ্দিন হোসেন ছিলেন ন্যায়-নীতিবান মানুষ। দেশের আইন বিভাগের জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বর্তমান দেশের সংকটময় মুহূর্তে তার মতো নিরপেক্ষ, দলমতের ঊর্ধ্বে থাকা বড়মাপের আইনবিদের বড় প্রয়োজন ছিল। তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের শোক কাটিয়ে ওঠার শক্তি আল্লাহ দান করুক এ প্রত্যাশা করছি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেনের ইন্তেকালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মোঃ কামরুল ইসলাম গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আইনমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তারা মরহুমের পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহীদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button