মিয়ানমার থেকে গণহারে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা

Mayanmarক্রমবর্ধমান হতাশা ও ভীতির কারণে মিয়ানমার পশ্চিমাঞ্চল থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা গণহারে অন্যত্র পালিয়ে যাচ্ছে। দুই বছর আগে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর রোহিঙ্গাদের নৌকা করে মিয়ানমার ত্যাগের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল শনিবার একজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ পশ্চিমা মায়ানসারের স্থানীয় অধিবাসী এবং ‘রোহিঙ্গা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ’ নামক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ক্রিস লেওয়া গতকাল এ কথা নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, শুধু গত দুই সপ্তাহে আট হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পশ্চিম মিয়ানমার ছেড়ে মালবাহী জাহাজে চড়ে থাইল্যান্ডের পথ ধরেছে। প্রতিদিন পলাতকদের দলে ভিড়ছে গড়ে ৯০০ করে মানুষ। মূলত ১৫ অক্টোবর থেকে এ যাত্রা শুরু হয়েছে। গত দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছেড়েছে। এটি এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেশ ত্যাগের ঘটনা। থাইল্যান্ডে পৌঁছার পর থাই প্রশাসনের কাছ থেকে তাদের পেতে হচ্ছে বৈরী আচরণ। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দলগুলোকে সীমান্তে ভিড়তে দেয়া হচ্ছে না। পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যারা কোনোভাবে থাইল্যান্ডের মাটিতে পা রাখতে সমর্থ হচ্ছেন, তারা আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর হাতে পড়ছেন খুব সহজেই। তাদের থাইল্যান্ডের জঙ্গলে শিবিরে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং বড় অঙ্কের চাঁদা না দেয়া পর্যন্ত এ নির্যাতন চলছে ।
পলায়নপর রোহিঙ্গাদের বর্তমান আবাস রাখাইনভূমির উত্তরাংশে। কয়েক প্রজন্ম ধরে তারা এ স্থানে বসবাস করে আসছে স্বীকৃতিবিহীন। তাদের ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করা হয় এবং সংখ্যাগুরু বৌদ্ধদের মধ্য থেকে আক্রমণাত্মক ভিুরা নিয়মিতভাবে তাদের ওপর বর্বর হামলা চালাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এপির সাথে যোগাযোগের সময় অনেক রোহিঙ্গা জানায়, তারা ‘পরিচয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায়’ অংশ নিতে অস্বীকার করায় তাদের কয়েক সপ্তাহ ধরে নিজ নিজ গ্রামে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। অন্যদের মারধর ও গ্রেফতার করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমার সরকার ‘বাঙালি’ হিসেবে শনাক্ত করার চেষ্টা করছে।
মিয়ানমার প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ জনপদ যেখানে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার বাস। সামাজিকভাবে এরা অত্যন্ত হীন জীবনমান যাপন করছে। গত দুই বছরে পরিসংখ্যানবিহীন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে এবং এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে মানবেতর অবস্থায় বসবাস করছে।
রাষ্ট্রহীন নির্যাতনের শিকার মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশে চলে যেতে চায়, কারণ তারা চরম সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধ দেশ মিয়ানমারে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না।
লেওয়া বলেন, রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার লক্ষ্যে সরকার সুপরিকল্পিতভাবে তাদেরকে ব্যাপকহারে ধরপাকড় করছে বলে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট  প্রমাণ রয়েছে। দেশত্যাগী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে তিনি জানান। রাখাইন রাজ্যের ক্রমশ উত্তেজিত অবস্থা রোহিঙ্গা দেশত্যাগে বাধ্য করছে এমন সংবাদের সূত্র ধরে স্টেট প্রধান উইন মায়াইংকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্পেষণ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
সেনাবাহিনীর গুলিতে সাংবাদিক নিহত
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর গুলিতে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। দেশটির সেনাবাহিনী শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। সেনবাহিনীর একটি কারাগার থেকে পালানোর সময় তাকে গুলি করা হয় বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহত সাংবাদিকের নাম অং নাইং। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে মন রাজ্য থেকে আটক করা হয়। ওই রাজ্যে সেনাবাহিনীর সাথে কারেন বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করার কারণে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী অভিযোগ করেছে, অং কারেন বিদ্রোহীদের ইনফরমেশন অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন। গত ৪ অক্টোবর তিনি এক সেনাসদস্যের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে গুলি চালানো হয়। এরপর তাকে পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে কবর দেয়া হয়।
নিহত সাংবাদিকের স্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেেিত সেনাবাহিনী এ বিবৃতি দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয় বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। এ ছাড়া মানবাধিকার কর্মীরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের মুখপাত্র জ থেট হয়ে বলেছেন, তিনি সাংবাদিক কিংবা ইনফর্মার যাই হোন না কেন এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তার মৃত্যুর সত্য ঘটনা প্রকাশ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button