যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ট হেডটিচার বাংলাদেশী তাহমিনা বেগম

বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী তাহমিনা বেগম মাত্র ৩৩ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের পূর্বলন্ডনস্থ ফরেস্ট গেইট সেকেন্ডারী স্কুলের হেড টিচার হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের সর্বকনিষ্ট হেডটিচার। তিনি তার দৈনন্দিন রুটিনসহ অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন এখানে।
খুব ভোরে আমার এলার্ম বেজে ওঠে। আমি সাড়ে ৫ টায় বিছানা থেকে ওঠে পড়ি। সকালের নাশতা খেতে খেতে আমি আমার ই-মেইলগুলো পরীক্ষা করি। এরপর গাড়ি চালিয়ে ২০ মিনিটে পৌঁছে যাই স্কুলে।

লকডাউনের পর থেকে আমার দিনের কর্মসূচীতে পরিবর্তন এসেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন বাড়িতে। কিন্তু আমি এখনো প্রতিদিন স্কুলে আসা পছন্দ করি। আমি রুটিন থেকে ফায়দা পাই, ফায়দা পাই বাড়ি ও কর্ম আলাদা থাকায়। অধিকতর স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমি খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাবো তারা যখন আসতে শুরু করবে। আসলেই আমি সেটা করার অপেক্ষায় আছি।
আমি সবসময়ই একজন শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। স্কুল আমার কাছে অনেক মজার বিষয়- আমি বিতর্ক ও প্রেস টিমে জড়িত ছিলাম। প্রেস টিম হলো একটি পূর্নাঙ্গ ও বন্ধু-বান্ধবদের একটি ভালো গ্রুপ। আমার পরিবার সর্বদা এটাই বিশ্বাস করেছে যে, শিক্ষা একটি মহৎ সমান্তরালকারী এবং আমি একটি শক্তিশালী কাজের নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠেছি। আমার কাছে একজন শিক্ষক হওয়া একটি স্বাভাবিক পদক্ষেপের ন্যায়- কারন আমার বড়ো ভাই ও বড়ো বোনও শিক্ষক।
আমি একজন ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে আমার পেশা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আসলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশেনা করেছিলাম। আমি পূর্বলন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় বেড়ে ওঠি। সেখানকার স্যার জন কাস সেকেন্ডারী স্কুলে (বর্তমানে স্টেপনি অল সেইন্টস্ স্কুল) একজন একাডেমিক টিউটর হিসেবে আমি কাজ শুরু করি। আমি এমন একটি কমিউনিটির সেবা করতে সক্ষম হই, যারা আমার হৃদয়ের অত্যন্ত কাছাকাছি। ছেলেমেয়েরা ছিলো চমৎকার, শিক্ষকরাও ছিলেন মেধাবী। তাই আমিও শিক্ষক হতে আগ্রহী হই। শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেই। স্যার জন কাস স্কুলে শ্যাম উদ্দীন ছিলেন আমার প্রথম মেন্টর, সবচেয়ে বড়ো সমর্থক ও বন্ধু।
পরে শ্যাম ইংরেজীর প্রধান হিসেবে ফরেস্ট গেইট স্কুলে যোগ দেন। আমি সেখানে ইংরেজীর দ্বিতীয় ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহন করি। দুঃখজনকভাবে ২০১৭ সালে শ্যাম মারা যান। এতে দায়িত্ব এসে পড়ে আমার ওপর। তার অসুস্থতাবস্থায় আমি ইংরেজীর ইনচার্জ হিসেবে সহকারী হেডটিচারের দায়িত্ব পালন করি। ২০১৮ সালে আমি ডেপুটি হেড ইনচার্জ অব টিচিং এন্ড লার্নিং নিযুক্ত হই। এরপর ২০১৯ সালে হেডটিচারের দায়িত্ব লাভ করি।
আমি এখনো সপ্তাহে একটি ক্লাস নেই। এটা করতে আমি অত্যন্ত ভালোবাসি। যে পেশায়ই থাকি না কেনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। ২০২১ সাল একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয়েছে। আমি স্কুলের বাচ্চাদের গুড মনিং বলতে পারছি না, তাদের সাথে করিডোরে গল্পও করতে পারছি না। চেষ্টা করছি সর্বোত্তম উপায়ে স্কুল পরিচালনা করতে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button