হজের মানসিক প্রস্তুতি

Hajjড. মীর মনজুর মাহমুদ: হজ মুসলিম জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফর। মর্যাদার দিক থেকেও এর চেয়ে বড় আর কোনোটি নেই। বিশ্বজাহানের মহান রবের আহ্বানে তাঁরই ঘরে মেহমান হয়ে যাওয়ার সুযোগ প্রশ্নাতীতভাবেই সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান মানুষেরা সেখানে যাওয়ার এই দুর্লভ সুযোগ লাভ করে থাকি। সে জন্য আমরা অনেক রকম প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কিন্তু তারপরও অধিকাংশের মধ্যে মানসিক প্রস্তুতির অভাব চোখে পড়ে। যেমন- অনেকেই ব্যস্ত জীবনে কেবল হজের ক’দিনের সফরের সুযোগটা কোনো মতে বের করেন, কেউ অনেকটা দায় এড়ানোর মতো করে প্রস্তুতি নেন, কেউ আবার বিগত জীবনের গোনাহ থেকে নির্ভার হওয়ার উপলক্ষ্য হিসেবে এ সফরকে বেছে নেন।
সাধারণভাবে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের বিষয়ে অধিকাংশের চিন্তা থাকে মুয়াল্লিম ও গাইড নির্ভর। কেউ কেউ আবার কিছু দোয়া মুখস্থ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন নিজেকে। কিন্তু হজের এই মহান সফর কী কেবল এতটুকু! না, দুনিয়া ও আখিরাতের মহান মালিক তাঁর ঘরে ডেকে নেন এক সুদূরপ্রসারি উদ্দেশ্যে, যেখানে মানুষের জীবনের আমূল পরিবর্তনের চূড়ান্ত ডাক দেয়া হয়। নবীজীর বিদায় হজের ভাষণে মানবজীবনের কোন দিকটির নির্দেশনা ছিল না? আমরা কী তা মনে করতে চেষ্টা করি? তিনি আল্লাহর মেহমানদের কাছে তাদের নিজ গুনাহ মাফের সুসংবাদ দেয়ার সাথে সাথে বাকি জীবনের জন্য এক সামগ্রিক প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন। আর সেটি হলো- প্রত্যেকের হজের আগের এবং পরের জীবনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য যেন রচিত হয়। প্রিয় নবীর উপস্থিতিতে কুরআনের সমাজের মানুষেরা সেদিন মহা রাজাধিরাজের ঘরের আঙ্গিনায় ভিখারির বেশে হাজির হয়ে সমস্বরে এবং কাতর কণ্ঠে বলেছিলেন, হে আল্লাহ আমি উপস্থিত। একইভাবে মিনায়, মুজদালিফায়, আরাফায় অবস্থান করা এবং হৃদয়ের সব আকুতি মিশিয়ে ডেকেছিলেন তাদের মহান রবকে, পরম দয়ালু ও দয়াময়কে। আর সাফা-মারওয়ার মধ্যে দৌড়াদৌড়ির মধ্য দিয়ে জীবনের পরিশুদ্ধির প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। এ কাজটি এমনিতে হয় না- এর জন্য প্রয়োজন শক্ত মানসিক প্রস্তুতির। জীবনকে বদলে নেয়ার এক ইস্পাত কঠিন দৃঢ় অঙ্গীকারের।
হজের মহান উদ্দেশ্য- নিজ লক্ষ্য সামনে রেখে এর সব প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজকে বদলানোর সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হবে। তবেই আমরা এ মহান সফর করে ব্যক্তি এবং সামাজিক জীবনে প্রকৃত কল্যাণ লাভে সক্ষম হবো। আল্লাহর একান্ত অনুগত গোলাম হিসেবে আমরা এভাবে বলতে সাহস করব- ও মালিক! তুমি ডেকেছিলে আমরা এসেছি, তুমি ক্ষমা চেতে বলেছিলে তাও চেয়েছি- সব অপরাধকে স্বীকার করে নিয়েই, তোমার নবী যে গুণাহমুক্ত পবিত্র জীবনলাভের সুসংবাদ দিয়েছিলেন তাও তো পুরোপুরিই বিশ্বাস করেছি, কিন্তু গুণাহমুক্ত হৃদয়ের স্বাদ তো পাচ্ছি না। তাহলে কী মাফ করলে না! ও আমাদের জীবন-মৃত্যুর মালিক! তুমি যদি আজ ফিরিয়ে দাও, তবে কার কাছে যাবো! যদি মাফ না করো, সেটা দয়া করে বলে দাও। জানি, তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউই নেই আমাদের ক্ষমা করার। হে মহান আরশের অধিপতি! তুমি দয়া করে আমাদের মাফ করে দাও, তোমার গোনাহগার মেহমানদের ক্ষমা থেকে বঞ্চিত করো না। কাবার পথের সম্মানিত যাত্রীদের কাছে সবিনয়ে একটি কথা মনে করে দেয়া আবশ্যক মনে করছি, আর তা হলো- জাহেলি যুগে বায়তুল্লাহ বিনির্মাণে কুরাইশরা যে অর্থ-সম্পদকে পরিহার করেছিল (হারাম পথে উপার্জিত সকল প্রকার অর্থ-সম্পদ), তা যেন আমরাও স্বজ্ঞানে পরিত্যাগ করি প্রাত্যহিক জীবনযাপনে, কাবার পথের ব্যয় নির্বাহে। তবেই আশা করা যায়, এ মহান যাত্রার মহা প্রতিদানের।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button