ইইউর অর্থে পোল্যান্ডে ভৌতিক বিমানবন্দর

Poland Airপোল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১০ কোটির বেশি ইউরো দিয়েছে এমন স্থানগুলোয় কমপক্ষে তিনটি ভৌতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য যেখানে এগুলো সচল রাখার জন্য যথেষ্ট যাত্রী পাওয়া যায় না। ফলে জাঁকজমকপূর্ণ নতুন বিমানবন্দরের টার্মিনালগুলো ছুটির মওসুমেও খাঁ খাঁ পড়ে থাকে এবং বিমান আকর্ষণের জন্য লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে।
পোল্যান্ড ইউরোপের একমাত্র দেশ নয়, যেখানে এমন বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে যেগুলো বিমান আকর্ষণের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে। ইউরোপের প্রায় ৮০টি বিমানবন্দর রয়েছে যা বছরে ১০ লাখের কম যাত্রী আকর্ষণ করে এবং এগুলোর প্রায় তিন-চতুর্থাংশই লোকসান দেয়। এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশন্যাল এ তথ্য দিয়েছে। কোনো কোনোটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছে পোল্যান্ডের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ। স্পেনের পূর্বাঞ্চলে নির্মিত একটি বিমানবন্দর তিন বছর আগে চালু হলেও এখনো একটি বিমানও পায়নি।
তবুও পোল্যান্ড বিমানবন্দর নির্মাণের চেষ্টা করছে কারণ দেশটি এই প্রকল্পে ইইউ থেকে প্রচুর অর্থ পেয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের দেয়া তথ্যানুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ইইউ থেকে ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ইউরো পেয়েছে পোল্যান্ড। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ পাওয়া স্পেনের অর্থের চেয়ে তা দ্বিগুণেরও বেশি এবং বিমানবন্দর খাতে পাওয়া অন্য সব সদস্য রাষ্ট্রের অর্থের এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি। কিসের ভিত্তিতে বিমানবন্দর নির্মাণে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে পোল্যান্ড সরকার বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করেনি। তবে বিমান ওঠানামা পূর্বানুমানের চেয়ে নাটকীয় মাত্রায় কম হওয়া তিনটি বিমানবন্দরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে রয়টার্স।
ইইউ তহবিলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী একটি দেশ বলে বর্ণনা করা হয়ে থাকে পোল্যান্ডকে। দেশটি ইইউর তহবিল ব্যবহারে দুর্নীতি করেছে, এমন কোনো আলামতও নেই।
পোল্যান্ডের বেসামরিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে ইইউর সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর দেশটির বিমানবন্দর খাতে ব্যয়ের সামান্য অংশই অলাভজনক। যাত্রী সঙ্কট মারাত্মক হয়েছে ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে। কোনো কোনো বিমানবন্দরের মুখপাত্র বলেছেন, এই প্রকল্পগুলো সফল বলেই গণ্য করতে হবে। কেননা এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে, পর্যটকদের টানছে এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বিনিয়োগ হচ্ছে।
কিন্তু এটি পরিষ্কার যে, পোল্যান্ডে ভুল করা হয়েছে। এই মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর পরিচালকেরা। পুরো অভিজ্ঞতা থেকে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার ইইউ অর্থের পরবর্তী বড় অঙ্ক কিভাবে ব্যবহার করবে। আগামী সাত বছরে এই অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার হবে বলে আশা করছে সরকার।
সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা সম্প্রতি নির্মিত লজ যাত্রী টার্মিনালে। এখানে ২০১৩ সালের যাত্রীসংখ্যা অনুমানের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ কম হয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটিই পাওয়া গেছে।
এ বছরের গ্রীষ্মে অপেক্ষাকৃত ব্যস্ত দিনটিতে মাত্র চারটি বিমান নেমেছে এবং চারটি রওনা হয়েছে। মাঝখানের সময়টা প্রায় জনশূন্য ছিল বিমানবন্দরটি। দুপুরের পর নীল-সাদা ডোরাকাটা টি-শার্ট গায়ে একমাত্র মহিলাযাত্রী অপেক্ষা করছিলেন ৭২ আসনের ওয়েটিং স্থলে। টারমাকের বাইরে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ সিঁড়ি অপেক্ষা করছিল একটি জেট নামবে বলে। কোনো বিমানবন্দর লাভজনক রাখার জন্য যথেষ্ট যাত্রী না থাকলে স্থানীয় সরকার ভর্তুকি দিয়ে এগুলো সচল রাখে বলে জানিয়েছে ব্যাংকওয়াচ নেটওয়ার্ক নামে একটি বেসরকারি পর্যবেক্ষক সংস্থা। সুবিধা ভোগ করে সাধারণত এসব বিমানবন্দর ব্যবহারকারী এয়ারলাইন।
পোল্যান্ডের জাতীয় বিমান সংস্থা এলওটির সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান জ্যাসেক ক্রসজিক এখন ইউরোপীয় কমিশনকে মাঝে মধে বিমান চলাচল বিষয়ে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিমানবন্দর নির্মাণের ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের অবস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের চেয়ে খারাপ নয়। তবে অল্প সময়ের মধ্যে দেশটি যে পরিমাণে ইইউ অর্থ গ্রহণ করতে চায় তা থেকে কিছু সমস্যা বোঝা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন দেশগুলোর বিমানবন্দর খাতে নেয়া সহায়তার নীতি কঠোর করেছে। বিমানবন্দর নির্মাণের বিনিয়োগে সরাসরি জড়িত ছিলেন না ক্রসজিক। তিনি বলেন, পোল্যান্ডের যেসব ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে, সেখানে দুর্নীতি নয় বরং অগ্রাধিকার নির্বাচনে ভুল হয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button