ঋণের বোঝা আর কত?

বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। বর্তমান সরকার ঋণের বোঝা বাড়াতে বাড়াতে পাহাড় সমান করেছে। উল্লেখ্য, যে শিশু আজ জন্মগ্রহণ করছে, তার ঘাড়েও চেপে বসছে ঋণের বোঝা। একটি সূত্রমতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ এখন ৬০ হাজার টাকা। অথচ ২০০৬ সালেও এটা ছিল মাত্র ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ কয়েক বছরে ঋণ বেড়েছে ১০ গুণ। অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক উৎস থেকে সরকার যে চড়া সুদে ঋণ নিচ্ছে তা শোধ করবার জন্য জনগণের ওপর চাপাচ্ছে করের বোঝা। এমনকি মোবাইল ফোনের কলরেট থেকেও সরকার প্রচুর টাকা নিচ্ছে। বলা বাহুল্য, কথিত উন্নয়নের নামে ঋণ করে লুটপাটের এ ধারাবাহিকতা বন্ধ হওয়া উচিত বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

ঋণ নিতে নিতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক প্রায় সবগুলোই এখন ফোঁকলা। এরপর বিদেশি ব্যাংক থেকেও চড়া সুদে ঋণ নেয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের সবগুলোর কাজ চলছে তাও বলা যায় না। পদ্মাসেতু তো নিজের টাকাতেই সম্পন্ন হচ্ছে। ফ্লাইওভার হয়েছে ঢাকা শহরে। তবে এগুলোতে মানুষের সমস্যা ঘুচেছে তাও বলা যায় না। এখনও যানবাহন জ্যামে আটকে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সারা দেশের সড়কের অবস্থাও খারাপ। দুই ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। ঢাকায় মেট্রোরেলের কাজ চলছে। বরাদ্দের চেয়ে কত বেশি যাবে তা এখন বলা যাবে না। মহানগরী ঢাকার ফ্লাইওভারের বরাদ্দ বারবার বাড়ানো হয়েছে। মহানগরীর অনেক সড়কে ঠিকমতো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। কোথাও কোথাও একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আটকে যায় বাস, ট্রাকসহ ছোটবড় যানবাহন। দুর্ভোগ বাড়ে জনগণের। আসলে উন্নয়নের ফুলঝুরি কথায় কথায় ওড়ে। বলতে বলতে মুখের ফেনা পড়ে। কিন্তু বাস্তবে ফাঁকা বেলুন। একটুখানি খোঁচা লাগলেই ফুঁস। তাহলে উন্নয়নের নামে নেয়া ঋণের অর্থ যায় কোথায়? না, এসব কথা বিস্তারিত বলা মানা।

অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ঋণ নিতেই হবে। কিন্তু প্রাপ্ত ঋণের অর্থ যদি উন্নয়ন প্রকল্পে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো তাহলে দেশটা এতোটা পিছিয়ে থাকবার কথা নয়। দেশের লাখ লাখ মানুষ এখনও ফুটপাতে ঘুমোয়। পেটপুরে তিনবেলা খেতে পায় না। অসুখে পড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায় না। ডাক্তার দেখাতে পারে না। গ্রামে অনেকের ল্যাট্রিন নেই। সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। প্রসূতি মায়েরা সবাই সুচিকিৎসা পায় না। সন্তান জন্ম দেবার সময় অঘোরে মারা যায় অনেক মা। তার মানে হাতের কাছে হাসপাতাল নেই। চিকিৎসক নেই। অনেক প্রসূতি হাসপাতালে যেতে যেতে পথেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। অথচ এ সব প্রসূতির ঘাড়েও চেপে আছে ঋণের বড় অংকের বোঝা।

হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর দেশিবিদেশি খাত থেকে ঋণ নেয়া হয় চড়া সুদে। কিন্তু এ অর্থের সিংহভাগ কমিশনে চলে যায়। কমিশন মানেই অনিয়ম। দুর্নীতি। যারা ঋণ দেন তাঁরা যেমন কমিশন পান; যারা প্রসেস করেন তাঁরাও এর ভাগ পান। অর্থাৎ ঘাটেঘাটে কমিশন কাটা হয়। প্রশাসনে বসে থাকা হুজুর, ঠিকাদার, চেয়ারম্যান, মেম্বার সবার জন্য কমিশনের ভাগ থাকে। বলা যায়, বানরের পিঠেভাগ চলে উন্নয়নের নামে ঋণের টাকার। কখনও কখনও কমিশন কাটতে কাটতে ঋণের পুরোটাই ফুরিয়ে যায়। এমন খবরও পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে। আর যেবছর দেশে নির্বাচনের মতো ‘কর্মযজ্ঞ’ চলে তখনও নাকি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কমিশন আদায় করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যেখান থেকে উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ আসে, ঘুরপাক খেয়ে সেখানেই আবার ঋণের বড় অংশ চলে যায়। ঋণের বোঝা কেবল বাড়ে আর বাড়ে। আর এ বোঝা চাপে এদেশের সদ্যজাত শিশুর ওপরও। এই হলো উন্নয়নের ঋণ ট্র্যাজেডি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button