তিস্তা পাড়ে লংমার্চে মির্জা ফখরুল

দাবি আদায়ে প্রয়োজনে জাতীয় ঐক্যের বৃহত্তর কর্মসূচি

তিস্তা ব্যারেজের পাশে ডালিয়া পয়েন্টের হ্যালিপ্যাড মাঠে আয়োজিত লংমার্চ পরবর্তী জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিস্তায় পানি নেই, দেশ আজ বিপদগ্রস্ত, গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে। তাই আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যার অধিকার পেতে হলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে সবাইকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো শক্তি নেই আমাদের পরাজিত করতে পারে।
গতকাল দুপুরে তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ শেষে আয়োজিত বিশাল জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় আমাদের ১০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। এক লংমার্চে তিস্তায় ৩ হাজার ৬ কিউসেক পানি বেড়ে গেছে। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, তিস্তার পানি না দিলে প্রয়োজনে দাবি আদায়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এরআগে গতকাল সকাল ১০টায় রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরির পথসভা থেকে লংমার্চের বিশাল গাড়িবহর ৯৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে দুপুর ১২টার দিকে ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় পৌঁছে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ডালিয়ার কাছে থেকে পায়ে হেটে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের নিয়ে তিস্তা ব্যারেজের সামনে হেলপ্যাড মাঠে সমাবেশেস্থলে পৌঁছালে নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানায়।
হেলিপ্যাড মাঠে স্থানীয় বিএনপির আয়োজিত সমাবেশ নেতাকমীরা ‘তিস্তা নদীর পানি দে, নইলে গদি ছেড়ে দেয়’, বাঁচতে দলে জিততে হবে’, খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’ ইতাদি স্লোগান দিয়ে পুরো এলাকা সরব করে রাখে। সমাবেশে কয়েকজন নারী শিল্পী তিস্তাকে নিয়ে ভাওয়াইয়া গান গেয়ে সবার দৃষ্টি কাড়ে। তিস্তা পাড়ে বসবাসকারী হত দরিদ্র কৃষক আসিম উদ্দিন পানির অভাবে তার দুঃখ-দুদর্শার কথা তুলে ধরে হৃদয়স্পর্শী বক্তৃতা করেন।
প্রখর রোদ্রের মধ্যে নীলফামারী, লারমনিহাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলার হাজার হাজার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেয়। দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া আড়াই ঘণ্টার সমাবেশের মধ্য দিয়ে দুইদিনের লংমার্চ শেষ হয়।
এরআগে দুদিন ব্যাপী এ লংমার্চ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা থেকে শুরু হয়। দুদিনে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী ও রংপুরে পথসভা করে তারা। গত ৯-১১ এপ্রিল গণতান্ত্রিক বাম মোর্চ এবং ১৭-১৯ এপ্রিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করে। তারাও তিস্তা নদীর পানি ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ওই লংমার্চ করে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অ্যাড. আহমেদ আহমদ খান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্প হারম্নন অর রশীদ, আন্তর্জাতিক সম্প ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহানগরের আবদুস সালাম, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
১৯ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবুর রহমান, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন প্রমুখ। স্থানীয় নেতাদের রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন, নীলফামারী জেলা সভাপতি লুত্ফর রহমান মিন্টু, আনিসুর আরেফিন চৌধুরী, লারমনিরহাট সভাপতি হাফিজুর রহমান বাবলা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফা, হুমায়ুন কবির খান, আবুল কালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, সুলতানা সালাহ উদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলিম, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জাসাসের সভাপতি এম মালেক, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, রাজশাহীর সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, শামীমুর রহমান শামীম, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, মনির হোসেন, শফিউল বারী বাবু, সুলতানুল হক নম্র চৌধুরী, ভিপি সাইফুল ইসলাম, জয়নাল আবেদিন চান, কামরুল মুনির, শফিউল হক মিলন, কাজী সাইদুল আলম বাবুল, শামসুল আলম তোফা, সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, হারুনুর রশীদ, নাজিম উদ্দিন আহমেদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম।
লংমার্চের জনসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিস্তার এই লংমার্চ ভারত সরকার ও তার জনগনের বিরুদ্ধে নয়। আমরা ন্যায্য পানির হিস্যার আদায়ে আন্দোলন করছি। আমাদের দেশ ছোট হতে পারে। কিন্তু ১৬ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের পদানত করতে পারবে না।
তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। দেশনেত্রীর নির্দেশে আমরা লংমার্চে এসেছি। নেত্রীর এক কর্মসূচিতে তিস্তায় ৩ হাজার ৬ কিউসেক পানি বেড়ে গেছে। আল-হামদুলিল্লাহ। আমাদের লংমার্চের জন্য পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা আমাদের কর্মসূচি প্রাথমিক সফলতা।
ভারত সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তিস্তার জন্য ১০ হাজার কিউসেক পানি আসাদের প্রয়োজন। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় তখনই হবে, যখন তিস্তার পানি ১০ হাজার কিউসেকে আসতে থাকবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি নতজানু উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা কখনও তিস্তা পানি চুক্তি করতে পারবে না। কারণ এই সরকারের কোনো জনসমর্থন নেই। তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। আর যাদের শক্তিতে তারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের তারা ( আওয়ামী সরকার) অখুশি করতে চায় না।
তিস্তার পানির অভাবে এ অঞ্চলে মরুকরণ, কৃষিজাত ফসলের ক্ষতি, পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়গুলো তুলে ধরেন সাবেক কৃষি এই প্রতিমন্ত্রী। বর্তমান সংকট উত্তরণে অতিদ্রুত জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। লংমার্চ সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীসহ গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা কারও দয়া-দাক্ষিণ্য নয়, এটা আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার। বর্তমান সরকারকে ভারতের তাঁবেদার সরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। এই সরকার ট্রানজিটের মতো দর কাষাকষির হাতিয়ারটি ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ফলে তাদের পক্ষে তিস্তার পানি চুক্তি সম্পাদন কিংবা ন্যায্য পানির হিস্যা আদায় করা সম্ভব নয়। সরকারের আজ কোনো গণভিত্তি নেই। এখন তিস্তায় পানি আনতে হলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের জন্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করলেই তিস্তাসহ সব চুক্তি সম্পন্ন করা যাবে এবং ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য অধিকার আদায় করা যাবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। লংমার্চ ভারত তথা সেদেশের জনগণ ও সরকারের বিরুদ্ধে নয়, এটা আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ক্ষমতাসীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সরকারের সঙ্গে ভারতের দহরম-মহরম, ভালোবাসাবাসী ও প্রেম বেশি। সে কারণে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা চুক্তি হবে বললেও পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা বললেন সে পানি দেবে না। তাই এই সরকার ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তিই করতে পারবে না।
লংমার্চের প্রথম দিন মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর উত্তরার আমিন কমপ্লেক্সের সামনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে লংমার্চের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আড়াই শতাধিক গাড়িবহরের এই লংমার্চটি গাজীপুরের কালিয়াকৈব, টাঙ্গাইলের বাইপাস সড়ক, সিরাগঞ্জের কড্ডার মোড়, বগুড়ার মাটিডালী, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ীসহ প্রথম দিনে ৬টি পথসভা করে। প্রথমদিনের সর্বশেষ পথসভাটি হয় পলাশবাড়িতে সন্ধ্যা ৬টায়। সেখান থেকে লংমার্চের গাড়িবহর রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সেখানে পৌঁছে রাত ৮টায়। রংপুর শহরে রাতিযাপন শেষে গতকাল সকাল ১০টায় রংপুরে একটি পথসভা শেষে লংমার্চ সরাসরি তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে অভিমুখে রওনা হয়।
প্রখর রোদকে উপেক্ষা করেই বিভিন্ন স্থানে লংমার্চের বহরকে স্বাগত জানায় বিএনরি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। লংমার্চের গাড়িবহর বগুড়া থেকে গোবিন্দগঞ্জের যাওয়ার পথে জয়পুরহাট জেলার মোকামতলায় রাস্তার দুই ধারে নেতাকর্মীরা শূন্য কলসি নিয়ে দঁড়িয়ে নেতারাকে স্বাগত জানায়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে ভাইদের পরিবারের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শুধু তিস্তা নয়, আন্তর্জাতিক ৫৪টি নদী থেকে ভারত সরকার পানি প্রত্যাহার করছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করে ভারত এটা করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনোমহন সিং আসার সময় বলা হয়েছিল তিস্তা চুক্তি হবেই। কিন্তু সেটা আর হলো না। এ সরকার ভারতের চাহিদা মেটাতে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা সরকার বিনাশ করতে চায়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলন ভারত ও সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের আন্দোলন।
জনসমুদ্রে জাতীয় নেতারা যা বললেন
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ বন্ধ করে ভারত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আমাদের কৃষি ও মানুষের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়েছে। কৃষি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা তিস্তার সন্তান, আমাদের স্লোগান তুলতে হবে- ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও গজলডোবায় তিস্তার বাঁধ।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার্থে ১৯৭৯ সালে ৪৪টি গেট সংবলিত তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করেছিল। কিন্তু ভারত সরকার তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। তিস্তায় পানি পেতে হলে জনগণের সরকারের বিকল্প নেই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অনুরোধে কোনো দাবি আদায় না হলে তা আদায় করতে কৌশল নিতে হয়। আন্দোলন করতে হয়। আমরা আমাদের পানির হিস্যার জন্য ভারতকে বার বার অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। এ জন্য আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। এ আন্দোলনে কাজ না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে পানির দাবি আদায় করা হবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বিএনপির লংমার্চে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘এ সরকারের পতন ছাড়া তিস্তার পানিসহ কোনো অধিকার আদায় সম্ভম নয়। ভারত বাংলাদেশের মানুষকে মারার জন্য সব নদীর গলাটিপে ধরেছে। আমরা জীবন দেব, তবু ন্যায্য অধিকার আদায় করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, এ সরকার নির্দোষ মানুষকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে হত্যা করতে চায়। আমাদের জীবন থাকতে তা হতে দেব না। সরকার জানাজা পড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘বাঘের গর্জন শুনে ৩ হাজার ৬শ’ কিউসিক পানি দিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আমরা কাল্পনিক বিয়ে মানি না। আমরা কাবিননামা চাই। গোপন চুক্তি মানি না। পানি চুক্তি প্রকাশ কর। বাংলার ক্ষমতার মসনদে আমরা হিন্দুস্থানের দালালকে থাকতে দেব না।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির লংমার্চকে সামনে রেখে তিস্তায় কিছুটা পানি এসেছে। দীর্ঘদিন নদীতে পানি না থাকায় এ পানি মাটি শুষে নিয়েছে। এ পানি আমাদের কোনো কাজে আসেনি। এ স্বপ্ন পানি প্রবাহ আমরা মানি না। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকারের কোনো বৈধতা না থাকায় তাদের কোনো যোগ্যতা নেই। এ কারণে তারা ভারতের কাছ থেকে পানি আনতে পারে না। আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা পেতে হলে এ সরকারকে হঠাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণমানুষের সরকার গঠন করে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে অধিকার আদায় করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রংপুর আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, জিয়াউর রহমান তিস্তার উত্তাল তরঙ্গ দেখে ১৯৭৯ সালে ব্যারেজ নির্মাণ করেছিলেন। আজ সেই তিসত্মাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিস্তা ব্যারেজ বালুচরে পরিণত হয়েছে। এক ফোঁটা পানি নেই। তিস্তাপাড়ে আজ হাহাকার। কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে। আমরা মরুভূমির প্রতিচ্ছবি দেখছি। তিনি আরও বলেন, ‘বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারছে। ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রেখেছিল তারা। কিন্তু আমাদের পদলেহী সরকার এর কোনো প্রতিবাদ করেনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button