জেলখানা চালু রাখতে ‘কয়েদী’ আমদানী

jailজাফর ইকবাল: বিশ্বে অনেক দেশেই অপরাধ প্রবণতা এত বেশী যে, ক্রমশ জেলখানার সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানে জেলাখানাগুলোতে কয়েদীদের রাখার জায়গা হচ্ছে না। অনেকটা গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে হাজতীদের। বাংলাদেশে জেলখানাগুলো যখন কয়েদীতে উপচে পড়ছে, তখন ঠিক তার বিপরীত চিত্র ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের। যেখানে অপরাধীর সংখ্যা একেবারেই নেই বললেই চলে। ফলে জেলখানাগুলো সচল রাখতে তাদের কয়েদী আমদানী করতে হচ্ছে। অপরাধীর অভাবে তাদের অনেকগুলো জেলখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০০৪ সাল থেকে নেদারল্যান্ডসের অপরাধীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়ে আসছে। জেলখানা ভরতে দেশটি সম্প্রতি নরওয়ে থেকে ২৪০ জন কয়েদিকে আমদানি করেছে। কয়েদি আমদানির এমন খবর আমাদের হতবাক করে নিশ্চয়ই! এও কি সম্ভব, কারাবন্দির অভাবে অপরাধী ভাড়া করে জেলখানা চালু রাখতে হচ্ছে। টেলিগ্রাফের খবর অনুযায়ী, ২০১৩ সালে কয়েদির অভাবে ১৯টি জেলখানা বন্ধ করে দেয় নেদারল্যান্ডস সরকার এবং এর ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে আরো ৫টি জেলখানা বন্ধ করতে হয়েছে সরকারকে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার কারাকর্মী! যাদের মাত্র ৭০০ জনকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য জায়গায় চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০০৪ সাল থেকে নেদারল্যান্ডসের অপরাধীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়ে আসছে। জেলখানা ভরতে দেশটি সম্প্রতি নরওয়ে থেকে ২৪০ জন কয়েদিকে আমদানি করেছে। কয়েদী আমদানির এমন খবর আমাদের হতবাক করে নিশ্চয়ই! এও কি সম্ভব, কারাবন্দীর অভাবে অপরাধী ভাড়া করে জেলখানা চালু রাখতে হচ্ছে। কিন্তু এমন সাফল্যের পেছনে কী সেই কারণ, যা নেদারল্যান্ডসের অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখছে? নেদারল্যান্ডস হচ্ছে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদার ধর্মীয় সংস্কৃতির দেশ। ধর্ম নিরপেক্ষ এই রাষ্ট্রের ধর্মীয় কুসংস্কারমুক্ত ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাব্যবস্থা মানুষকে উদার হতে সাহায্য করছে। রেডবাড ইউনিভার্সিটি ও ভির্জি ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৯৬৬ সালে মুক্তচিন্তার মানুষের সংখ্যা যেখানে ছিল ৩৩ শতাংশ, সেটা ১৯৭৯ সালে ৪৩ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ৫৩ শতাংশ, ২০০৬ সালে ৬১ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ৬৭ দশমিক ৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা ২০২০ সালে ৭২ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।
এই বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিচারমন্ত্রী আর. ভেন ডার সেটুর পার্লামেন্টকে জানান, জনবিরল এসব জেলখানা চালানো ছোটখাট দেশ চালানোর খরচের সমান। কয়েদিদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-এক. মাদক আইন শিথিল করা। ফলে মাদকসেবীদের শাস্তি দেওয়ার বদলে তাদের পুনর্বাসনে জোর দেওয়া হয়েছে। দুই. এঙ্কেল মনিটরিং ব্যবস্থা। কয়েদীদের জেলে বসিয়ে রাষ্ট্রীয় অন্ন ধবংস না করে তাদের পায়ে ট্রাকার লাগিয়ে সমাজে বিভিন্ন ইতিবাচক খাতে কাজে লাগানো হচ্ছে। তাতে করে সে নিজের উপার্জন নিজে করার পাশাপাশি নিজের ভুল থেকেও শিক্ষা নিতে পারছে। আরেকটা জিনিস যেটা অপরাধী কমাতে সাহায্য করছে, সেটা হলো সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা! কোনো অপরাধী সাজা খেটে বের হলে তাকে সুস্থধারায় ফেরানোর জন্য উপযুক্ত কাজের ব্যবস্থ্য করা, যা কি না খোদ যুক্তরাষ্ট্রেও নেই। ফলে মার্কিন কয়েদীর সংখ্যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ।
প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে অপরাধীর সংখ্যা ৭১৬ জন, যেখানে নেদারল্যান্ডসের প্রতি লাখে অপরাধীর সংখ্যা মাত্র ৬৯ জন। বাংলাদেশও নেদারল্যান্ডসের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে- কীভাবে অপরাধ দূর করা যায় এবং অপরাধীদের পুনর্বাসন করা যায়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button