বাংলাদেশকে প্রথম পদক উপহার দিলেন শ্যুটার বাকী

bakiকামরুজ্জামান হিরু গোল্ড কোস্ট, অস্ট্রেলিয়া থেকে: গোল্ডকোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম পদক জিতলেন শ্যুটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। তিনি ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে রৌপ্য জয় করেন। ব্রিজবেনের বেলমন্ট শ্যুটিং সেন্টারে লক্ষ্য ভেদের লড়াইয়ে অল্পের জন্য স্বর্ণপদক জয়ে ব্যর্থ হয়েছেন বাংলাদেশের কৃতি শ্যুটার বাকী। এই ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেছেন স্বগতিক অস্ট্রেরিয়ার ড্যানি স্যাম্পসন এবং ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন ভারতের রবি কুমার। বাকীর এই অর্জন হতে পারত আরও বড়। মাত্র ০.৪ পয়েন্ট বেশি করতে পারলে স্বর্ণই জিততেন বাকী। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার ডেনি স্যাম্পসন ২৪৫.০ স্কোর করে স্বর্ণ জয় করেন। আর বাকীর স্কোর ২৪৪.৭। এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন ফেবারিট ভারতের রবি কুমার। তার স্কোর ২২৪.১।
চার বছর আগে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো নগরীতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলেও রৌপ্য পদক জিতেছিলেন বাকী। তবে এবারের আসরে এই ইভেন্টে তালিকায় ছিলেন না। ছিলেন রিসালাতুল ইসলাম। কিন্তু লড়াইয়ে নামার আগের দিন (শনিবার) রিসালাতকে বাদ দিয়ে বাকীকে এই ইভেন্টের জন্য উপযুক্ত মনে করে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। দেশকে পদক এনে দিতে পেরেই খুশি বাকী। রৌপ্য গলায় ঝুলিয়ে বললেন, আমি জানতাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমার টার্গেট ছিল পদক। সেটা পেয়েছি বলে ভালোই লাগছে। স্বীকার করলেন আরেকটুকু মনোযোগী হলে হয়ত স্বর্ণ পদকটা হাতছাড়া হতো না। আগের দিন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নেয়ার কথা জানায় কি কোন সমস্যা হয়েছে? এ প্রসঙ্গে  বাকী বলেন, ‘আমাকে ঢাকাতেই ধারণা দেয়া হয়েছিল এমন কিছু হতে পারে। তাই আমি মানুসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম। যদিও আমার ফোকাস ছিল ৫০ মিটার রাইফেলে। যখন জানলাম আমি ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে অংশ নেবো তখন কিছু সময় অনুশীলন করি। শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছে-এটাই বড় কথা।’ বাকীর কাছে গ্লাসগো থেকে গোল্ড কোস্টের রৌপ্য অর্জন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘গ্লাসগো গেমসে আমার সাথে অবিনভ বিন্দার তফাত অনেক ছিল। কিন্তু এবার খুবই কাছে ছিলাম। আরেকটু হলে স্বর্ণও পেতে পারতাম।’ বাকী ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্য জিতেছিলেন ২০২.৩ স্কোর করে। আর স্বর্ণ জিতেছিলেন ভারতের বিন্দা, স্কোর ২০৫.৩।
এদিকে, বাংলাদেশের আরেক শ্যুটার মো. রাব্বি হাসান মুন্না ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ১৮ জনের মধ্যে হন ১৪তম। নিজ ইভেন্ট থেকে আরও দুই শ্যুটারের ছিটকে পড়ার খবর আসে বাকীর ইভেন্ট শুরু আগেই। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার পিস্টলে বাংলাদেশের আরদিনা ফেরদৌস অল্পের জন্য ফাইনালে (৮ জনে) কোয়ালিফাইং করতে পারেননি। তিনি ২৫ জনের মধ্যে ৯ম হন। আর ১৭তম হয়েছেন বাংলাদেশের আরেক শ্যুটার আরমিন আশা।
বাকীকে ১০ মিটারে খেলানোটাকে ‘গ্যাম্বলিং’ হিসেবেই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ শ্যুটিং দলের ড্যানিস কোচ ক্লাভস ক্রিস্টেনসেন। তিনি বলেন, ‘বাকীর অভিজ্ঞতার কথাটি মাথায় রেখেই তাকে শেষ মুহূর্তে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এটিকে এক ধরনের গেম পলিসিও বলা যেতে পারে। বাজীতে আমরা জয়  পেয়েছি।’ ক্লাভস বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দুই বছরের ক্যারিয়ারে এটি আমার জন্য সেরা সফলতা। গেমস থেকে একটি পদকের জন্য গোটা দল মুখিয়ে ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।’
বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু বলেন, ‘এ পদক জয়ের মাধ্যমে আমাদের একটি প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এই জয়টি পরবর্তী লড়াইয়ের বাংলাদেশের অন্য শ্যুটারদের মনোবলকে সুদৃঢ় করবে।’ এখন এসএ গেমসে ৫০ মিটার পিস্তল ইভেন্টে স্বর্ণপদক বিজয়ী শাকিল আহমেদকে ঘিরে বাংলাদেশ দল নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কমনওয়েলথ গেমসে তিনি ১০ মিটার পিস্তল ও ৫০ মিটার পিস্তল ইভেন্টে অংশ নিবেন। অপু বলেন, ‘আমরা এখনই কিছু বলে তাদের ওপর চাপের বোঝা চাপিয়ে দিতে চাই না। তবে আশাবাদী। আশা করছি আমাদের পদক প্রাপ্তির তালিকাটা আরো সমৃদ্ধ হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই শ্যুটাররা মানসিকভাবে চাঙ্গা ছিল। এই পদক জয়ের ফলে তাদের মনোবল আরো বেড়ে গেছে। এ লড়াইয়েও ভারতকে প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করছি। তবে আপনারা দেখেছেন আজকের লড়াইয়ে স্বর্ণ পদকটি জয় করেছে অস্ট্রেলিয়া। আমি আগেই বলেছি ভারতের পাশাপাশি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।’
এ সময় পদক জয়ের বিপরীতে শ্যুটিং ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন অপু। বলেন, ‘প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বাকী ফেডারেশনের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাবে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) কাছ থেকে আরো ৫ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাবে।’ সব মিলিয়ে ১২ লাখ টাকার অর্থ পুরস্কার পাচ্ছেন বাকী।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে এয়ার পিস্তল থেকে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন আতিকুর রহমান ও আবদুস সাত্তার নিনি। এয়ার পিস্তল থেকে স্বর্ণ পদক জিতেছিলেন তারা। এটিই এই গেমসে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম পদক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে অনুষ্ঠিত গেমসে এয়ার রাইফেল ইভেন্ট থেকে লাল সবুজদের শিবিরে স্বর্ণপদক এনে দেন আসিফ হোসেন। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত গেমসে বাংলাদেশ দলগতভাবে রৌপ্য এবং ২০১০ সালে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত গেমসে দলগত ব্রোঞ্জ পদক জয় করে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো নগরীতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ গেমসে এই শ্যুটিং থেকেই বাংলাদেশকে রৌপ্য পদক এনে দেন আবদুল্লাহ হেল বাকী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button