রক্ষণশীলদের পক্ষেই ব্রিটিশ মিডিয়া

UK Newspapersব্রিটেনের আজকের পার্লামেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করতে শুরু করে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। প্রতিবারের মতো এবারো নির্বাচনের আগমুহূর্তে নিজের পছন্দের প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছে তারা। আর তাদের সমর্থনে এবং প্রতিপক্ষের তীব্র সমালোচনা করে একের পর এক ছাপিয়ে গেছে প্রতিবেদন। তবে দেখা গেছে, মূলধারার ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো কোনো রাখঢাক না করেই এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি বা রক্ষণশীলদের সমর্থন দিচ্ছে।
ব্রিটেনের শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে সমাদৃত বহুল প্রচারিত ‘ডেইলি সান’ থেকে শুরু করে ‘ডেইলি মেইল’ প্রায় বড় সংবাদপত্র প্রায় একচোখা হয়েই কনজারভেটিভের পক্ষাবলম্বন করেছে। দেখা গেছে, লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এড মিলিব্যান্ডের নানামুখী সমালোচনায় গণমাধ্যমগুলো যেভাবে মুখর, একই সঙ্গে গত পাঁচ বছরে ক্যামেরনের বিভিন্ন ব্যর্থতার ব্যাপারেও ছিল ততটাই যেন নীরব।
নির্বাচনের আগে নিজের পাঠকদের কাছে ডেইলি মেইলের পরামর্শ ছিল এমন, ‘এই পরিস্থিতিতে সুস্থ অর্থনীতি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিষয়ক গণভোট ও অভিবাসন হার কমানোর পক্ষপাতী এমন যে কারোর জন্য একমাত্র পরামর্শ হবে কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি)-কেই ভোট দেয়া।’ ডেভিড ক্যামেরনের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির নিক ক্লেগকেও ছাড়েনি পত্রিকাটি। অনেক আগে থেকেই ‘বকধার্মিক সুবিধাবাদী’ হিসেবে তাকে আখ্যা দিয়ে আসছে ডেইলি মেইল।
পত্রিকাটির মতই রক্ষণশীল সমর্থকদের মধ্যে আছে ‘দ্য ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড’, ‘দ্য সান’-এর মতো পত্রিকাগুলোও। অবশ্য রক্ষণশীল দল সমর্থন করলেও কিছুটা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছে ‘দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস’ ও ‘দি ইকোনমিক্স’। দুটি পত্রিকাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, রক্ষণশীল ক্যামেরন ফেরত এলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ছিটকে যেতে পারে ব্রিটেন। তবে তার বাইরে ব্রিটেনের অর্থনীতির জন্য ক্যামেরনকেই উপযুক্ত বলে রায় দিয়েছে তারা।
এভাবে মূলধারার মিডিয়ার সবখানেই চলেছে ক্যামেরনের হয়ে কৌশলী প্রচারণা। শুধু তাই নয়, কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় আসার প্রশ্নে বাধা হতে পারে এমন শঙ্কা থেকে ইউকেআইপির বিরোধিতাও করছে কৌশলী মিডিয়া। তবে অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যাপ্তির পত্রিকাগুলো অবশ্য বড় হাউসগুলোর এমন আচরণগুলো পাঠক-দর্শকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টাও করছে।
অবশ্য ব্রিটিশ মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ‘দ্য গার্ডিয়ান’, ‘দি অবজারভার’ এবং ‘দ্য নিউ স্ট্যাটসম্যান’ই লেবার পার্টির পক্ষে নিজেদের রায় দিয়েছে। গার্ডিয়ানের মতে, ‘লেবার পার্টির এড মিলিব্যান্ড কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক_ সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখেন।’
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের পক্ষপাতদুষ্ট এই আচরণের কারণ হিসেবে অনেকেই বলছেন, দেশের ভবিষ্যতের প্রশ্ন, জাতীয়তাবাদের টানের কথা। একই সঙ্গে উঠে এসেছে পুঁজির সঙ্গে গণমাধ্যমগুলোর যোগাযোগের সংশ্লিষ্টতাও। ধারণা করা হচ্ছে, লেবার পার্টি ক্ষমতায় এলে বাড়বে ব্যবসার ট্যাক্স। আর কনজারভেটিভের চিরকালীন নীতি, ব্যবসা_বান্ধব অর্থনীতির। তাই সহজ ভাষায়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করা সংবাদমাধ্যমের ইচ্ছার ছায়া প্রতিবেদনে পড়বেই। আইবি টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ব্রিটেনের ৭০ শতাংশ পত্রিকার মালিকানাই মাত্র তিনটি কোম্পানির হাতে। আবার অনলাইন পত্রিকাগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের মালিকানাও ক্ষমতাশীল পাঁচটি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। এর আগের চারজন প্রধানমন্ত্রীই এই মিডিয়া জোটগুলোর সঙ্গে নিজেদের ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্কের কথা স্বীকারও করেছেন।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button