ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সাইফ আল ইসলাম বান্না আর নেই

বিশ্বজুড়ে পরিচিত ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ ইমাম হাসান আল বান্নার একমাত্র ছেলে বিশিষ্ট আইনবিদ আহমেদ সাইফ আল-ইসলাম হাসান আল বান্না আর নেই। গত শুক্রবার সকালে তিনি কায়রোতে ইন্তিকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অনেক নাতিপুতি ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বিশিষ্ট আইনবিদ আহমেদ সাইফ আল-ইসলাম হাসান আল বান্না সংসদ সদস্য ও বার এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।
ব্রাাদারহুডের নায়েবে মোর্শেদ খাইরাত আশ শাতেরের মেয়ে আয়েশা শাতেরের দেয়া টুইট এর মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়েলে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নামে। মুসলিম ব্রাদারহুডের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
কায়রোর প্রাণকেন্দ্র আব্বাসিয়ার সালাহ সালেমের বিখ্যাত মসজিদ রাহমানুর রাহিমে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদ ও তার আশপাশের এলাকা অল্প সময়ের মধ্যেই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। অনেকে গাড়ির ছাদে দাঁড়িয়েই তার জানাযার নামাজে অংশ গ্রহন করেন। পাশেই ঐতিহাসিক আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবাসী ছাত্রাবাস থাকায় অনেক বাধা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা তার জানাযার নামাজে অংশ গ্রহণ করেন। এছাড়া সালাফিপন্থী স্কলারসহ মিসরের বিভিন্ন স্তরের শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
তাকে ইমাম শাফেই (র) এর কবরের নিকটস্থ পারিবারিক কবরস্থানে পিতা হাসান আল বান্নার পাশেই দাফন করা হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনী: মিসরের আইনজীবীদের জাতীয় সংগঠন আইনজীবী পরিষদের একাধিকবার নির্বাচিত মহাসচিব সাইফ আল ইসলাম ১৯৩৪ সালে ২২ নবেম্বর দেমানহুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৬ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন ও মানবাধিকার বিষয়ে অনার্স এবং দারুল উলুম অনুষদ থেকে ১৯৫৭ সালে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স পাস করেন। পড়ালেখা শেষ করেই তিনি পিতার শূন্যতা পূরণে জোরালোভাবে আন্দোলনের কাজ করেন। তাছাড়া মুসলিম ব্রাদারহুডের মাকতাবাতুল এরশাদ বা কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্রাদারহুডের আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করার ফলে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন এই প্রবীণ নেতা।
১৯৪৬ সাল থেকে তিনি সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হন এবং ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম স্বৈরশাসক জামাল আব্দুল নাসেরের আমলে কারাবরণ করেন। ১৯৬৭ সালে আবার ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয় তাকে। কিন্তু ব্রাদারহুড কর্মীদের আন্দোলনের মুখে চার বছর পর ১৯৭৩ সালের ১ অক্টোবর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৮৭ সালে কায়রোর রাবেয়া স্কোয়ার ও সাইয়েদা জায়নব এলাকা থেকে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মিসরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তিনি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগান কায়রো সফর করলে তিনি এরদোগান পরিবারের জামাই হিসেবে অসুস্থ বান্নার সাথে তার কায়রোর মুহানদিসিন বাসভবনেই সাক্ষাৎ করেন। তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায়ও লেখালেখির মাধ্যমে সংগঠন, আইন ও বিচারসহ জীবনমুখী অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাছাড়া তার মেধা ও চিন্তাধারার আলোকে আইন ও বিচারে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। তিনি আইনজীবী অঙ্গনে নবধারা সৃষ্টিতে সর্বদা আলোড়ন সৃষ্টিকারী হয়ে থাকতেন।
তার মৃত্যুতে আর্ন্তজাতিক স্কলার ফোরামের চেয়ারম্যান ড. ইউসুফ আল কারযাভি, আল নাহাদা দলের প্রধান ড. রশিদ আল ঘান্নুশিসহ অনেকই শোক প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button