আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে হজ্জ্বের নিদর্শন

ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজ আহমাদ: এই বিশ্ব জাহানের অণু পরমাণু থেকে শুরু করে চারিদিকে বিরাজমান সব কিছুই মহান আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ হলেন সমস্ত কিছুর স্রষ্টা, পরিচালক ও ধ্বংসকারী। আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, পাহাড়, পর্বত, সাগর, মহাসাগর, গাছ, পালা, ফুল, ফল, কীট, পতঙ্গসহ অসংখ্য প্রাণীকূল সবই তাঁর নিদর্শন। আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে সব সৃষ্টির সেরা হিসেবে। এই মানুষের জন্যই এতোসব নিদর্শন। মানুষ এসব দেখে দেখেই স্রষ্টাপাক আল্লাহকে খোঁজার চেষ্টা করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করবে এটাই আল্লাহর উদ্দেশ্য। আল্লাহর গোলামী করার জন্যই আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন। গোলামীর অপর নাম হল এবাদত। এই এবাদতের জন্যই আদম সন্তানদের আছে পরিকল্পনা, দায়িত্ব পালন ও পরকালের জবাবদীহিতা। মানুষের এই জীবন বিধানের নাম হল ইসলাম। ইসলাম হল পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলাম যে মেনে চলে সেই হল মুসলিম। মুসলিম হল আল্লাহর অনুগত বান্দাহ। আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা:) প্রদর্শিত শান্তিপূর্ণ জীবন বিধানই হল মুসলমানের একমাত্র পথ। ইসলামের মূল ভিত্তি হল ৫টি। যথা-ঈমান, নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জ। এবাদতের মূল হল ঈমান। অদৃশ্য আল্লাহ্, নবী, রাসূল, ফেরেস্তা, পরকাল, বিচারদিবস ইত্যাদির উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করার নাম হল ঈমান। এই ঈমান পোষণকারীদের বলা হয় মোমেন। মোমেন যাবতীয় র্শিক থেকে মুক্ত। ঈমানে গন্ডগোল হলে সব এবাদত বাতিল হয়ে যায়। অদৃশ্যের উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করার নাম হল ঈমান। অদৃশ্যের উপর দৃঢ় বিশ্বাস যার থাকে সেই নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ্ব সহ সব এবাদতের অনুষ্ঠানে মনোনিবেশ করতে পারে। আল্লাহ পাক প্রথম নবী আদম (আ:) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) পর্যন্ত অহির জ্ঞান বা কিতাব দিয়ে হেদায়াতের পথ সুগম করে দিয়েছেন। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) হলেন সবার সেরা ও খাতামুন নাবিয়্যত। হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর আল্লাহ নাজিল করেন আল কুরআন। আল কুরআনেই ঈমান, নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জ্বের অনেক নিদর্শন রয়েছে। বিশ্ব নবীর প্রদর্শিত হাদীসে রয়েছে ইসলামী জীবন বিধানের পরিপূর্ণ নক্শা। সব সমস্যার সমাধানেই সর্বদা কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ করতে হয়। হজ্জ নিদর্শনের মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:
কুরআন:- “আর (হে মুহাম্মদ) নিসন্দেহে তুমি এ কুরআন লাভ করছো এক প্রাজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ থেকে। (সূরা নমল-৬) অভিনব বিজ্ঞানময় দুনিয়ার সেরা গ্রন্থ আলকুরআন। কুরআন আল্লাহ তায়ালার সেরা নিদর্শন। আল কুরআন সম্মোহনী শক্তিতে ভরপুর। আল কুরআন এমন এক কিতাব যার মধ্যে কোন ভুল নেই। বিশ^বাসীর মধ্যে এই কুরআনই সর্বাধিক পঠনীয়। আল্লাহ বলেন, যদি আমি এই পাক কুরআনকে পাহাড়ের উপর নাজিল করতাম তবে আপনি মুহাম্মদ (সা:) অবশ্যই ঐ পাহাড়কে আল্লাহর ভয়ে ভীত ও বিগলিত অবস্থায় দেখতে পেতেন।” (সূরা হাসর) কুরআনে আল্লাহ বলেন-“নামায কায়েম কর ও যাকাত প্রতিষ্ঠা কর।” জবাবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত প্রত্যেক মোমেনকে নামায আদায় করে আল্লাহ পাকের সাথে মোলাকাত ও কথোপকথন করতে হয়। আল্লাহকে পাওয়ার বড় মাধ্যম হল নামায। নামাযে কিয়াম, রুকু, সিজদাহ, তাশাহুদ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ, ক্ষমা ও প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নিয়ে বান্দাহ ক্রমেই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে থাকে। কুরআন পাকে আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর।”
সূর্য ও চন্দ্র : আকাশে নূতন চাঁদ দেখে প্রতি, রমযানে রোযা পালন করা ফরয। রমযানের মাসব্যাপী সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে দূরে থাকতে আল্লাহ পাকের নির্দেশ, “ইহাই রোযা।” আল্লাহ বলেন-“হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর (রমযানের) রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। আশা করা যায় যে এরদ্বারা তোমরা মোত্তাকী বা পরহেজগর হতে পারবে। (বাকারা-১৮৩) নামাযের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, “দিবসের উভয় প্রান্তে (ফজর, যোহর ও আসরে) এবং রাতের কিছু অংশে (মাগরিব ও এশায়)নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই পুণ্য পাপকে দূর করে দেয়। জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত হজ্ব অনুষ্ঠানে হাজীগণ ব্যস্ত থাকে এভাবেই।
মক্কা : আল্লাহ বলেন-“আমিতো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর (মক্কার) প্রভূর এবাদাত করতে যিনি একে করেছেন সম্মানিত, সবকিছু তাঁরই। আমি আরো আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভূক্ত হই। (সূরা নামল-৯১) আল্লাহ বলেন, “কসম এই শান্তিপূর্ণ শহর (মক্কার)। [সূরা তীন-৩)আল্লাহ পাক আরো বলেন-“নিশ্চয় মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর (কাবা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাতো বাক্কায় (মক্কায়)। তা বরকতময় ও বিশ্ব জগতের দিশারী। এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। যেমন মাকামে ইব্রাহীম। আর যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাবার সামর্থ আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ্ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ প্রত্যাখান করলে সে জেনে রাখুক আল্লাহ বিশ্ব জগতের মুখাপেক্ষী নন।” (সূরা আল ইমরান-৯৬-৯৭)।
কা’বা ঘর : কা’বা ঘর বিশ্ববাসীর জন্য পথ প্রদর্শক, ইসলামের কেন্দ্রভূমি। এই সেই কা’বাঘর যা ধ্বংস করতে এসে আবরাহা বাদশাহ হাতী বাহিনী সহ সমূলে নি:শেষ হয়ে গিয়েছিল। সূরা ফিলে তার বর্ণনা রয়েছে। তাহল :-
হাতি বাহিনী ধ্বংস : তুমি কি দেখনি, তোমার রব হাতি ওয়ালাদের সাথে কী (ব্যবহার) করেছেন? তিমি কি তাদের চালাকি বানচাল করে দেন নি? আর তিনি তাদের উপর ঝাকে ঝাকে পাখি পাঠালেন যারা তাদের উপর পাকা মাটির তৈরী পাথর ফেলছিল। ফলে তাদেরকে (পশুর) চিবানো ভুসির মতো করে দিলেন। (সূরা ফিল)।
এই কাবা ঘরের হজ্জ্ব করা ফরয। ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক সেরা এবাদত এই হজ্জ্ব। সর্বসেরা নিদর্শন কাবাঘর দুনিয়া জাহানের শ্রেষ্ট এবাদতের ঘর। সারা বিশে^র একমাত্র কিবলা এই কা’বা ঘর। এই কাবা ঘরেরই চারিদিকে সারাক্ষনই বিশে^র কোটি কোটি মুসলিম তোয়াফ আর সিজদাহ করতে ব্যস্ত। এটাই আল্লাহর সেরা ঘর। মহামহিম আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, আল্লাহর শান্তিপূর্ণ সান্নিধ্য পেতে আল্লাহ এই কা’বার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে তোয়াফ করে আল্লাহর মাগফিরাত আর সন্তুষ্টি কামনায় পাগল সবাই। শুধু তাই নয়, অগণিত হাজী ও মোমেন মুসলমান কা’বার চারিদিকে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মসজিদ থেকে এই কা’বাকে কিবলা করে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ সর্বত্র সিজদাকারী নরনারী আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে পেরেশান। আদম (আ:) বেহেস্ত থেকে জমিনে আসার সময় বেহেস্তের পবিত্র পাথর হাজরে আসাদ এনেছিলেন। ঐ হাজারে আসওয়াদ কেন্দ্রিক মসজিদই আল্লাহর ঘর আদি মসজিদ। উহাই কা’বাঘর। তারই চারিদিকে সারাবিশ্ব মুসলিম সারাক্ষন কিয়াম, রুকু, সিজদা, তোয়াফ করে গভীর মনোনিবেশ সহ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে আত্মনিয়োগ করে।
হাজরে আসওয়াদ : কা’বার কোনে অত্যন্ত মজবুতভাবে সুরক্ষিত বেহেস্তী সেই হাজরে আসওয়াদ পাথর। অনন্য এক মহা নিদর্শন ইহা। সমস্ত হাজীর প্রধান আকর্ষণ যেন এই হাজরে আসওয়াদের প্রতি। এখান থেকেই তোয়াফ শুরু, এখানেই শেষ করতে হয়। হাদীসে উল্লেখিত জান্নাত থেকে এ পাথর আনা হয়েছে। ইহা ছিল দুধের চেয়ে সাদা। আদম সন্তানের পাপের ছোয়ায় এই পবিত্র পাথরটি কালো করে দিয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, “হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা দুধের চেয়েও সাদা ছিল কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটিকে কালে করে দিয়েছে। (তিরমিযি, আহমদ)
রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “অবশ্যই কিয়ামতের দিন আল্লাহ এই রুকন (হাজরে আসওয়াদ) কে উত্থিত করবেন। তখন তার দু’টি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখতে পাবে, এবং তার একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে, এবং যে ব্যক্তি তা স্পর্শ করেছে তার ব্যাপারে সত্য সাক্ষী দিবে। (তিরমিযী, আহমদ)
রুকনুল ইয়ামানী : কা’বার দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে অবস্থিত রোকনে ইয়ামানী। ইহাও অনেক বরকত পূর্ণ আরেক নিদর্শন। নবী (সা:) তার পবিত্র হাতে তা ধরতেন এবং তার উপর স্বীয় হাত ঘুরাতেন যা ইবনে ওমার (রা:) থেকে বর্ণিত। “নিশ্চয়ই রুকনে ইয়ামানী এবং রুকনে আসওয়াদ স্পর্শ করলে পাপসমূহ মাফ হয়ে যায়।”
হিজর বা হাতীম : রুকনে শামীর পশ্চিম পাশের মাঝখানে এই হাতীম অবস্থিত। কা’বা ঘরের উত্তর পাশের্^র গোলাকার খোলা জায়গাটুকু হল হিজর বা হাতীম। ইহা কা’বার অংশ। কুরাইশদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ অংশ তৈরী করা সম্ভব হয়নি। যে ব্যক্তি হিজর (হাতীমে) নামায আদায় করল সে যেন কা’বা ঘরের ভিতরে নামায আদায় করল।
মাকামে ইব্রাহীম : হাজরে আসওয়াদের পূর্বপাশের সুদর্শন গ্লাসে আবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত এই মাকামে ইব্রাহিম। আল্লাহ বলেন, “তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শন সমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইব্রাহিম উক্ত নিদর্শন সমূহের অন্যতম। (আল ইমরান-৯৭)। মাকামে ইব্রাহীম হল ঐ পাথর যার উপর আল্লাহর খলীল ইব্রাহিম (আ:) দাড়িয়ে কা’বা ঘর নির্মাণ করছিলেন। তিনি যখন উপরে উঠতে চাইতেন পাথরটিও তখন আল্লাহর কুদরতে উপরে উঠত। আর ইসমাঈল (আ:) তাকে পাথর এগিয়ে দিচ্ছিলেন। একদিক শেষ হলে অন্য দিকে যেতেন এবং বাকী দিক গুলোর দেয়াল নির্মাণের আগ পর্যন্ত পাথরটি ইব্রাহীম (আ:) কে নিয়ে কাবার চারপাশে চক্কর লাগাতো। এটি ছিল হযরত (আ:) এর প্রকাশ্য মো’জেযা। এই মাকামে ইব্রাহীমের উপর দাঁড়িয়ে ইব্রাহিম (আ:) আযান এবং হজ্জ্বের ঘোষণা দিয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর মো’জেযার কারণে পায়ের নিচের পাথরটি ভিজে এতে তাঁর পায়ের দাগ বসে যা। হাজীগণ এখনও তা নিজ চোখে দেখেন।
আনাস (রা:) ওমার (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্ (সা:) এটা আমাদের রবের খলীলের মাকাম (স্থান) আমরা কী এটাকে (মাকামে ইব্রাহীমকে) মোসাল্লা নামাযের স্থান (হিসেবে গ্রহণ) করব না? তখন আল্লাহ তায়ালা (অবতীর্ণ করলেন) “এবং তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাযের স্থান হিসেবে গ্রহণ কর।” প্রত্যেক হাজীকে কা’বা ঘর তোয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে বা সম্ভাব্য দুরুত্বে দুই রাকাত ওয়াজিবুত তোয়াফ নামায আদায় করতে হয়।
জমজম : মহান আল্লাহ পাকের অন্যতম এক নিদর্শন জমজম কুপ। সুস্বাদু ও সুপেয় স্বর্গীয় এক কুপ। অনন্ত কালের জন্য এ কুপের স্বাস্থ্যকর পানি পান করে চলছে। কোন দিন শেষ হয়নি, হবেও না। অশেষ বরকতময় প্রসিদ্ধ এই যমযম কুপ। ইহা হাজরে আসওয়াদের পূর্ব দিকে ও মাকামে ইব্রাহীমের দক্ষিণে অবস্থিত। জমজমের পানি বের হবার ইতিহাস দুনিয়া ব্যাপী প্রসিদ্ধ। বিশ্বব্যাপী জমজমের পানির অশেষ ফজিলতের ব্যাপক প্রচার রয়েছে। আল্লাহপাক এ পানির অনেক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছেন। দুনিয়ার সব ধরনের পানির সেরা পানি এই জমজমের পানি। সহীহ বুখারী ৩/৪৯২ তে বর্ণিত, নবী (সা:) এর বক্ষ ইসরা ও মিরাজের ঘটনার পূর্বে এ পানি দ্বারা ধৌত করা হয়।
শরিয়ত ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ট পানি এই জমজম। ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সা:) বলেছেন: “যমীনের উপরি ভাগের সর্বোত্তম পানি হল জমজমের পানি।” (তাবারানী ১১/৯৮)
জমজমের পানি খাদ্যের ন্যায় পানকারীকে পরিতৃপ্ত করে। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ বিন সামেত আবু যর(রা:) থেকে তাঁর ইসলাম গ্রহণের খবর বর্ণনা করেন। তাতে রয়েছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম) আবু যরকে বলেন, কখন থেকে এখানে রয়েছ? আবু যর বলেন: আমি বললাম: ৩০ দিবা রাত্র এখানে রয়েছি। তিনি বলেন: তোমার খাবার কি ছিল? আবু যর বলেন: আমি বললাম: আমার খাবার জমজম পানি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। পরিশেষে এমন মোটা হয়ে গেলাম যে পেটের চামড়া ভাজ হয়ে গেল। কলিজায় ক্ষুধার লেশমাত্র পেতাম না। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই এ পানি বরকতময়, নিশ্চয়ই তা খাদ্যের খাদ্য। (মুসলিম ৪/১৯১৯)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে বর্ণিত। “যমীনের বুকে সর্বোত্তম পানি হল জমজমের পানি, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যের উপকরণ ও পীড়িতদের জন্য রয়েছে আরোগ্যের উপকরণ। আল্লাহ তায়ালা এ বরকতের পানিকে রক্ষা করেছেন। এটি আল্লাহর মহব্বতের একটি স্পষ্ট প্রমান বা নিদর্শন। সুতরাং তা শতাব্দির পর শতাব্দিতেও বিলুপ্ত হয়নি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে তার স্বচ্ছতা, বিশুদ্ধতা ও যাবতীয় দোষ ও মিশ্রণ হতে মুক্ত প্রমাণ হয়।
সাফা মারওয়া : কা’বার পূর্ব পাশের অবস্থিত ঐতিহাসিক দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়া। মা হাজেরার শিশু সন্তান ইসমাঈলের পিপাসা নিবারণের চরম লক্ষ্যে সাফা মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে দৌড়ানের স্মৃতি স্বরূপ আজও হাজীগণ একইভাবে ৭ বার করে দৌড়িয়ে থাকে। হজ¦ ও উমরা পালনের সময় উভয় পাহাড়ের মাঝে সায়ী করা হয়। ইহা হজ¦ ও উমরার রুকনের অন্তর্ভূক্ত।
আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত। অতএব যে ব্যক্তি এই গৃহের হজ্জ্ব অথবা উমরা করে তার জন্য এতদূভয়ের প্রদক্ষিণ করা দোষনীয় নয়, এবং কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে আল্লাহ গুণগ্রাহী সর্বজ্ঞাত। (বাকারা-১৫৮) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনের অন্তর্ভূক্ত হল যে, তিনি তার বান্দাদের জন্য সাফা ও মারওয়াকে এমন একটি নিদর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতীক বানিয়েছেন যে, তারা এর নিকট দু’আ, যিকির বা সেখানে যে আমল তাদের জন্য ফরয করা হয়েছে তা পালনের মাধ্যমে তার ইবাদত করতে থাকে। ইহার সম্মান মূলত: আল্লাহ তায়ালা যে উভয়ের মাঝে সায়ী করার বিধান প্রযোজ্য করেছেন তার মধ্যেই। পাহাড় দ্বয়ে স্পর্শ করা শরীয়ত সম্মত নয়।
মিনা : মিনা হল রক্তপাতের স্থান। ইব্রাহীম (আ:) ইসমাঈল (আ:) কে আল্লাহর হুকুমে এই মিনাতেই কুরবানী দিতে এনে ছিলেন। সেই থেকেই মিনা হয়ে গেল হজ্জ্বের এক নিদর্শন। ইহা সম্মানিত ও পবিত্র নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভূক্ত। শুধু হজে¦র সময় রাত্রি যাপন, পাথর নিক্ষেপ ও পশু জবাই এখানে করতে হয়। আল্লাহ বলেন, “এবং নির্ধারিত (তাশরীকের) দিবস সমূহে আল্লাহর (বিশেষ) যিকির কর; অত:পর কেউ যদি দু’দিনের মধ্যে (মক্কায় ফিরে যেতে) তাড়াতাড়ি করে তবে তার জন্য কোন পাপ নেই, পক্ষান্তরে কেউ যদি বিলম্ব করে তবে তার জন্যও পাপ নেই, এমনটি মুত্তাকীর জন্য এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও জেনে রেখো যে, অবশ্যই তোমাদের সকলকে তারই নিকট সমবেত করা হবে। (সূরা বাকারা-২০৩)।
আরাফাত : ইহা আদম হাওয়া (আ:) এর মাগফিরাতের মাঠ। সাড়ে তিনশত বছর ধরে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি সহ তাওবার সমাপ্তি হয় এখানে। এই আরাফাতে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। বিশ^ নবী (সা:) দেড় লক্ষাধিক সাহাবীর সামনে বিদায় হজ্জ্বের ভাষন দেন এখানে। এটাই তার শেষ ভাষণূূূূ। সারা বিশে^র সব হাজীদের গুনা মাফের মহা মিলন মেলা এই আরাফাতের মাঠ। ৯ই জিলহজ্জ এই আরাফাতের মাঠেই লক্ষ লক্ষ হাজী আকাশের দিকে হাত তুলে কেঁদে কেঁদে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে দোয়া করতে থাকে। এই আরাফাতের মাঠেই আল্লাহ সর্বাধিক সংখ্যক পাপীকে ক্ষমা করে থাকেন। হাজীদের এখানে অবস্থান করা ফরয। আল্লাহ বলেন-“তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করলে তাতে তোমাদের পক্ষে কোন অপরাধ নেই; অত:পর যখন তোমরা আরাফাত হতে প্রত্যাবর্তিত হও তখন পবিত্র (মাশয়ারে হারাম) স্মৃতি স্থানের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যেরূপ নির্দেশ দিয়েছেন তদ্রুপ তাকে স্মরণ করো এবং নিশ্চয় তোমরা এর পূর্বে বিভ্রান্তদের অন্তর্গত ছিলে। (সূরা বাকারা-১৯৮)

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button