কুরবানীর ঈদ : শিক্ষা ও গুরুত্ব

eidমুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: কুরবানী শব্দটি আরবি কুরবুন শব্দ থেকে উৎকলিত। অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কাছে যাওয়া, ঘনিষ্ঠ হওয়া, সান্নিধ্য লাভ করা, নৈকট্য অর্জন করা, উৎসর্গ করা ইত্যাদি। ঈদের এক অর্থ- ঘুরে আসা, ফিরে আসা; আরেক অর্থ খুশি বা আনন্দ। যেহেতু প্রতি বছর ঈদ ফিরে  আসে তাই একে ঈদ বলা হয়। এ দিনটি মু’মিনের জন্য আনন্দ ও খুশির দিন বিধায় একে ঈদ বলে নামকরণ করা হয়েছে। লিসানুল আরাব অভিধানে বলা হয়েছে- আরবদের কাছে ঈদ এমন এক সময়কে বলা হয় যাতে আনন্দ ও দু:খ ফিরে আসে। ঈদ শব্দটির ব্যবহার কুরআন মজীদেও রয়েছে। যেমন- মরিয়ম তনয় বলল, হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে ঈদ (আনন্দৎসব) এবং আপনার কাছ থেকে নিদর্শন (সূরা মায়িদা- ১১৪)।
১. ঈদের সূচনা: এক ঘেঁয়ে জীবনধারা থেকে কিছু সময়ের জন্য মন ও মানসিকতাকে স্বাধীন করে মুক্ত মনে হাসি-খুশি করা একটি মানবিক চাহিদা। এ চাওয়া থেকেই বিভিন্ন জাতি ও গোত্র তাদের আকীদা-বিশ্বাস অনুযায়ী বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। মহানবী (স.) মদীনায় আগমন করে দেখতে পান যে, লোকেরা বৎসরে দু’দিন তথা নওরোজ ও মেহেরজানের দিবস খেলা-ধূলা ও আনন্দ-ফূর্তি করে। নওরোজ উৎসব উদ্যাপিত হতো শরতের পূর্ণিমায় আর মেহেরজান উৎসব উদ্যাপিত হতো বসন্ত পূর্ণিমায়। রাসূলূল্লাহ (স.) এদেরকে জিজ্ঞেস করলেন এ দু’টি দিবস কিসের। তারা বলল- আমরা জাহেলী যুগে এ দু’দিনে খেলা-ধূলা ও আনন্দ-ফূর্তি করতাম। তখন রাসূলূল্লাহ (স.) বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা তোমাদের ঐ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে ভাল দু’টি দিন দান করেছেন, তা’হলো ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন (আবু দাউদ)। অত:পর ৬২৮ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক হিজরী দ্বিতীয় বর্ষে দু’ঈদের সূচনা হয় (আর রাহিকুল মাখতুম)।
২. সর্বপ্রথম কুরবানী: আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন তোমার প্রতিপালকের জন্য নামায আদায় করো ও কুরবানী করো (সুরা কাওসার- ২)। মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানী হলো- হযরত আদম (আ:) এর পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- আর তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের কাহিনী শুনিয়ে দাও। যখন তারা দু’জনে কুরবানী করলো, একজনের কুরবানী কবুল হলো, অপরজনের কুরবানী কবুল হলো না (সূরা আল  মায়েদা:২৭)।
হাবিল মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি  সুন্দর দুম্বা কুরবানীরূপে পেশ করলো। আর কাবিল অমনোযোগ সহকারে খাদ্যের অনুপযোগী খানিক পরিমাণ খাদ্য শস্য কুরবানী স্বরূপ পেশ করলো। হাবিলের কুরবানী আকাশ থেকে একখন্ড আগুন এসে জ্বালিয়ে দিল। এটাকে কবুল হওয়ার নিদর্শন মনে করা হতো। পক্ষান্তরে, কাবিলের খাদ্য শস্য আগুন স্পর্শই করেনি। আর তা ছিল কবুল না হওয়ার নিদর্শন।
৩. সকল যুগে কুরবানী: সকল নবী-রাসূলের শরীয়তে কুরবানীর প্রচলন ছিল। তবে নিয়ম-নীতিতে ছিল পার্থক্য। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- আর আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর রীতি-নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ঐসব পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যেসব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন (সূরা হজ্জ : ৩৪)।
৪. কঠিন পরীক্ষা: কুরবানী মূলত: আল্লাহ তা’য়ালার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়ার একটি উজ্জল নিদর্শন। যার সূচনা করেছিলেন হযরত ইবরাহীম (আ:)। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- “যখন সে- (ইসমাঈল) তার (ইবরাহীমের) সাথে চলাফেরার বয়সে পৌঁছলো তখন একদিন ইবরাহীম তাকে বললো, প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যেন যবেহ করছি। বল দেখি কি করা যায়? পুত্র (বিনা দ্বিধায়) বললো, আব্বা! আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা শীঘ্র করে ফেলুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে অবিচল দেখতে পাবেন (সূরা আস সাফফাত: ১০২)। এটি ছিল পিতা-পুত্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইবরাহীম (আ:) থেকে দু’ধরনের পরীক্ষা নেন। ১. চরম ত্যাগ স্বীকারের পরীক্ষা। ২. কর্ম দ্বারা পরীক্ষা।
ত্যাগ স্বীকারের পরীক্ষা হলো- ক. মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থান গ্রহণ করার কারণে নমরূদ কর্তৃক আগুনে নিক্ষেপ, খ. নিজ বাসস্থান ও আপনজনকে রেখে সিরিয়ায় হিজরত করা, গ. সিরিয়া থেকে শিশু পুত্র ইসমাঈল ও স্ত্রী হাজেরাকে জন মানবহীন মরু প্রান্তরে নির্বাসন দেয়া, ঘ. শিশু পুত্রকে কুরবানী করার নির্দেশ।
২. কর্মের পরীক্ষা ছিল ত্রিশটি। তা ছিল দাওয়াত ও দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে পরীক্ষা (হিদায়াতুঅ কুরআন ১ম খন্ড, ই.ফা. বাংলাদেশ)।
৫. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ: যেমন পিতা তেমন পুত্র, উভয়ই কুরবানীর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- অত:পর যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আ:) আল্লাহ তা’য়ালার নিকট্ আতœসমর্úণ করল, ইবরাহীম ইসমাঈলকে কুরবানী করার জন্য অবনত মস্তকে মাটিতে ফেলে দিল, তখন আমি আহবান জানালাম, হে ইবরাহীম! তুমি অবশ্যই তোমার স্বপ্নের সত্যতা প্রমাণ করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই নেক্কারদের প্রতিফল দান করে থাকি। নিশ্চয় এ হলো স্পষ্ট মহান পরীক্ষা (সূরা আস সাফফাত: ১০৪ – ১০৬)।
৬. কুরবানীর পশু আল্লাহর নিদর্শন: কুরবানীর পশু মূলত আল্লাহরই নিদর্শন। কুরবানী দাতা এ  আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করে যে, কুরবানীর পশুর রক্ত তার আপন রক্তেরই স্থলাভিষিক্ত। সে এ আবেগও প্রকাশ করে যে, তার জীবনও আল্লাহর রাহে এভাবে কুরবানী করতে প্রস্তুত, যেভাবে এ পশু সে কুরবানী করছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- আর কুরবানীর উটগুলোকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর একটি বানিয়ে দিয়েছি (সূরা আল হজ্জ-৩৬)।
৭. নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: কুরবানী আল্লাহ তা’য়ালার নিয়ামতের বাস্তব কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। আল্লাহ তা’য়ালা পশুকে মানুষের বশীভূত করে দিয়ে তাদের ওপর বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। মানুষ পশু থেকে বহু উপকার লাভ করে। তার দুধ পান করে, গোশত খায়, তার হাড়, চামড়া, পশম থেকে বিভিন্ন দ্রব্যাদি তৈরী করে, চাষাবাদে এদের সাহায্য নেয়, তাদের পিঠে বোঝা বহন করে ও বাহন হিসেবে ব্যবহার করে। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- এভাবে এসব পশুকে তোমাদের জন্যে বশীভূত করে দিয়েছি যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার (সূরা আল হজ্জ-৩৬)।
৮. কুরবানী আল্লাহর জন্যে: কুরবানী করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর নৈকট্যলাভের উদ্দেশ্যে। আল্লাহ তা’য়ালা এ কুরবানী ও জীবন দানের প্রেরণা ও চেতনকে সমগ্র জীবনে জাগ্রত রাখার জন্যে নির্দেশ করে- ইরশাদ করেন- বলুন (হে মুহাম্মদ)! আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবকিছু আল্লাহর জন্যে (সূরা আল্ আনয়াম-১৬২)।
৯. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের বহি:প্রকাশ: আল্লাহর নামে পশু কুরবানী করা প্রকৃতপক্ষে একথারই ঘোষণা, যে আল্লাহ এসব নিয়ামত দান করেছেন এবং যিনি এসব আমাদের জন্যে বশীভূত করে দিয়েছেন তিনিই এসবের প্রকৃত মালিক। কুরবানী সেই প্রকৃত মালিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের বহি:প্রকাশ। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- আল্লাহ এভাবে পশুদেরকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তার দেয়া হেদায়াত অনুযায়ী তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ কর (সূরা আল হজ্জ-৩৭)।
১০. কুপ্রবৃত্তির কুরবানী: কুরবানীদাতা শুধুমাত্র পশুর গলায় ছুরি চালায় না; বরং সে তার সকল কুপ্রবৃত্তির ওপর ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করে এ অনুভূতি ব্যতিরেকে যে কুরবানী করা হয়, তা হযরত ইবরাহীম (আ:) ও হযরত ইসমাঈল (আ:) এর কুরবানীর ন্যায় হবে না; তা হবে শুধু গোশত খাওয়া। আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা’য়ালার কাছে পশুর রক্ত-মাংস পৌঁছে না; পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (সূরা আল হজ্জ-৩৭)।
১১. বৎসরে দু’টি ঈদ নির্ধারণের কারণ: দু’ঈদের দু’দিন নিছক কোন আনন্দ উৎসব বা উল্লাসের দিন নয়, বরং এগুলো সামগ্রিকভাবে সবাই মিলে আল্লাহকে স্মরণ, ইবাদতের পুরস্কার অর্জন এবং ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় খুশি প্রকাশের দিন। বৎসরে দু’টি দিনকে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের পূর্ণতার সময়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। রোযা পালন সমাপ্ত হওয়ার পরের দিন ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করা হয়, যিলহজ মাসে হজ পালন করা হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কুরবানী করা হয়। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ এসব ইবাদতের পূর্ণতায় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাই দু’ঈদের উদ্দেশ্য।
১২. যিয়াফতের দিন: ঈদের দিন মু’মিনগণ আল্লাহ তা’য়ালার মেহমান। তাই ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ। যিয়াফতের জন্যে উত্তম আহার হলো গোশ্ত। তাই কুরবানীর দিন কুরবানীর গোশত- দিয়ে প্রথম আহার করা সুন্নাত। প্রিয় নবী (স.) কুরবানীর গোশত দিয়ে কুরবানীর ঈদের দিনের প্রথম আহার করতেন।
১৩. কুরবানীর ফযীলত: কুরবানীর রয়েছে অনেক ফযীলত।
মহানবী (স.) বলেন- যিলহজের দশ তারিখ কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করা থেকে ভালো কাজ আল্লাহর কাছে আর কিছু নেই। কিয়ামতের দিন কুরবানীর পশু তার শিং, পশম ও খুর সহ হাজির হবে। কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা কবুল হয়ে যায় (তিরমিযী)।
সাহাবায়ে কিরাম রাসূলূল্লাহ (স.) কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুরবানী কি? প্রত্যুত্তরে রাসূল (স.) বলেন, তা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ:) এর সুন্নাত। সাহাবীগণ পূনরায় জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্যে কি পূণ্য রয়েছে?
মহানবী (স.) বলেন, তার প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে সাওয়াব রয়েছে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।
১৪. ঈদের দিনের সুন্নাত কাজ: ১. গোসল করা। ২. মিসওয়াক করা। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা।       ৪. নতুন জামা (থাকলে) অথবা পরিস্কার-পরিছন্ন জামা পরিধান করা। ৫. ঈদুল আযহার দিন খালি পেটে এবং ঈদুল ফিতরের দিনে কিছু খেয়ে ঈদগাহে আসা। ৬. এক রাস্তা দিয়ে আসা এবং অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়া। ৭. ঈদুল আযহায় আসা যাওয়ার পথে জোরে জোরে তাকবীরে তাশরীক- ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’ পড়া। ৮. প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠা। ৯. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। ১০. অসুবিধা না থাকলে পদব্রজে ঈদগাহে যাওয়া।
যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল
ওয়াজিব আমল : ১. দশ তারিখ কুরবানী করা, কোন কারণে দশ তারিখ কুরবানী করতে না পারলে এগার ও বার তারিখ করা। ২. নয় তারিখ ফজর থেকে তের তারিখ আসর পর্যন্ত জামাতে নামায পড়ার পর তাকবীরে তাশরিক একবার বলা ওয়াজিব। ৩. ঈদের নামাজ পড়া।
সুন্নাত আমল : ১. চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত নখ, চুল ইত্যাদি না কাটা। ২. দশ তারিখের পূর্ব পর্যন্ত রোজা রাখা, বিশেষ করে আরাফার দিন। ৩. রাতে যথাসম্ভব যিকির আযকার ও নফল ইবাদত করা।
মুস্তাহাব আমল : তাহলিল তথা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ অধিক হারে পড়া। ২. দান সদকা করা। ৩. তওবা ও ইসতেগফার করা।
১৫. কুরবানীর পশু: উট, গরু, মহিষ সর্বাধিক সাত নামে কুরবানী করা যায়। আর ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক নামে কুরবানী করা যায়। উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা এ ছয়টি পশু ছাড়া অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই।
১৬. মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী: মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা জায়েয। বরং অফুরন্ত পূণ্যের আশায় আপন মৃত পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী প্রমুখের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানীকৃত পশুর গোশত সকলের জন্য খাওয়া জায়েয।
১৭. ঈদের নামায: ঈদের নামায আদায়ের জন্য সর্বপ্রথম এ বলে নিয়ত করবে যে, আমি ঈদুল ফিতরের দু’রাকাত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সাথে এই ইমামের পিছনে কিবলামুখী হয়ে আদায় করছি। তারপর ‘আল্লাহ আকবার’ (তাকবীরে তাহরিমা) বলে হাত বাঁধবে এবং ছানা পাঠ করার পর ইমামের- সাথে দু’বার আল্লাহু আকবার বলে হাত উঠায়ে ছেড়ে দেবে। তারপর তৃতীয়বার আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধবে। অত:পর ইমাম যথারীতি তাউয ও তাসমিয়া (আউযুবিল্লাহ ও বিছমিল্লাহ) সহ সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা বা কোন আয়াত পাঠ করবেন। তারপর রুকু সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাআতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা ও কুরআন মজীদের সূরা বা আয়াত পাঠ করার পর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে ইমাম সাহেব তিনবার আল্লাহু আকবার বলে হাত উঠায়ে ছেড়ে দেবেন এবং চতুর্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবেন। তারপর সিজদা ও তাশাহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন।
১৮. খুতবা:  নামায শেষে ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করবেন। ঈদের খুতবা জুমার খুতবার ন্যায় দু’টি অংশে বিভক্ত। খুতবায় আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, কুরবানী মাসআলা কুরবানীর ফযীলত ইত্যাদি প্রসঙ্গে আলোচনা করবেন।
১৯. কুরবানীর গোশত: কুরাবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ গরীব মিসকীন ও একভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করা এবং একভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা মুস্তাহাব। পরিবারের সদস্য বেশী হলে সম্পূর্ণ গোশত নিজের জন্য রেখে দেয়াতেও কোন দোষ নেই।
ঈদের আনন্দ একা ভোগ না করে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও গরীব দু:খীদেরকে নিয়ে ভোগ করা অপরিহার্য। আর ঈদের এ আনন্দ হতে হবে আল্লাহর স্মরণ, ইবাদত বন্দেগী ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে।
লেখক: প্রধান ফকীহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button