‘মার্কিন মূল্যবোধ’ শিখতে গিয়ে প্রাণ হারালেন তিনি

sabika৯/১১ হামলার পর মুসলিম দেশের নাগরিকদের ‘মার্কিন মূল্যবোধ’ শেখাতে শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি শুরু করে ইসলামফোবিক যুক্তরাষ্ট্র। বিনিময়ের নামে একপাক্ষিকভাবে মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে মার্কিন পরিবারের সঙ্গে রেখে সেখানকার স্কুলে পড়ানো শুরু হয়। সেই সুযোগ নিয়েই টেক্সাসে শিক্ষা নিতে গিয়েছিলেন পাকিস্তানী শিক্ষার্থী সাবিকা শেখ। স্কুলে ‘বন্দুকবাজির মার্কিন মূল্যবোধ’ শিখে প্রাণ হারালেন তিনি।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর ২০০২ সালের অক্টোবরে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনে চালু হয় এই ইয়েস কমূর্সচি। এ কর্মসূচিতে অর্থায়ন করে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর আর স্পন্সর করে ব্যুরো অব এডুকেশনাল এন্ড কালচারাল অ্যাফেয়ার্স (ইসিএ)। কর্মসূচির আওতায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে শহরের একটি পরিবারের সঙ্গে বাস করে আমেরিকার সমাজ মূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা নেয়। নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করে আমেরিকানদের নিজ দেশ এবং সংস্কৃতির বিষয়ে শিক্ষা নিতে সাহায্য করে। ১৭ বছর বয়সী সাবিকা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গিয়েছিলেন সেই কর্মসূচির আওতায়। তবে সেখানকার সংস্কৃতিতে জেঁকে বসা অস্ত্রবাজির সংস্কৃতির কবলে পড়ে প্রাণ হারালেন তিনি।
২০০৩ সাল থেকে ১ হাজার ১শ’র বেশি পাকিস্তানী শিক্ষার্থী ইয়েস কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছে। শুক্রবারের ঘটনায় নিহত ১৭ বছর বয়সী সাবিকা এদেরই একজন। পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর করাচির বাসিন্দা ছিলেন। শহরের গুলশান এ ইকবাল এলাকার বাড়িতে তার বাবা আবদুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেছেন, সে অসাধারণ, মেধাবী আর প্রতিভাবান। আমার মেয়ে কখনও চতুর্থ হয়নি। সব সময়ই প্রথম দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় হয়েছে। তবে মার্কিন বন্দুকবাজির কবলে পড়ে সেই প্রতিভার মৃত্যু ঘটেছে।
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ক্ষমতাশালী অস্ত্র-লবির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বন্দুক রাখতে তেমন কোনও বেগ পেতে হয় না। আর এমন বৈধ অস্ত্রের অপপ্রয়োগেই সেখানে ধারাবাহিকভাবে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। স্কুলে বন্দুক হামলা যেন সেখানকার সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। টেক্সাসের সবশেষ এই ঘটনা চলতি বছরের স্কুলে ২২তম বন্দুক হামলার ঘটনা। তার বাবা আবদুল আজিজ সাংবাদিকদের বলেছেন, এত ছোট বয়সে সে এমন সব কিছু বলতো যা আমি সবসময় বুঝে উঠতে পারতাম না। এখনও আমি বিশ্বাস করে উঠতে পারছি না আমার মেয়ে আর নেই।
টুইন টাওয়ার হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে জরুরি হয়ে হাজির হয় ‘রাজনৈতিক ইসলাম’। বিখ্যাত আরব-আমেরিকান সংস্কৃতি-তাত্ত্বিক এডওয়ার্ড সাঈদ একে শনাক্ত করেছিলেন নিজেদের সভ্যতাকে এককভাবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসানোর সুদীর্ঘ প্রবণতার মধ্যে। ওরিয়েন্টালিজম নামের সাড়া জাগানো বইতে তিনি দেখিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম পরিচয় নির্মাণ করতে গিয়ে তাকে সবসময়ই স্টিরিওটাইপ এক ধারণার মধ্য দিয়ে চেনে, যাকে তিনি প্রাচ্যবাদ নামে ডাকতেন। ৯/১১-এর পর সেই প্রাচ্যবাদী সাঁচে নির্মিত ধারণা থেকেই মুসলিমদের ‘সভ্য’ করতে সে দেশের পরিবারের কাছে রেখে কথিত মহান মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয়া শুরু হয়। সাবিকা সেই ‘সভ্যতার শিক্ষা’র বলি।
সমালোচকদের দাবি, লবিস্ট গ্রুপের জোরালো প্রচেষ্টার কারণে বারবার থেমে যায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার প্রচেষ্টা। এরপরও আইন কিছুটা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় ট্রাম্প প্রশাসন। অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর জীবনবৃত্তান্ত যাচাইয়ের আওতা বৃদ্ধি, বয়সসীমা বৃদ্ধি এবং আদালতের অনুমতি ছাড়াই পুলিশকে সন্দেহভাজনের অস্ত্র বাজেয়াপ্তের ক্ষমতা দিয়ে অস্ত্র আইন সংশোধনের পরিকল্পনার বিস্তারিত জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রশাসনের এই প্রচেষ্টার মধ্যেও শুক্রবার সকালে টেক্সাসের সান্তা ফে স্কুলে ঢুকে পড়ে এক বন্দুকধারী গুলী করা শুরু করলে অন্তত ১০ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় ১৭ বছরের এক কিশোরকে সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে আটক করা হয়েছে। আবদুল আজিজ মেয়ের মৃত্যু সম্পর্কে জানান, গুলির ঘটনা শোনার পরই তিনি মেয়েকে ফোন করতে থাকেন। তবে সে আর ফোন ওঠায়নি। ‘আমি তখন এখানকার ফরেন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম সমন্বয়ককে ফোন করে ঘটনা বলে জানতে চাই। তারা আমাকে প্রায় তিন ঘণ্টা পর নিশ্চিত করে সাবিকা মারা গেছে।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button