যাকাতভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব

sylhetবাংলাদেশস্থ সৌদী দুতাবাসের দ্বা’য়ী ও জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা নরসিংদীর উপাধ্যক্ষ শায়খ হাফিয মাওলানা মাহমুদুল হাসান আল মাদানী বলেছেন- ইসলামের মুল পাচঁটি স্তম্ভের মধ্যে একটি হচ্ছে যাকাত। আর যাকাতের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় হলো উশর। কিন্তু আমাদের সমাজে নামাজ রোযার উপর যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যাকাতের উপর সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেনা। অথচ যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব। আমাদের সমাজে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে যাকাত আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু যাকাত আদায়ের পদ্ধতি এবং ব্যয়ের ক্ষেত্র সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না থাকায় মানুষ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যাকাত সম্পর্কে ধারণা থাকলেও উশর সম্পর্কে আমাদের সমাজে তেমন কোন আলোচনা নেই। কিন্তু যাকাত এবং উশর উভয়ই পরস্পরের সাথে সর্ম্পকযুক্ত। তাই কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা অনুসারে যাকাত এবং উশর আদায় ও এর ব্যয়ের ব্যাপারে আলেম সমাজকে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে।
তিনি শনিবার জালালাবাদ ইমাম ফাউন্ডেশন সিলেট-এর উদ্যোগে ‘যাকাত ও উশর’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে ও  সেক্রেটারী মাওলানা জামাল আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে জাতীয় ও সিলেটের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ স্থানীয় আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ অংশ নেন। নগরীর দরগাগেইটস্থ কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শায়খ হাফিয মাওলানা মাহমুদুল হাসান আল মাদানী আরো বলেন- বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্বে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আল্লাহর শরীয়াতের বিধানের বাস্তবায়ন থেকে দুরে সরে আসা। এর ফলে মুসলিম উম্মাহ আজ নানা বিপর্যয়ের জর্জরিত। দারিদ্র্যতা, ক্ষুধা, বেকারত্ব, অন্যের সম্পদ লুন্ঠন, ছিনতাই, ডাকাতি, খুন-খারাবী সহ সমাজে জঘন্য অপরাধে আমাদের সমাজ আজ কলুষিত। যতই আইন বিচার হোক না কেন? ইসলাম এবং তার অর্থনৈতিক বিধিবিধানের বাস্তবায়ন ছাড়া এ সংকট থেকে মুক্তির কোন পথ নেই। কারণ একমাত্র ইসলামী অর্থনীতিই তার ঈমানী মুল্যবোধ, উন্নত চরিত্রের সুষমা, আর শরয়ী অনুশাসনের দ্বারা মানুষের জন্য পুত পবিত্র সুখ সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ সম্মানিত জীবন নিশ্চিত করতে পারে। তাই আমাদের আলেম সমাজকে যাকাত ও উশরের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমাজের মুসলমানদের সচেতন করতে হবে। তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্র এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- আন্জুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের সভাপতি প্রফেসর মাওলানা সৈয়দ একরামুল হক, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল আহাদ, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন বাংলাদেশস্থ সৌদী দুতাবাসের দ্বা‘য়ী শায়খ মাওলানা ইসহাক আল মাদানী, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা পাঠানটুলা সিলেটের প্রিন্সিপাল মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হযরত মাওলানা আব্দুল মতিন ধনপুরী, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, জাতীয় ইমাম সমিতি সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা এহসান উদ্দিন প্রমুখ।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশস্থ সৌদী দুতাবাসের দ্বা‘য়ী শায়খ সাঈদ নুরুজ্জামান আল মাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, হাফিজ মিফতাহুদ্দীন, মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, মাওলানা আসলাম রহমানী, হাফিজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মাহমুদুর রহমান দিলোয়ার, মাওলানা মকছুছুল করিম চৌধুরী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল আউয়াল তারাপাশি, মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ, মাওলানা ওলীউর রহমান, মাওলানা আব্দুল হাফিজ মাসুক, মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মতিউর রহমান বলেন- দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। যাকাত ও উশরের প্রয়োজনীয় অনুধাবন  এবং এ অনুযায়ী কাজ করার জন্য আলেম সমাজকে সচেতন করতেই আমাদের এই সেমিনার। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button