গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়

PMপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, জনগণ সরকারের সঙ্গে থাকলে কেউই দেশের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ হচ্ছে প্রধান শক্তি। জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকলে কেউই বাংলাদেশের কোনরকম ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না ইনশাআল্লাহ। আমি একথা বলতে পারি যে, দেশের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা কারো নেই।
শেখ হাসিনা আজ শনিবার গণভবনে দলের নেতা-কর্মী, পেশাজীবী, বিচারক ও বিদেশী কূটনীতিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত তাদের ৯৩ দিনের হরতাল-অবরোধে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। এটা সত্য যে, তারা দেশের ক্ষতি করেছে। তবে দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেয়ার মতো কোনরকম ক্ষতি তারা করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, বিএনপি-জামায়াত অবশ্যই জনগণের ক্ষতি করেছে। তারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো এমন ঘৃণ্য ও নৃশংস কর্মকান্ড আর কিছু হতে পারে না।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন অনিশ্চয়তার মাঝে ঠেলে দিয়েছে। তাদের ৩ মাসের অধিক সময়ের নির্মম সহিংসতায় অনেকে তাদের আপনজন ও প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
এবার ঈদ উদযাপনে গ্রামের বাড়ি অভিমুখী মানুষের স্বস্তির যাত্রা নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত তাদের আন্দোলনের সময় দাঙ্গা-হাঙ্গামা না করলে মানুষ আরো স্বস্তিতে বাড়ী যেতে পারতো। বিএনপি-জামায়াত তাদের ৯৩ দিনের আন্দোলনে ২ হাজার যানবাহন জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা রেলের নতুন বগি ও ইঞ্জিন পুড়িয়েছে। এমনকি লঞ্চও তাদের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রেহাই পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব বাস ও ট্রেন চলাচল করতে পারলে মানুষ আরো স্বাচ্ছন্দে বাড়ী যেতে পারতো। এরপরও মানুষ যাতে নির্ঝঞ্ঝাটে বাড়ী যেতে পারে এ লক্ষে ব্যাপক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং রেলমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সব ধরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যাতে লোকজন গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারে। লোকজন খুব সুন্দরভাবে বাড়ি যেতে পেরেছেন এবং এবার ‘মলম পার্টির’ কোন উৎপাত ছিল না কারণ আমরা দমন করেছি।
তিনি বলেন, বর্ষাকালে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশে যানবাহনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ এবার উৎসবমুখর পরিবেশে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরাপদে ঈদ উদযাপন করেছে। তারা ১/২টা পর্যন্ত কেনাকাটা করে সেহরী খেয়েছেন এবং আল্লাহর রহমতে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। আমি তাদের সকলকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের জনগণ এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ব্যাপক কেনাকাটা করেছেন। কেবল ঢাকায় নয়, সারা দেশেই সবাই কেনাকাটা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে প্রমাণিত হয় যে, জনগণের অর্থনৈতিক সামর্থ অনেক বেড়েছে। আমরা চাই যে, তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ আরো বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মহান নেতা একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে। এতে প্রমাণিত হয় যে, সদিচ্ছা থাকলে সুফল লাভ করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন চমৎকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কারণে সারা বিশ্বে একটি রোল মডেল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও দেশ সামর্থ দেখিয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে দেশবাসীর দোয়া ও আল্লাহর রহমত কামনা করেন। তিনি বলেন, আমি সকলের দেয়া চাই যাতে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে পারে।
গণভবনের গেট আজ সকাল সাড়ে ৯টায় সকলের জন্য খুলে দেয়া হয়। ঈদের নামাজ আদায় করার পরপরই সর্বস্তরের লোকজন আসতে শুরু করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেন। এ উপলক্ষে গণভবনের বিরাট প্রাঙ্গণ চমৎকারভাবে সাজানো হয়।
প্রথমে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
পরে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল, পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং কেবিনেট সদস্যদের নিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ভিক্ষুক, দুস্থ সহ সর্বস্তরের নারী-পুরুষ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
অন্যান্য বছরের মতোই, অনেক দর্শনার্থী এই সুযোগে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানাতে দেশের প্রধান নির্বাহীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এসব সমস্যার সমাধানের জন্য তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এডভোকেট সাহারা খাতুন ও সতীশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আইন মন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও ড. মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় নেতা মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি অন্যান্যের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী পৃথক অনুষ্ঠানে গণভবন প্রাঙ্গণে সুপ্রীম কোর্টের বিচারকবৃন্দ, সিনিয়র বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ ও কূটনীতিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন মুসলিম দেশ আমেরিকা ইউরোপ ও সার্ক দেশসমূহের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারগণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।-বাসস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button