শেষ হলো কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন

commonwealthলন্ডনে শুরু হওয়া ২৫তম কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন (সিএইচওজিএম) শেষ হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এই সম্মেলরে সমাপ্তি ঘটে।
এর আগে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বাকিংহাম প্যালেসে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক সহযোগিতার অন্যতম পুরনো সংস্থা কমনওয়েলথ। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো সময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শাসনে থাকা দেশগুলোই এই সংস্থার সদস্য। বছরের পর বছর ধরে আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের স্বাধীন দেশগুলো এতে যোগ দিয়েছে।
সম্মেলনে কমনওয়েলথের ৫৩টি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত যোগ দিয়েছিলেন।
এবারের কমনওয়েলথ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য  ছিল ‘অভিন্ন ভবিষ্যতের লক্ষ্যে’ (টুয়ার্ডস কমন ফিউচার)। সম্মেলনে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য উন্নতি, নিরাপত্তা, ন্যায্যতা এবং স্থায়িত্ব অর্জনে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে কমনওয়েলথ। একই সঙ্গে ৫৩ জাতির সংস্থাটির সরকারপ্রধানেরা সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও যারা এসব নিষ্ঠুরতার জন্য দায়ী, স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলনে ৫৪ দফার একটি ইশতেহার প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে বর্তমান সংকটের মূল কারণ অনুসন্ধান ও কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য নেতারা মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।
কমনওয়েলথ নাগরিকদের জন্য আরও সমৃদ্ধ, ন্যায়তর, অধিকতর নিরাপদ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারসংবলিত একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে। কমনওয়েলথ দেশগুলোতে সবার রাজনৈতিক ও সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তোলায় কমনওয়েলথের নেতারা অঙ্গীকার করেছেন।
ইশতেহারে আছে নীল সমুদ্র সনদ, কমনওয়েলথ সাইবার ঘোষণা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক ঘোষণা এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের হালনাগাদ করা আচরণবিধিসহ বিভিন্ন বিষয়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, আগামী দুই বছর সংস্থার চেয়ার হিসেবে তাঁর সরকার সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করবে। সমুদ্রের দূষণ মোকাবিলায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি দেশ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বলেও তিনি জানান। কমনওয়েলথ দেশগুলোর ছেলে-মেয়ে সবাই যাতে অন্তত ১২ বছর মানসম্মত শিক্ষা পেতে পারে, তা নিশ্চিত করারও অঙ্গীকার এসেছে এই সম্মেলনে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ভোটার নিবন্ধন, প্রার্থী মনোনয়নে স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানো, গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে ভারসাম্য রক্ষা, নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু এবং প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ, সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সততা, গোপনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা, সহিংসতা এবং ভীতি প্রদর্শনের চিত্র এবং ভোট গণনার সততা।
ইশতেহারে কমনওয়েলথ সনদের আলোকে সুশাসন, গণতান্ত্রিক নীতিমালা এবং মানবাধিকার ও আইনের শাসনের সুরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়। রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার পৃথক্‌করণ নিশ্চিত করার লাটিমার নীতিমালা অনুসরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার বিপরীতে সংরক্ষণবাদের হুমকির কথা উল্লেখ করে তা প্রতিহত করার কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়। আন্তকমনওয়েলথ বাণিজ্য বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণে সম্মেলন সম্মত হয়েছে বলেও ইশতেহারে জানানো হয়।
দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদা আলাদা আলোচনা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এসব আলোচনায় মূলত বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টি স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, কমনওয়েলথে জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই তরুণ এবং তাদের কর্মসংস্থান এবং দেশগুলোর সমৃদ্ধির জন্যই বাণিজ্য বাড়াতে হবে।
এবারই শেষবারের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশ নিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বাকিংহাম প্রাসাদের এক অনুষ্ঠানে এবার রানি এলিজাবেথ বলেছেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি, কমনওয়েলথ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও ঐক্যের প্রতি প্রতিশ্রম্নতি অব্যাহত রাখবে। আর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রিন্স চার্লস এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। যা আমার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৪৯ সালে শুরু করেছিলেন।’
প্রতি দুই বছর পর পর সদস্যভুক্ত বিভিন্ন দেশে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, তা পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button